সাকিব টেস্ট খেলবেন কী খেলবেন না সেটা নিয়ে গত কয়েক বছরে জল ঘোলা হয়েছে অনেক। তবে এখন পর্যন্ত বিসিবি কিংবা সাকিব কেউই এই সমস্যার সমাধানের পথে হাঁটতে পারেননি। বিসিবি ও সাকিবের মধ্যকার এই অঘোষিত যুদ্ধে প্রতিবার সাকিবই জয়ী হয় এমন আলোচনাও আছে। বিসিবি যেন সাকিবের সামনে অসহায়। তবে এবার বোধহয় ড্রাইভিং সিটে বসেছে বিসিবি।
সাকিব আল হাসান টেস্ট খেলতে চান নাকি চাননা সেটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তবে এই অলরাউন্ডার এবার ক্রিকেট খেলাটার থেকেই বিশ্রাম চেয়েছেন। ক্রিকেট খেলাটাই নাকি উপভোগ করতে পারছেন না তিনি। সাকিবের এই দাবিও হেসে উড়িয়ে দেয়ার মত ব্যাপার না। বায়ো বাবলের এই সময়ে ক্রিকেটটা আগের যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাও আবার এই বয়সে এসে তিন ফরম্যাটেই খেলা চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভবই।
তবে এটার একটা সহজ সমাধান হওয়া উচিৎ। সাকিব খেলবেন কি খেলবেন না সেটা জানতে হলে সিরিজের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ফলে দল দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে পারেনা। তাই সাকিবের কাছ থেকে একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। তবে সেটিই পাওয়া যাচ্ছেনা।
যেমন এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের জন্য সাকিবকে রেখেই দল ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জোর গলায় বলেছিলেন যে সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট, ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই খেলবেন। তবে এরপর সাকিব গণমাধ্যমকে বলেছেন তিনি ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম চান।
সাকিবের মত একজন ক্রিকেটার বিশ্রাম চাইলে না দেয়ার উপায় নেই। তবে সেটা এই শেষ মুহূর্তে এসে কেন? তাও আবার বোর্ড সভাপতি পর্যন্ত সাকিবের খেলার নিশ্চয়তা দিয়ে ফেলেছেন। ফলে ভাবা হচ্ছিল এবার সাকিবের বিপক্ষে কঠোর সিদ্ধান্ত নিবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তবে সেসব কিছুই হলো না। বরং সাকিবের বিশ্রাম মঞ্জুর করেছে বিসিবি। এমনকি সাকিব যা চেয়েছিলেন তারচেয়েও বেশিই দিয়েছে বিসিবি।
সাকিব এয়ারপোর্টে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন তিনি ওয়ানডেটা না খেলে টেস্টও খেলতে পারেন। আর ওয়ানডে সিরিজ শেষ হয়ে যেত ২৩ মার্চ। এরপর আবার মোহামেডানের হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগও খেলার কথা তাঁর। মোহামেডানের ঘটা করে করা জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠানেও দেখা যায় সাকিবের সরব উপস্থিতি।
তবুও ধরে নিলাম সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পুরোটা থেকেই বিশ্রাম চেয়েছেন। তাহলেও তো সেই সিরিজ শেষ হয়ে যায় ১২ এপ্রিল। কিন্তু বিসিবি সাকিবকে ছুটি দিয়েছে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। আর ধারণা করা হচ্ছে এখানেই চালটা খেলেছে বিসিবি। কেননা সত্যিই ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সাকিব ক্রিকেট না খেললে ডিপিএলও খেলা হচ্ছেনা তাঁর।
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ শুরু হচ্ছে ১৫ মার্চ। আর এই লিগ এপ্রিল মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। ফলে সাকিব যদি সত্যিই বিশ্রামে থাকেন তাহলে মোহামেডানের হয়ে আর খেলা হচ্ছেনা তাঁর। ওদিকে মোহামেডানের সাথে সাকিবের বেশ বড় অঙ্কের কন্ট্রাক্টই হয়েছে বলে জানা যায়। আর অংকটা প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি বলেও গুঞ্জন আছে।
কিন্তু বিশ্রাম নিতে গিয়ে সাকিব যদি মোহামেডানের হয়ে কোন ম্যাচই না খেলেন তাহলে সেই টাকাটা আর পাওয়া হচ্ছেনা সাকিবের। এর আগে আইপিএলে দল না পাওয়াও একটা বড় অর্থপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন। এরপর ঢাকা লিগ খেলতে না পারলে মোহামেডানের সাথে হওয়া চুক্তিটাও সংকটে পড়ে যায়।
আর সাকিবকে ক্রিকেট থেকে একরকম নির্বাসিত করার জন্যই বিসিবির এমন সিদ্ধান্ত বলে গুঞ্জন শোনা যায়। সাকিবকে শাস্তি দেয়ার এটা যেন বিসিবির এক নয়া পন্থা। তবে এই বিষয়ে ক্রিকেট অপরেশন্সের চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাকিব বিশ্রাম চেয়েছে, আমরা বিশ্রাম দিয়েছি। এর মাঝে কী ধরনের ক্রিকেট আছে আমরা সেসব বিবেচনা করিনি।’
ফলে আড়ালের গল্প কী তা অজানাই থেকে যায়। তবে এটাও ঠিক যে বিসিবি সাকিবকে বিশ্রাম দিয়েছে। তাই সাকিব চাইলেই মাঠে নেমে যেতে পারেন। জোর করে তো আর বিশ্রামে পাঠানো যায়না।