উল্টোপিঠের গল্প

২০১৯-২০ মৌসুমে প্রথমবারের মতো ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চের শিরোপা নির্ধারণী ফাইনাল ম্যাচে খেলেছিল তৎকালীন টমাস টুখেলের দল। জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে প্যারিসের বড় ক্লাব পিএসজিকে। বরাবরের মতো তাই এবারও আরাধ্য শিরোপাটির নাগাল পেতে চেষ্টা বড় করা দলটির যাত্রা থামল শেষ ষোলতে। কাতারি অর্থে তারকা ঠাসা দলও বানিয়েছিলো তারা। সাতবারের বর্ষসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসিকে অন্তর্ভুক্ত করে আত্মবিশ্বাসের চূড়ায়ও অবস্থান করেছিলো প্যারিসিয়ানরা।

মানুষের জীবন যে কত বিচিত্র তার হিসাব নিজের কাছেও রাখা সম্ভব হয়না। গতরাতের কথা ধরলে সেখানে এগিয়ে রাখতে হবে করিম বেনজামাকে। দীর্ঘদিন ধরে রিয়াল মাদ্রিদে খেলার কারণে ঘরের ছেলে উপাধি জুটেছে। তবে বদনামও কম নিতে হয়নি। জিনেদিন জিদান কোচ থাকার সময় তাকে সুযোগ দেওয়া হলে নিন্দুকেরা ’ছেলে’ বলে হৈ চৈ শুরু করে দিতেন। বেনজামাও গোল করে এর পোক্ত জবাব দিতে পারতেন না।

এছাড়া আরেকটি বিচিত্র নামেও তাকে ডাকা হতো, সেটি ‘কদু’! অথচ নানান কথা বলা মানুষগুলোও এখন নিশ্চিত করে তার প্রেমে পড়ে গেছেন। পৃথিবীর সেরা লাইনআপকে হারিয়ে দিয়েছে একাই। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স শেষ ষোল’র খেলায় এই ফরাসী স্ট্রাইকারের হ্যাটট্রিক্সে ৩-১ গোলে পিএসজিকে হারিয়ে কোয়াটার ফাইনালে নিয়ে গেছেন রিয়াল মাদ্রিদকে। পরিশ্রম আর সততা মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে সেটা বোধকরি বেনজামাকে দিয়ে এখন উদাহরণ দেওয়ার সময় এসেছে। গতরাতে অনুষ্ঠিত হওয়া এই ম্যাচের ফলাফল সবারই জানা হয়ে গেছে। তবে আলোচিত ম্যাচের উল্টোদিকের গল্পও জানা প্রয়োজন।

বিশেষ করে পিএসজি সভাপতি নাসের আল খেলাইফি ম্যাচ হেরে রেফারির দিতে তেড়ে গিয়েছিলেন। রেফারিকে শারিরিকভাবে লাঞ্চিত করার চেষ্টাও নাকি করেছিলেন এই ধনকুবের। কারও কারও কাছে আবার লিওনেল মেসির দলের প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলেও দাবী করা হয়েছে। বিশেষ করে রিয়ালের প্রথম গোলটি নিয়েই বেশি আপত্তি ছিল অতিথি দলের।

অথচ প্রথম গোল করে দুই গোলের লিড নিয়ে নিয়েছিল প্যারিস সেন্ট জার্মেইঁ। ম্যাচটাও অনেকটা সময় ধরে তাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। অনেকেই আশা করেছিলেন, কোয়ার্টার ফাইনালের পথে এক পা বাড়িয়েই রেখেছিল ফরাসি ক্লাবটি। কিন্তু এরপরই ঘটে বড় নাটকীয়তা। ম্যাচের সবচেয়ে বড় একটা ভুল করে বসেন গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডোনারুম্মা। বল নিজের পায়ে ধরে রাখলেও বেনজেমার চাপে বল হারিয়ে ফেলেন।

এরপর সেখান থেকেই ম্যাচে প্রথমবার এগিয়ে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। যা থেকেই বদলে যায় ম্যাচের দৃশ্যপট। পরের মিনিট দশেকের মধ্যে হ্যাটট্রিক করে বসেন বেনজেমা। বল ঠেকানো যাদের কাজ সেই ডিফেন্ডাররা একের পর এক ভুল করলে শেষ আটে খেলার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়।

