২০১৮ সালে ছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা পারফরমারদের একজন। এরপর ২০১৯-২০ আসরে ছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি! গেল দুই আসরেও উইকেটশিকারির তালিকায় সেরাদের মাঝেই ছিলেন তিনি। ব্যাট হাতে স্ট্রাইকরেটও নজরকাঁড়া। অস্ট্রেলিয়ার ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বিগব্যাশের (বিবিএল) সেরা পারফরমারদের একজন অজি অলরাউন্ডার ড্যানিয়েল স্যামস। তবে স্যামসের জন্য ‘সেরা’ শব্দটা ওই বিগব্যাশ পর্যন্তই। বিবিএলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই পারফরমার জাতীয় দল কিংবা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মঞ্চে চরম ব্যর্থ।
দুর্দান্ত গতি থাকলেও লাইন-লেন্থ ঠিক না থাকায় রান খরুচে বোলার হিসেবেই তিনি বেশ পরিচিত। আবার রান খরচা করলেও বিবিএলের মঞ্চে নিয়মিতই উইকেট শিকার করেন। লোয়ার অর্ডারে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতেও বেশ দক্ষ তিনি। গতি আর বিগ হিটিং সামর্থ্য দিয়েই মূলত ক্রিকেট পাড়ায় একের পর এক সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসা স্যামসের। কিন্তু প্রতি ম্যাচেই অতিরিক্ত রান খরচায় স্যামস এখন দলের জন্য একজন রান মেশিন!
বিগ ব্যাশে সিডনি থান্ডারের হয়ে খেলা স্যামস জাতীয় দলের জার্সি গায়ে নিজেকে এখন অবধি প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। একই চিত্র আইপিএলেও। বল হাতে এখন পর্যন্ত আইপিএল ক্যারিয়ারটা রান মেশিনের চেয়ে কম নয় স্যামসের জন্য!
আইপিএলের এবারের আসরে সবশেষ কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের এই পেসার নাম তুলেছেন এক লজ্জাজনক রেকর্ডে। আইপিএল ইতিহাসে এক ওভারে সবচেয়ে বেশি রান খরুচে বোলারের তালিকায় এখন দুইয়ে অবস্থান করছেন স্যামস। ২০১১ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে প্রশান্ত পরমেশ্বরন এক ওভারে দিয়েছিলেন ৩৭ রান। এরপর গেল আসরে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে এক ওভারে ৩৭ রান দেন হার্শাল প্যাটেল। এই দু’জন আছেন এই তালিকায় যৌথভাবে শীর্ষে। নিজেদের সবশেষ ম্যাচে কলকাতার বিপক্ষে এক ওভারে ৩৫ রান দিয়ে এই লজ্জাজনক রেকর্ডে নাম তুলেন স্যামস।
শুধু এই ম্যাচেই নয়। এখন পর্যন্ত এবারের আসরের তিন ম্যাচেই তিনি ছিলেন বেশ খরুচে। তিন ম্যাচে প্রায় ১৩ ইকোনমিতে ১৩৯ রানের বিনিময়ে শিকার করেছেন মাত্র এক উইকেট! বোলিং গড় ১৩৯!
আইপিএলে গেল দুই আসরে পাঁচ ম্যাচ খেললেও বল হাতে ৮ ইকোনমিতে নিয়েছেন মাত্র এক উইকেট! এমন হতশ্রী পরিসংখ্যানের পরেও এবারের আসরের মেগা নিলামে ২.৬০ কোটি রুপিতে স্যামসকে দলে ভেড়ায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। স্যামসের উপর বিনিয়োগকৃত পুরো অর্থই যেন জলে গেল মুম্বাইর! একদিকে স্যামসের হতশ্রী বোলিং, আরেকদিকে দলের ভরাডুবি। এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচের তিনটিতে হেরে পয়েন্টস টেবিলের নয়ে অবস্থান মুম্বাইর!
