একজন স্পিডস্টার, আরেকজন ক্রিকেটের ঈশ্বর। শোয়েব আখতার ১৬১ কিলো/ঘন্টায় বল করে সর্বোচ্চ গতির বল করার রেকর্ড নিজের দখলে রেখেছেন। অন্যদিকে, শচীন টেন্ডুলকার সর্বোচ্চ সংখ্যক আন্তর্জাতিক শতক হাঁকিয়ে অনন্য এক রেকর্ডের মালিক। ক্রিকেট ময়দানে এই দুইজন বহুবার মুখোমুখি হয়েছেন একে অপরের। বেশ কিছু রোমাঞ্চকর মুহূর্তের জন্ম দিয়েছেন এই দুই কিংবদন্তি।
তবে এক দফা শচীনের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলেন শোয়েব আখতার। সে কি এক কাণ্ড! শচীন, শোয়েব দুইজনের নামের বাংলা অথবা ইংরেজি দু’য়ের আদ্যক্ষর এক। নতুন কোন তথ্য নয় নিশ্চয়ই। তবে আরেকটি তথ্য দেই। এই দুইজন বহুবার মুখোমুখি হয়েছেন একে অপরের। এর মধ্য়ে নয় দফা শচীনকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়েছিলেন শোয়েব।
তবে শেষ যেবার তিনি আউট করেছিলেন সেবার রীতিমত রণক্ষেত্র হয়ে গিয়েছিল পুরো স্টেডিয়াম। শচীনকে তিনবার টেস্টে, পাঁচবার ওয়ানডেতে আউট করেছিলেন শোয়েব। শেষবার আউট করেছিলেন এক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। আন্তর্জাতিক নয়, ফ্রাঞ্চাইজি। বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় ফ্রাঞ্চাইজি লিগ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের প্রথম আসরে শোয়েব আর শচীন মুখোমুখি হয়েছিলেন শেষবারের জন্য।
আর শেষ হাসিটাও হেসেছিলেন শোয়েব আখতার। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে সেবারের আসর খেলেছিলেন শোয়েব আখতার। অন্যদিকে, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। সেবার পুরো স্টেডিয়াম ছিল একেবারেই কানায় কানায় পূর্ণ। ক্রিকেটের সুন্দরতম দিনের এক উদাহরণ হতে পারত।
কিন্তু ক্রিকেট বিধাতা হয়ত অন্যকিছু ভেবে রেখেছিলেন। তাই হল, রণক্ষেত্র হয়ে যাবার উপক্রম ছিল ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। একে তো পাকিস্তানের একজন ক্রিকেটার খেলছেন ভারতের মানুষদের সবচেয়ে প্রিয় খেলোয়াড় শচীনের বিপক্ষে। ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্নায়ুচাপ কখনওই ক্রীড়াঙ্গন থেকে আলাদা হয়নি। সেই স্নায়ুচাপটা যেন আরও প্রকট হয়েছিল সেদিন।
সেদিনটার রোশনাই বাড়াতে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের উপস্থিত ছিলেন ‘বলিউড কিং’ শাহরুখ খান। তবে সেদিন সব ঝড় যেন বয়ে যায় শোয়েব আখতারের উপর দিয়ে। ২০০৮ সালের সে আসরের ম্যাচটি নিজের স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে পারেননি শোয়েব আখতার। এতটাই ভয়াবহ এক পরিস্থিতিতে পরিণত হয়েছিল পুরো স্টেডিয়াম! ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম ওভারেই শচীন টেন্ডুলকারের উইকেট তুলে নেন শোয়েব।
প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে মাত্র ৬৭ রানে অলআউট হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। কিন্তু কলকাতার সাজঘরে তবুও লড়াই করবার রসদ জুগিয়েছিল আরেক কিংবদন্তি সৌরভ গাঙ্গুলি। যদিও খুব একটা লাভ হয়নি। আট উইকেটে বিশাল জয় নিয়েই সেদিন মাঠ ছেড়েছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। তবে শচীনের সে উইকেট নেওয়ার পর শোয়েবের জন্যে ওয়াংখেড়ে হয়ে উঠেছিল নরক।
শোয়েবকে কোথায় ফিল্ডিং দেওয়া যায় এ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন কলকাতার অধিনায়ক সৌরভ। তাঁকে বাউন্ডারি লাইন থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে মিড-উইকেট অঞ্চলে ফিল্ডিং করতে পাঠান সৌরভ। রীতিমত সেদিন ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন শোয়েব আখতার। তবে সমর্থকদের সে উত্তাপ ছড়িয়ে যায়নি খেলোয়াড়দের মাঝে। তাঁদের সম্পর্কে খুব একটা ভাটা পড়েনি।
তবে শোয়েব কখনোই সেদিনের জন্যে মুম্বাইয়ের দর্শক-সমর্থকদের উপর দোষারোপ করেননি। কেননা ওয়াংখেড়ের সেদিনের সমর্থকেরা তাঁর দেশকে নিয়ে কোন কটু উক্তি করেনি। সে সাথে কোন বর্ণবাদমূলক মন্তব্যও করেনি। সেদিনের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম যা করেছে সব করেছে ক্রিকেটকে ভালবেসে, ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা থেকে এবং প্রিয় খেলোয়াড়ের প্রতি ভালবাসা থেকে।