একটা লোক, যে শুধু ফুটবলই খেলেছে তাঁর অর্ধজীবন ধরে, তার থেকে ঠিক কী কী এক্সপেক্ট করা উচিত? ধরা যাক, লোকটা যদি পিয়ানো বাজাত, বা একেবারে এসব বাদ দিয়ে নিদেনপক্ষে একটা সামান্য মুদির দোকান চালাত, তাহলে তার থেকে কী কী এক্সপেক্টশন থাকত?
আরও পড়ুন
- অঁরি নাকি বেনজেমা!
- একটি অবিশ্বাস্য অনুভূতি ও তার সুন্দরতম ঝংকার!
- শরনার্থী শিবিরের সেই লাজুক বালক
- সেই দুর্ভেদ্য লন্ডনেই বিজয়ী নিশান
- করিম ‘ভরসাময়’ বেনজেমা
এই লুকা মদ্রিচ নামের ক্রোয়াট লোকটা যেন দিনকে দিন ঐ ধাঁচের হয়ে পড়ছে। সে তাকে যে রোলেই ফেলো, ওটাতেই মানিয়ে যাবে আরামসে। গল্পটা অনেকভাবে বলা যায়। অনেক স্তর থাকবে তাতে। চড়াই-উৎরাই, জাগ্রেবে ফ্ল্যাট খোঁজা থাকবে, থাকবে যুদ্ধের সময় বাড়ি ছেড়ে পালানো। গল্প বলার সময় যত এগোবে, আরও নতুন ঘটনাক্রম গল্পে যোগ হবে। কিছুদূর শুনতে শুনতে শ্রোতার কানে হঠাৎ প্রবেশ করবে এই ধরণের কথা – ‘The worst signing of this season for Real Madrid!’
এইভাবে উপন্যাসের পাতার পর পাতা চলতে থাকবে। গড়পড়তা উপন্যাস-টাস নয়, খাস ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলারের জীবনকাহিনী। ব্যালঁ ডি অর পাওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে জবরদস্ত তর্কবিতর্ক জুড়বে একদল ডোডোপাখি। যারা পরের মূহূর্তেই হারিয়ে যাবে আউটস্টেপে গোল দেখে। লুকা মদ্রিচ কি সব মনে রাখেন?
মনে তো রাখেন নিশ্চয়ই। না হলে সাড়ে ছত্রিশ বছর বয়সে ঐভাবে তিনটে ডিফেন্ডারকে ছিটকে সোলো রানটা ক্রিয়েট করা তো মুখের কথা নয়। লোকটা আদতে মিডফিল্ডার, হ্যাঁ, সে এক সময় কাকাও দৌড়তো। কিন্তু তা বলে সেটা সাড়ে ছত্রিশ বছর বয়সে নয়। অত স্প্রিন্ট টানার ক্ষমতা এল কোথা থেকে সেটা আজকের পর খুব জানতে ইচ্ছে করে মদ্রিচের কাছ থেকে। এই স্প্রিন্টের উৎসস্থল কোথায়? রাগ, কষ্ট, জেদ, নাছোড়বান্দা মনোভাব – কোনটা?
লুকা মদ্রিচ যেদিন রিটায়ার করবেন, সেদিন যেন ক্যারিয়ারের শেষ বয়সে এসে লিওনেল মেসিকে করা স্লাইডিং ট্যাকলের ছবিটা গোটা এরিনা জুড়ে থাকে। আর কিছু নয়, জাস্ট একটা উদাহরণ হিসেবে। মানুষই পারে, মানুষই পারে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে। জেদ এমনই ভয়ানক জিনিস।
সেই জেদের অপর নাম লুকা মদ্রিচ! শরণার্থী শিবির থেকে উঠে এসে যিনি ফুটবলের দুনিয়ায় হয়েছেন বিশ্বসেরাদের একজন।