তবে বেনজেমার করা ওই প্রথম গোল বিল্ড আপের সময় ফাউল করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন পিএসজি কোচ মৌরিসিও পচেত্তিনো। ম্যাচ শেষে কোচ অভিযোগের সুরে বলেছেন, ‘আমার মনে হচ্ছে পিএসজির প্রতি অনেক বড় অবিচার করা হয়েছে। ডোনারুম্মাকে করা বেনজেমার আঘাতটি পরিষ্কার ফাউল ছিল। আমাদের আবেগের অবস্থা পুরোপুরি বদলে গিয়েছিল ওই গোলের পর। আমরা অনেক বেশি উন্মুক্ত হয়ে জয়েল প্রত্যাশা করেছিলাম। এটা আমাদের জন্য বড় আঘাত ছিল রেফারির ওই সিদ্বান্তটি, কারণ তার আগে আমরা ভালো খেলছিলাম।’

কোচ আরও বলেন, ’ম্যাচে কিন্তু ১৮০ মিনিট ধরে ভালো খেলেছি। রিয়ালের ১-১ হয়ে যাওয়ার হারানোর ছিল অনেককিছুই, তাই তারা সবকিছু নিজেদের মতো করে নিয়ে এসেছে।’ এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ভিএআরে না দেখায় ক্ষুব্দ আর হতাশা প্রকাশ করেন পচেত্তিনো।

এদিকে দুই গোলে এগিয়ে থেকে ৩-১ গোলে হার কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না পিএসজি সভাপতি নাসের আল খেলাইফি। মেসি-নেইমারদের সর্বোচ্চ কর্তা আবার বার্নাব্যুতে গিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বাগতিকদের দলের এক কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে বসলেন! খেলাইফির চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্ন বহুদিনের, যা পূরণ করতে তিনি গত মৌসুমে দলে ভিড়িয়েছিলেন লিওনেল মেসিকে। কিন্তু, ফরাসি লিগ ওয়ানে গত কয়েক বছর ধরে একচেটিয়া আধিপত্য দেখালেও কখনও ইউরোপ সেরা হতে পারেনি অনেক অর্থ খরচ করা দল পিএসজি।

২০১৯-২০ মৌসুমে প্রথমবারের মতো ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চের শিরোপা নির্ধারণী ফাইনাল ম্যাচে খেলেছিল তৎকালীন টমাস টুখেলের দল। জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে প্যারিসের বড় ক্লাব পিএসজিকে। বরাবরের মতো তাই এবারও আরাধ্য শিরোপাটির নাগাল পেতে চেষ্টা বড় করা দলটির যাত্রা থামল শেষ ষোলতে। কাতারি অর্থে তারকা ঠাসা দলও বানিয়েছিলো তারা। সাতবারের বর্ষসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসিকে অন্তর্ভুক্ত করে আত্মবিশ্বাসের চূড়ায়ও অবস্থান করেছিলো প্যারিসিয়ানরা।

কিন্তু, এবারও নাসের আল খেলাইফির স্বপ্নটা অধরাই থেকে গেল। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোয় প্রথম লেগে ঘরের মাঠে জয়ের পর রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে শুরুতে এগিয়ে যায় তারা। সেই লিড আর ধরে রাখতে না পেরে শেষ পর্যন্ত হারের হতাশা নিয়ে দেশের বিমান ধরতে হয়।

এদিকে ম্যাচের পর পুরো ঘটনার ভিডিওটি হাতে পেয়েছে জয়ী দল রিয়াল মাদ্রিদ। লস ব্ল্যাঙ্কোসরা খেলাইফির এমন ‘অপ্রীতিকর’ ঘটনার ভিডিওটি উয়েফার কাছে পাঠানো হয়েছে। ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ভিডিওটি আমলেও নিয়েছে বলে জানা গেছে। হয়তো বড় শাস্তি অপেক্ষা করছে পিএসজি সভাপতির ভাগ্যে। সেক্ষেত্রে ম্যাচ হারের সাথে এই হতাশাটা হয়তো নিয়ে নিতে হবে তাঁকে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...