‘রিয়েল ডিল’ আবদুল্লাহ শফিক

মাত্র তিনটি প্রথম শ্রেনীর ম্যাচে খেলেই জাতীয় দলে পা দিয়েছিলেন। টেস্ট ফরম্যাটে খেলেছিলেন মোটে এক ম্যাচ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পেলেও টানা দুই ডাকে ক্যারিয়ার তখন হুমকির মুখে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের আগে দলে নেওয়ায় কিছুটা সমালোচনাও ছিলো আবদুল্লাহ শফিককে নিয়ে।

অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞ এই বোলিং অ্যাটাকের সামনে আনকোরা শফিক কতটা ভালো খেলতে পারবেন এ নিয়ে ছিলো সংশয়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে নিজের সেরাটা দিয়ে সবাইকে জানান দিলে সামর্থ্যের!

প্রথম টেস্টে রাওয়ালপিন্ডিতে ৪৪ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি! ওই টেস্টে ফ্ল্যাট উইকেট নিয়ে সমালোচনাও অবশ্য কম হয়নি। তবে মূল পরীক্ষা ছিলো করাচিতে। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ভরডুবিতে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার রানের পাহাড়ের চাপে তখন ব্যাকফুটে পাকিস্তান। প্রায় ৫০০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে এর মধ্যেই দলীয় ২১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপের মুখে পাকিস্তান। সেসময় দলের জন্য ত্রানকর্তা হিসেবে হাজির হন আব্দুল্লাহ শফিক ও বাবর আজম।

নাথান লিঁও, মিশেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সদের সামনে মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন শফিক। খেলেন ৩০৫ বল! ৩০৫ বলে শফিকের ৯৬ রানের ব্রিলিয়ান্ট ইনিংসেই ড্র’য়ের ভীত পায় পাকিস্তান। মাত্র চার রানের আক্ষেপ নিয়ে ৯৬ রানে কামিন্সের বলে আউট হয়ে ফিরলেও বাবর আজমের সাথে অনবদ্য এক জুটি পাকিস্তানকে ম্যাচে ফেরান শফিক।

অবাক করা ব্যাপার হলো এটি ছিল শফিকের মাত্র চতুর্থ টেস্ট। এমনকি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের আগে খেলেছিলেন মোটে তিন ম্যাচ। এর মধ্যে মাত্র এক টেস্ট খেলে সেখানে ১৩৩ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেন শফিক। এরপর সেন্ট্রাল পাঞ্জাবের হয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় এই ওপেনারের।

৫৮ বলে খেলেন ১০২ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। সেখান থেকেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক। এরপর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে দুই টি-টোয়েন্টিতেই ফিরেন শূন্য রানে! শফিকের ক্যারিয়ার যেনো আলোর মুখ না দেখতেই হুমকির মুখে!

তবে সেসময় প্রধান কোচ মিসবাহ উল হক আস্থা রেখেছিলেন শফিকে। শফিকের প্রতিভা ও সামর্থ্যকে আরেকবার পরখ করে দেখতেই ডাকলেন টেস্টেও। বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসেই ফিফটি করে জানান দেন নিজের সামর্থ্যের। একই সাথে মিসবাহর ভরসার প্রতিদানও দেন তিনি। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে খেললেন স্মৃতিবিজোরিত এক ইনিংস।

অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে তিনশোর বেশি বল খেলাটা নিশ্চয়ই চাট্টিখানি কথা নয়। যেখানে বাকিরা উইকেটে টিকতেই হিমসিম খাচ্ছিলেন, সেখানে লায়ন-স্টার্কদের বিরুদ্ধে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন শফিক। নাথান লায়নকে লং অনের উপর দিয়ে একটি ছক্কাও হাঁকান তিনি।

বেশ সাবলিল ব্যাটিংই করেন শফিক। কামিন্স-স্টার্কদের পেস কিংবা বাউন্স কিছুই বিচলিত করতে পারেনি শফিককে। সেঞ্চুরি থেকে মাত্র চার রান দূরে নিজের ৩০৫ তম বলটায় কেনো যেনো নড়বড়ে হয়ে গেলেন শফিক। কামিন্সের বলটা ড্রাইভ করতে গিয়ে এজ হয়ে ধরা পড়লেন স্লিপে। ৫০.৫ ওভার খেলে দলকে ড্র’য়ের ভীতটা ঠিক গড়ে দিয়েছিলেন এই তরুন ওপেনার।

এটি ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের মাত্র চতুর্থ টেস্ট। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই ডাকের পর হুমকির মুখে থাকা ক্যারিয়ারে বাউন্স ব্যাক করেছেন সাদা পোশাকে। চার টেস্টেই জানান দিয়েছেন নিজের সামর্থ্যের। চার টেস্টে শফিকের ব্যাটিং গড় ৭৬.১৬।

২০১০ সালের পর পাকিস্তানের হয়ে ওপেনিং করা কমপক্ষে চার টেস্ট খেলেছেন এমন কেউই শফিকের উপর গড়ে রান করতে পারেননি। আবিদ আলীর ৭১.৪০ ছাড়া কারও গড়ই পঞ্চাশ পার হয়নি।

কিংবদন্তি পাকিস্তানি ওপেনার সাঈদ আনোয়ারের বিদায়ের পর প্রায় পেরিয়ে গেছে দুই যুগ। তবু্ও বড় কোনো তারকা ওপেনারের দেখা মেলেনি পাকিস্তানে। সালমান বাট সম্ভাবনা দেখালেও ফিক্সিং কাণ্ডে হারিয়ে গেছেন বহু আগে। আবদুল্লাহ শফিকের ক্যারিয়ারটা মাত্র শুরু। পাড়ি দিতে হবে লম্বা পথ। ঠিক কোথায় গিয়ে তিনি থামবেন তা অজানা। তবে যে আশার আলো নতুন করে জ্বালিয়ে তিনি সাদা পোশাক রাঙাচ্ছেন তাতে হয়তো পাকিস্তান ক্রিকেট পেতে যাচ্ছে আরেক তারকা ওপেনার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link