দুই অলরাউন্ডার, এক লড়াই

দুজনই এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশস ক্রিকেট লিগ খেলছেন আবাহনীর হয়ে । শুধু এতটুকুই না, এই দুই ক্রিকেটারের মধ্যে আছে আরো অনেক মিল। দুজনই অলরাউন্ডার,  তবে একজন স্পিনার আরেকজন পেসার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও নাম লিখিয়েছিলেন কাছাকাছি সময়েই। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন নতুন এক ভোরের। তবে এখন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মোসাদ্দেক হোসেন দুজনই নিজেদের হারিয়ে খুঁজছেন।

বাংলাদেশের একটি স্মরণীয় জয় এসেছিল মোসাদ্দেকের হাত ধরে। এখন পর্যন্ত সেটিই বাংলাদেশের একমাত্র কোন বহুজাতিক টুর্নামেন্ট জয়ের স্মৃতি। ২০১৯ বিশ্বকাপের ঠিক আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে এসেছিল সেই সাফল্য। তবে কঠিন পরিস্থিতি থেকে দলকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিয়েছিলেন মোসাদ্দেক।

সাত নাম্বারে নেমে ২৭ বলে ৫২ রানের এক ইনিংস। ওই ইনিংসটি থেকে শুধু একটি জয়ই আসেনি বরং অনেকগুলো বার্তা পাওয়া গিয়েছিল। বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে একজন ফিনিশারের খোঁজ মিলেছিল। একটা ট্রফি জেতার আক্ষেপ মিটেছিল এবং বিশ্বকাপের ঠিক আগে বাংলাদেশের এমন পারফর্মেন্স ক্রিকেট দুনিয়ার নজর কেড়ে নিয়েছিল।

এর আগে পরেও বাংলাদেশের হয়ে ব্যাট হাতে ভালো কিছু ইনিংস খেলেছেন মোসাদ্দেক। তবে সেই ইনিংসটিই তাঁর ক্যারিয়ারের হাইলাইট হয়ে রয়েছে। এছাড়া বল হাতেও দলের চাহিদা মিটিয়েছেন কখনো কখনো। তবে সব ছাপিয়ে মোসাদ্দেক বাংলাদেশের অনেক অপেক্ষার একজন ফিনিশার হয়ে উঠবেন এমনটাই ছিল স্বপ্ন। তবে যত দিন গড়িয়েছে সেই স্বপ্নও ততই বিলীন হয়েছে।

ওদিকে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও ইনজুরি কাটিয়ে নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এই পেস বোলিং অলরাউন্ডারও বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটা বিরাট আশার বাতি জ্বালিয়ে এসেছিলেন। দেশের ক্রিকেটে একটা পেস বোলিং অলরাউন্ডারের খোঁজ অনেকদিন ধরেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেকেই এসেছেন আবার হারিয়েও গিয়েছেন।

তবে মোটামুটি থিতু হতে পেরেছিলেন ওই সাইফউদ্দিনই। যদিও ব্যাট হাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব একটা প্রমাণের সুযোগ না পেলেও বল হাতে বাংলাদেশের বোলিং লাইন আপের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছিলেন। বিশেষ করে ডেথ ওভারে বাংলাদেশের আস্থা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। মাশরাফি বিন মর্তুজা এই কিছুদিন আগেও ডেথ ওভারে সাইফউদ্দিনের প্রশংসা করেছেন। জানিয়েছেন সাইফউদ্দিনই নাকি পুরনো বলে বল করার জন্য দেশসেরা বোলার।

রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণও করেছেন। বাংলাদেশের হয়ে ২৯ টি ওয়ানডে ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে আছে ৪১ উইকেট। তবে ফেনির এই পেসার ইনিজুরির কারণে অনেকদিন ধরেই আছেন জাতীয় দলের বাইরে। তবে ইনজুরি কাটিয়ে আবারো মাঠে ফিরেছেন এই পেসার।

এখন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে খেলছেন আবাহনীর হয়ে। যদিও ডিপিএলে এখনো নিজেকে সেভাবে প্রমাণ করতে পারেননি। ওদিকে মোসাদ্দেক অবশ্য ব্যাট হাতে আছেন দারুণ ছন্দে। এখন পর্যন্ত আবাহনীর হয়ে ৮ ম্যাচ খেলে ৫ টিতেই তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। শাইনপুকুরের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৮৮ রানের ইনিংস এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে।

তবে আবাহনীর বিপক্ষে দুজনই এখন নিজেদের ফিরে পাওয়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও যতই সময় যাচ্ছে তাঁদের জন্য রাস্তাটাও ততই কঠিন হচ্ছে। এটা এই দুই অলরাউন্ডারও খুব ভালো করেই জানেন। তাইতো আবাহনীর হয়ে অনুশীলনেও দেখা যায় দুজনের চিন্তিত মুখ। নিজেদের খুঁজে পাওয়ার লড়াই।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link