উপেক্ষার আগুনে পোড়া তরবারি

অবহেলা, উপেক্ষা এসব কিছুর জবাব দিতে অপেক্ষা করতে হয়। সঠিক সময়, সঠিক মঞ্চের। জবাব দেওয়ার একটিমাত্র সুযোগ পাওয়া গেলে সেই সুযোগ কোনভাবেই হাতছাড়া করার উপায় নেই। নিজের সামর্থ্য প্রমাণের সুযোগ তো আর বারবার মেলে না। সেই জবাবটাই দিলেন, নিজের সেই সামর্থ্যের প্রমাণটাই রাখলেন দিল্লীর ২২ বছর বয়সী ক্রিকেটার আয়ুশ বাদোনি।

নিজের অভিষেক ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রথম ম্যাচেই দূর্দান্ত এক অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন এই তরুণ ক্রিকেটার। ৪১ বলে ৫৪ রানের দারুণ শৈল্পিক এক ইনিংস দিয়েই নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন, সকল উপেক্ষার জবাব দিয়েছেন। আইপিএলের নতুন দল লখনৌ সুপার জায়ান্টের হয়ে নিজের এবং ফ্রাঞ্চাইজির প্রথম ম্যাচেই ভেলকি দেখিয়ে দিয়েছেন আয়ুশ।

আয়ুশ ভারতের নামকরা ক্রিকেট কোচ তারক সিনহার নিজের হাতে গড়ে তোলা ছাত্র। প্রয়াত এই কোচ ভারত ক্রিকেটে দারুণ সব খেলোয়াড় উপহার দিয়েছেন। ভারতের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে তিনি নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টাটা করেছেন। অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কান যুব দলের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে ১৮৫ রানের এক বিশাল ইনিংস খেলেন।

এছাড়াও তিনি যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে ২৮ বলে ৫২ রানের দ্রুতগতির এক ইনিংসও খেলেন। তবুও তিনি ছিলেন অপহেলিত, উপেক্ষিত। দিল্লী রঞ্জি দলে কোন ক্রমেই যেন জায়গা হচ্ছিল না তাঁর। এমনকি বিজয় হাজারে ট্রফির জন্যেও তাঁকে দলে বিবেচনা করেনি দিল্লী। তাছাড়া গত তিন বছর ধরেই আইপিএলের নিলামেও উপেক্ষিত তিনি।

তবে তিনি বসে থাকেননি। নিজের খেলার মান বাড়ানোর সবরকম চেষ্টা তিনি করে গেছেন। তাছাড়া নিজের অস্ত্রাগারে শটের সংখ্যা বাড়ানোর প্রচেষ্টা তিনি চালিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, বিগত তিন বছরে আমাকে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়েছে। আমি দিল্লীর হয়ে খেলার সুযোগ পাইনি। তাই আমার নিজের খেলার মান বাড়াতে কাজ করি। অনেক নতুন শটও শেখার চেষ্টা করি শিখিও বেশ কিছু। সেসবকিছু আমাকে টি-টোয়েন্টিতে ভাল ব্যাট করতে সহয়তা করেছে।’

এবারে আইপিএলের নিলাম থেকে তাঁকে কিনে নেয় লখনৌ সুপার জায়ান্ট। এর আগে সৈয়দ মুশতাক ট্রফিতে মাত্র এক ম্যাচে ব্যাটিং করার সুযোগ পান তিনি। সেখানে কেবল আটটি রান জড়ো করতে পারেন। তিনি এবারও প্রত্যাশা করেননি যে তিনি আইপিএলে দল পাবেন। তিনি বলেন, ‘আমার নাম তিন বছর ধরেই আইপিএলে নিলামে উঠেছে কিন্তু আমি কখনো দল পাইনি। কেন পাইনি আমি এটা জানিনা।’

তবুও খানিক আশা নিয়ে তিনি অপেক্ষায় ছিলেন এবারে আইপিএল নিলামের। এ নিয়ে আয়ুশ বলেন, ‘এবার আমার কেন জানি হৃদকম্পন বেড়ে যায়, যখন আমার নাম ওঠে নিলামে। তবুও আমিও নিশ্চিত ছিলাম না যে আমি দল পাবো। আমি দুই-তিনটা দলে ট্রায়াল দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা আমি গত তিন বছর ধরেই করছি।’

সব জল্পনা-কল্পনা পেরিয়ে অবশেষে তিনি দল পেয়ে যান এবারের আইপিএলে। আর আইপিএলে দল পেয়েই প্রস্তুতি ম্যাচে দুইটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ফেলেন আয়ুশ। তাঁর পারফর্মেন্স নজর কাড়ে গৌতম গম্ভীরসহ, কোচ বিজয় ধাহিয়া ও অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের। তাই তাঁকে অভিজ্ঞ ক্রুনাল পান্ডিয়ার আগে ব্যাট করতে পাঠানো হয়। আর সেটা প্রতিদান তিনি দেন দূর্দান্তভাবে।

আয়ুশ তাঁর এই ব্রেক থ্রুয়ের কৃতিত্ব পুরোটাই দিতে চান গৌতম গম্ভীরকে। তাছাড়া তাঁর এমন দুরন্ত সূচনার জন্যে হাত ছিল গম্ভীরের। আয়ুশ বলেন, ‘গৌতম ভাইয়া আমাকে অনেক সহয়তা করেছেন। তাছাড়া ম্যাচের আগে তিনি আমাকে বলে দিয়েছেন আমার স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে এবং বলকে খেলতে বোলারকে নয়।’

আয়ুশ তাই করেছেন। নামকরা সব বোলারদের বিপক্ষে মাঠের চারিদিকে মেরে খেলেছেন। তিনি আসলে খারাপ বলগুলোকে মেরেছেন। বোলার বুঝে ব্যাট করেননি।

আয়ুশ বেশ উচ্ছ্বসিত এবং উৎফুল্ল তাঁর নিজের এমন পারফর্মেন্সের জন্যে। তিনি মুখিয়ে আছেন তাঁর দল লখনৌয়ের জয়ে অবদান রাখতে। তরুণ এই ক্রিকেটার লখনৌ ফ্রাঞ্চাইজিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমি লখনৌ ফ্রাঞ্চাইজির প্রতি কৃতজ্ঞ তাঁরা আমাকে দলে নেওয়ায়। এখন আমার কাজ দলের জয়ে অবদান রাখা। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করব।’

নিশ্চয়ই আয়ুশ তাঁর সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলবেন এবারের আইপিএলে। লোহা পুড়তে পুড়তে যেমন এক ধারালো তরবারিতে পরিণত হয় ঠিক তেমনি এখন আয়ুশের পালা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link