আঁধার ছাপিয়ে আলোর মিছিলে

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একমাত্র পাকিস্তানি ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ও ওয়ানডেতে টানা দুই সেঞ্চুরি করেছেন ইমাম। এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারে ৪৯ ম্যাচে ৯ সেঞ্চুরি আর ১১ ফিফটিতে ৫৪ গড়ে করেছেন ২৩২১ রান। পাকিস্তানের হয়ে বর্তমান সময়ে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন তিনি। স্বজনপ্রীতির ছায়া থেকে বেরিয়ে তিনি এখন পাকিস্তান ক্রিকেটকে এগিয়ে নিচ্ছেন সামনের দিকে!

স্বজনপ্রীতির বেড়াজাল! সমালোচকদের সমালোচনা কিংবা নিন্দুকদের নিন্দা – ইমাম উল হকের ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল একেবারেই অন্যরকম। চাচা ইনজামাম উল হকের হাত ধরেই নাকি জাতীয় এসেছেন। স্রেফ স্বজনপ্রীতির কারণেই ইমাম কিনা খেলছেন পাকিস্তানের জার্সি গায়ে।

এসবের জবাব দিতে হলে প্রয়োজন ব্যাট হাতে সেরা কিছু ইনিংস। কিন্তু অভিষেকের আগ থেকেই সমালোচনার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন ইমাম। স্কোয়াডে ডাক পেতেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। সামর্থ্য, সম্ভাবনা সব ছাপিয়ে স্বজনপ্রীতির তত্ত্বে ইমামের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে।

চোখের পানি ফেলতে ফেলতেই হয়তো পরিকল্পনার ছক কষেছিলেন। নিন্দুকদের জন্য জবাবটা ব্যাট হাতেই দিতে হবে। অপেক্ষা শুধু সুযোগের। প্রথমবার দলে যখন ডাক পেলেন পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচক তখন ইমামের চাচা ইনজামাম উল হক।

ব্যাস, সমর্থকদের একাংশ ইমামকে স্বজনপ্রীতি তত্ত্বের বেড়াজালে ফেলে মেতে উঠলো সমালোচনায়। কিন্তু সমালোচনা, নিন্দা মেনে নিয়ে ধৈর্য্য ধারণ করেন ইমাম। ব্যাট হাতে চেয়েছিলেন জবাবটা দিতে। দিয়েছেনও তিনি! ওয়ানডে অভিষেকেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছিলেন সেঞ্চুরি!

সেই ইমাম এখন ওয়ানডেতে পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ভরসা। ওপেনিংয়ে এখন নিয়মিত এক মুখ। স্বজনপ্রীতি নিয়ে সমালোচনাকারীদের মুখে সপাটে বাড়ি মেরেছেন ব্যাট হাতেই। ব্যাট হাতে ইমাম এখন উড়ন্ত ফর্মে। সবশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দুটিতেই করেছেন সেঞ্চুরি। দুই সেঞ্চুরি আর এক ফিফটিতে দুর্দান্ত এক সিরিজ পার করেছেন এই পাকিস্তানি ওপেনার।

অজিদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ভরাডুবির মাঝেও অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করেন ইমাম। ৯৬ বলে ৩ ছক্কা ও ৬ চারে খেলেন ১০৩ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। পরের ম্যাচেই সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৯৭ বলে ৩ ছক্কা ও ৬ চারে ১০৬ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেন ইমাম।

এই ইনিংসের মধ্যে দিয়ে ওয়ানডে ইতিহাসে দ্রুততম ৯টি সেঞ্চুরির মালিক বনে যান ইমাম! ৪৮ ইনিংসে এই রেকর্ড গড়েন পাকিস্তানি ওপেনার। ২৬ বছর বয়সী এই ওপেনার ৪৮ ইনিংসে ৯ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। এই রেকর্ডটি এর আগে দখলে ছিল সাবেক প্রোটিয়া তারকা হাশিম আমলার। ৫২ ইনিংসে নবম ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন সাবেক এই প্রোটিয়া তারকা।

একই সাথে পাকিস্তানের হয়ে ৪৮ ওয়ানডে খেলার পথে সর্বোচ্চ রানের মালিক এখন ইমাম। ৪৮ ওয়ানডেতে ২২০০ এর বেশি রানের মালিক তিনি। এর আগে এই রেকর্ড ছিল সাবেক পাকিস্তানি তারকা জহির আব্বাসের দখলে। ৪৮ ইনিংসে করেছিলেন ২১৬৬ রান।

সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে অবশ্য অল্পের জন্য দেখা পাননি সেঞ্চুরির। ১০০ বলে ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংসে মাত্র ১১ রানের জন্য টানা তৃতীয় সেঞ্চুরির দেখা পাননি ইমাম। তবে ব্যাট হাতে অজিদের উপর পুরো সিরিজের আধিপত্য বিস্তার করে খেলেন এই পাকিস্তানি ওপেনার। টেস্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর ওয়ানডেতে ৩ ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি আর এক ফিফটিতে ১৪৯ গড়ে ১০২ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২৯৮ রান!

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একমাত্র পাকিস্তানি ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ও ওয়ানডেতে টানা দুই সেঞ্চুরি করেছেন ইমাম। এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারে ৪৯ ম্যাচে ৯ সেঞ্চুরি আর ১১ ফিফটিতে ৫৪ গড়ে করেছেন ২৩২১ রান। পাকিস্তানের হয়ে বর্তমান সময়ে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন তিনি। স্বজনপ্রীতির ছায়া থেকে বেরিয়ে তিনি এখন পাকিস্তান ক্রিকেটকে এগিয়ে নিচ্ছেন সামনের দিকে!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...