সবার কাছে যা রুপকথা কিংবা বিলাসিতা সেটাকে অস্ট্রেলিয়া রীতিমত নিত্যদিনের ঘটনায় রুপান্তরিত করে ফেলেছে। কত কাঠখড় পুরিয়ে সবাই যখন একটিবার ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেই স্বর্ণালী শিরোপা একটি বার ছুঁয়ে দেখতে চায়, সে শিরোপাটা একেবারে নিজেরদের সম্পতিতে পরিণত করে ফেলেছে। শেষ যেবার তাঁরা শিরোপা নিয়ে উল্লাস করলো সেদিন আর আজকের দিনটাও ছিল মার্চের শেষ দিককার এক দিন।
২৯ মার্চ ২০১৫, পঞ্চম দফা ক্রিকেট বিশ্বকাপের শিরোপা অজিদের হাতে। রুপকথা যেন বনে গেল এক সাদা-মাটা গল্প। অথচ কি অসাধারণ এক মহাকাব্য হতে পারত সেদিন। যদি মাইকেল ক্লার্ক না হয়ে শিরোপাটা আকাশ পানে তুলে ধরতেন ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম। তবে রাজত্বে আর আঁচ পড়তে দেননি তাসমান পারের ছেলেরা।
অজি ক্রিকেটারদের দাপটে মহাকাব্যটাও কেমন এক সাদামাটা গল্প হয়েই রয়ে গেল। তবুও পাঁচটি বার শিরোপা তুলে নেওয়া কি আর চাট্টিখানি কথা? সেই ১৯৮৭ সালে প্রথমবার তাঁরা জিতেছিল। এরপর গুণে গুণে আরও চারবার। অথচ পুরো ক্রিকেট বিশ্বে দুই বারের বেশি কেউ জিতে দেখেনি কেমন বোধহয় তিন কিংবা তারও বেশিবার শিরোপা জিতে। সে এক ভিন্ন আলাপ। আগে মেলবোর্নে হয়ে যাওয়া দিনের স্মৃতির রোমন্থন করি।
মেলর্বন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২৯ মার্চ ২০১৫ তারিখে রেকর্ড সংখ্যক দর্শক হাজির হয়েছিল। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ ফাইনাল। তাও আবার খোদ নিজের দেশের ক্রিকেটাররা উঠেছে ফাইনালে। এ সুযোগ কি আর হেলায় ছেড়ে দেওয়া যায়। প্রায় ৯৩ হাজার দর্শক। কানায় কানায় পূর্ণ পুরো স্টেডিয়াম। দারুণ ছন্দে ছিল নিউজিল্যান্ড। তাঁদের আগ্রাসী অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম টসে জিতেই জানিয়ে দিলেন ব্যাটিং করবেন তাঁরা।
বেশ ভাল কথা। অধিনায়ক আপন ছন্দে রয়েছেন। তাঁর ব্যাটে ভর করেই ফাইনাল অবধি উঠেছিল নিউজিল্যান্ড। প্রথমবার বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখবে বলে। কিন্তু মানুষ যা ভাবে কিংবা যা চায় তা যে কখনও হয় না। সবকিছুর কলকাঠি সেই দূর আকাশে বসে একজন নাড়েন। তিন বলের মাথায় অধিনায়ক ম্যাককালাম সাজঘরে। মাথায় হাত! ফর্মে থাকা ব্যাটারটাই সবার আগে চলে গেলেন বাইশ গজ ছেড়ে।
তবে সবচেয়ে বড় বিপদটা নেমে এলো ৩৯ রানে নেই ব্ল্যাকক্যাপসদের তিন উইকেট। সেই বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেন রস টেলর ও গ্রান্ট এলিয়ট। দুইজনে মিলে যোগ করলেন ১১১ রান। কিন্তু ৩৬তম ওভারে আবার অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের আক্রমণ। জেমস ফকনারের এক ওভারে দুই উইকেট নেই। প্যাভিলনের পথে হেটেছেন রস টেলরও। এরপরের ব্যাটারদের মধ্যে চারজন ফিরে গেছেন শূন্য রানে।
১৮৩ রানে থেমে যায় নিউজিল্যান্ডে ইনিংস। ম্যাচ ওখানেই হাতছাড়া। অস্ট্রেলিয়ার একপেশিয়া জয় তখন অদূরেই। অপেক্ষা শুধুই ম্যাচ শেষ হওয়ার। তবে সেদিন আরও এক অপেক্ষা ছিল। শেষবারের মতো ওয়ানডে ফরম্যাটে মাইকেল ক্লার্ককে ব্যাটিং করতে দেখার অপেক্ষা। সে অপেক্ষা দীর্ঘ হয় ১৩ তম ওভার অবধি। ডেভিড ওয়ার্নার ম্যাট হেনরির বলে আউট হয়ে যাওয়ার পর এলো সেই শেষ দেখার মুহূর্ত।
ক্লার্ক যখন মাঠে নেমেছিলেন তখন স্টিভ স্মিথ ক্রিজে ছিলেন ১৪ রান করে। তবে বাইশ গজে নেমেই একেবারে সকল কর্তৃত্ব নিজের করে নেন ক্লার্ক। একা হাতেই রান তোলার দায়িত্ব নিয়ে নেন। তিনি আউট হয়ে যান ৭২ বলে ৭৪ রানের এক দূর্দান্ত ইনিংস খেলে। তখনও ৪৭ রানে ক্রিজে অপেক্ষমান স্মিথ। সবাই হয়ত প্রত্যাশা করেছিলেন ক্লার্কের ব্যাট ধরেই হয়ত জয় হবে সুনিশ্চিত। তবে তা আর হলো না।
স্মিথ হেনরির বলে মেরে দিলেন চার। আর তাতেই সব রুপকথা আর মহাকাব্য অতিসাধারণ, নিত্যদিনের গল্প হয়ে গেল। ফাইনালে ওঠা মানেই যেন শিরোপা অস্ট্রেলিয়ার। শিরোপা থেকে তাঁদের দূরে রাখা প্রায় অসম্ভব। সময়ের পরিক্রমায় আগামী বছর আবার মাঠে গড়াবে আরও একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ১২টি আসরের অর্ধেক শিরোপা দিয়ে কি সজ্জিত হবে অস্ট্রেলিয়ায়র অর্জনের ক্যাবিনেট? সময়ের কাছে এই প্রশ্ন তোলা থাক।