গতির মূর্ছনায় হারিয়ে যাওয়ার একটা আলাদা মজা রয়েছে। ক্রিকেটে মাঠের এক একটি গতিশীল বল যেন রোমাঞ্চের সর্বোচ্চ খোরাক মেটায়। ১৬১ কিলো/ঘন্টা গতিতে বল করে এখন পর্যন্ত ক্রিকেটে সবচেয়ে গতিশীল বোলারের তকমাটা নিজের করে রখেছেন ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’ খ্যাত পাকিস্তানের ‘স্পিডস্টার’ শোয়েব আখতার। একটা লম্বা সময় ধরে এই রেকর্ড নিজের দখলেই রেখেছেন তিনি।
তবে এবার হয়ত তাঁর সেই রেকর্ডে ভাগ বসতে চলেছে। শোয়েব আখতারের সেই রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলতে কাঠখড় নিশ্চয়ই পোড়াতে হবে ভারতের তরুণ বোলার উমরান মালিককে। তবে তাঁর মধ্যে সে সম্ভাবনা রয়েছে। একজন নেট বোলার থেকে তিনি বাইশ গজে ঝড় তুলছেন আর তাঁকে নিয়ে ঝড় উঠছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাঁর গতির বন্দনায় মুখরিত ভারতের ক্রিকেটাঙ্গন।
গেল বছর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) দল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের নেট বোলার ছিলেন তিনি। হঠাৎই ভাগ্য দেবতা খুব প্রসন্ন হয়ে গেল তাঁর উপর। সানরাইজার্সের নিয়মিত বোলার থাঙ্গারাসু নটরাজনের অবর্তমানে দলে সুযোগ পান উমরান। পেয়েই তিনি নজর কেড়ে নিতে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ করেননি তিনি। খেলেছেন মোটে তিন ম্যাচ, তাতেই লোকমুখে তাঁকে নিয়ে আলোচনার যেন শেষ নেই।
শেষ হবে কি করে? তিনি যে গতবারই বল করেছিলেন ১৫২.৯৪ কিলো/ঘন্টা গতিতে বল করেছেন। যা কিনা সেবার আইপিএলের সর্বোচ্চ গতির বল। আপনি ভাবুন তো! ১৫২ কিলো/ঘন্টা গতিতে একজন মাত্র ২১ বছর বয়সী ছেলে বল ছুড়ছে এ কি আর খুব মামুলি ঘটনা? নিশ্চয়ই নয়। তাইতো আলোচনা হওয়াটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। গত মৌসুমের মত এবারও তিনি আবার নিজেকে বানিয়ে ফেলেছেন আলোচনার বিষয়। তিনি এবার লখনৌ সুপার জায়ান্টাসের বিপক্ষে ১৫২.৪০ কিলো/ঘন্টা গতিতে বল করেছেন।
শুধু তাই নয়। অনায়াসে তিনি ১৫০ কিলো/ঘন্টা গতিতে বল করতে পারেন। তরুণ একজন বোলার তিনি। এখনও নিয়মিত তিনি এই পরিমাণ গতি উৎপন্ন করতে পারেন, সেটাই তো বিশাল বড় এক বিস্ময়। বিস্ময় জাগানিয়া তরুণকে নিয়ে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর বলেছেন, ‘এখন যেমন আমরা জাসপ্রিত বুমরাহকে নিয়ে আলোচনা করি, আগামী কয়েক বছরে সবাই উমরান মালিককে নিয়ে আলোচনা করবে। সে সত্যিকার অর্থেই একজন বিশেষ প্রতিভাবান ক্রিকেটার।’
ভারতের জম্মু-কাশ্মির অঞ্চল থেকে উঠে এসেছেন উমরান মালিক। খুব যে ছোট বয়স থেকে তিনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তেমন নয়। ২০১৭ সাল থেকে তাঁর ক্রিকেট বলের সাথে সখ্যতা শুরু হয়। মাত্র বছর পাঁচেক আগের কথা। তবে ছোট বেলা থেকেই বোলিংয়ের তালিমটা পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাছাড়া ইরফান পাঠানের সান্নিধ্যও তিনি পেয়েছেন এবং তাঁর কাছ থেকেও শিখেছেন তিনি। জম্মু ও কাশ্মিরের মেন্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন ইরফান।
তবে গতিবান হলেও একটা সমস্যা রয়ে গেছে উমরানের মাঝে। তিনি বেশ খরুচে বোলার। লাইন-লেন্থেরও হেরফের ঘটে তাঁর প্রায়শই। সে কারণে হয়ত অত্যাধিক রান খরচ করে ফেলেন তিনি। তবে তাঁর হাতে যে নিজেকে ঠিকঠাক একজন বিশ্বমানের বোলার হিসেবে গড়ে তোলার সময় নেই তাও নয়। কেবল ২২ বছর বয়স।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ কিংবা দাপট দেখানোর বয়স একেবারেই শেষ হয়ে যায়নি। সুতরাং দারুণ সম্ভাবনা ভাই থাকা এই খেলোয়াড়কে নিশ্চয়ই ভারত দলের নির্বাচকরা বাড়তি নজরে রাখবে। এখন দেখবার পালা এই গতির উপর ভর করে কতদূর উড়তে পারেন উমরান মালিক।