জাতীয় দলের জার্সি গায়ে স্যামস খেলেছেন সাত টি-টোয়েন্টি। এই সাত ম্যাচে ১০.৮ ইকোনমিতে শিকার করেছেন মোটে ৪ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়েও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন এই পেসার। বিগ ব্যাশে ২০১৭ সালে অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত পাঁচ আসরে খেলেছেন ৬২ ম্যাচ। এই ৬২ ম্যাচে ৮.২৯ ইকোনমিতে ২১ গড়ে শিকার করেছেন ৮২ উইকেট। উইকেট শিকারের বিবেচনায় বিগ ব্যাশের পরিসংখ্যানটা বেশ ভালোই বলা চলে। ব্যাট হাতেও সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেটধারীদের একজন তিনি!
২০১৯-২০ মৌসুমে ১৭ ম্যাচে ১৫ গড়ে ৭.৮৩ ইকোনমিতে ৩০ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হন স্যামস। সবশেষ ২০২১ আসরেও টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় সেরা চারে ছিলেন তিনি। সিডনি থান্ডারের হয়ে শিকার করেন ১৯ উইকেট। ব্যাট হাতেও ছিলেন সেরা স্ট্রাইকরেটধারীদের (১৬১.৮৬) একজন।
২০১৭ সালে ২৫ বছর বয়সে কান্টারবুরির হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক! অভিষেক ইনিংসেই শিকার করেন তিন উইকেট। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর পাওয়ার হিটিং সামর্থ্য আর দুর্দান্ত গতির কারণে দ্রুতই নজরকাঁড়েন সবার। ওই বছরই বিগব্যাশে সিডনি সিক্সার্সের পেসার হেনরি থর্নটনের ইনজুরিতে ভাগ্য খুলে যায় স্যামসের। সিক্সার্সের হয়ে সুযোগ পেয়ে যান বিবিএলে। অভিষেকেই ১৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বিবিএল অভিষেকে সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ডটা নিজের নামে করেন স্যামস। অভিষেকেই জানান দিয়েছিলেন সামর্থ্যের।
প্রথম দুই মৌসুমে ১৭ গড়ে শিকার করেন ৪৫ উইকেট! সিডনি থান্ডারের হয়ে নিজের দ্বিতীয় আসরে শিকার করেন ৩০ উইকেট! বিবিএল ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারের রেকর্ড গড়েন এই পেসার। সিডনি থান্ডারের হয়ে সেরা পারফরমার হওয়ায় মাইকেল হাসি মেডেলও জিতেন তিনি!
সেখান থেকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে ডাক পান স্যামস। যদিও ওই সফরে এক ম্যাচেও সুযোগ পাননি এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। এরপর ২০২০ সালে সিডনিতে ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক। সেখান থেকেই সুযোগ পান আইপিএলে।
পেশাদার ক্রিকেটে এসেছেন অনেকটা পড়ে। ২৫ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকের পর জাতীয় দলের সাজানো গালিচায় পা দিতে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি স্যামসকে। বিগ ব্যাশের পারফরম্যান্স দিয়ে জাতীয় দল থেকে জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট আইপিএলের মঞ্চেও!
যে সম্ভাবনা আর সামর্থ্য দেখিয়ে জাতীয় দলে এসেছিলেন এখন পর্যন্ত তাঁর ছিটেফোঁটাও ছিল না স্যামসের পারফরম্যান্সে। বিগ ব্যাশে ব্যাটে-বলে সবচেয়ে সফলদের একজন হলেও এই টুর্নামেন্টের বাইরে নিজেকে কখনোই প্রমাণ করতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ব্যর্থতার পর আইপিএলের মঞ্চেও তিনি সাদামাটা। সিডনি থান্ডারের জার্সি গায়ে নিঃসন্দেহে তিনি বিগ ব্যাশের অন্যতম সেরা। অথচ, বিগব্যাশের বাইরে তিনি স্রেফ ওভাররেটেড একজন!