দুই ইংল্যান্ড বধ ও একজন শফিউল

ইংল্যান্ড বরাবরই শফিউলের প্রিয় প্রতিপক্ষ ছিল। ২০১০ সালে ব্রিস্টলে যেবার ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ দল, সেবারও অন্যতম নায়ক ছিলেন শফিউলই। এবার অবশ্য তিনি যা করার বল হাতেই করেন। সেদিন চার বলে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের যখন মাত্র ছয় রান দরকার তখন গলার কাটা হয়ে থাকা জোনাথন ট্রটকে ফিরিয়ে দেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ৯৪ রান করা ট্রট টিকে গেলে বাংলাদেশের জয় পাওয়াটা মুশকিল হত। সেবারই প্রথমবারের মত কোনো ফরম্যাটে ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ।

২০১১ সালের বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপ। ভারত, পাকিস্তানের সাথে সেবার আয়োজক ছিল বাংলাদেশও। বাংলাদেশ দল সেই বিশ্বকাপটা ভুলেই যেতে চাইবে। কারণ, প্রথম রাউন্ডেই বাদ পড়তে হয় সাকিব আল হাসানের দলকে।

তবে, একজন বাংলাদেশি পেসার আজীবন মনে রাখবেন সেই বিশ্বকাপকে। নাহ, বোলিং দিয়ে নয়। ব্যাটিং দিয়ে। সেবারই নিজেদের মাটিতে প্রথমবারের মত ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। তাও আবার বিশ্বকাপের মঞ্চে।

সেই পেসারটি হলেন। শফিউল ইসলাম। বাংলাদেশ ক্রিকেটে তাঁর নামটা কারোই অপরিচিত নয়। ২০১০ সালে অভিষেক, সর্বশেষ খেলেছে ২০২০ সালে। মানে ১০ বছর তিনি সার্ভিস দিয়েছেন বাংলাদেশ দলকে।

যদিও, শফিউলকে কেন মনে রাখা দরকার? – এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। বরং, তিনি কোনো ভুল না করলে একাদশে তাঁর থাকাটা যেন কোনো ভাবেই বোঝা যেত না।

১০ বছর জাতীয় দলে থাকলেও সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংখ্যা ১০০ টির মাইলফলকও ছোঁয়নি। উইকেট পেয়েছেন ১০৭ টি। তবে, তাঁর আলাদা কোনো বিশেষত্ব ছিল না। তাই, বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টও তাঁকে খুব বেশি ব্যবহার করার সুযোগ পায়নি একদমই।

সব মিলিয়ে শফিউল ইসলাম সুহাস বাংলাদেশ ক্রিকেটের খুবই অদ্ভুত একটি চরিত্র। ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের ম্যাচে শেষ উইকেটটা নিয়েছিলেন। আবার দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের মঞ্চে দলকে জেতান, এবার অবশ্য ব্যাট দিয়ে।

জাতীয় দল থেকে অসংখ্যবার বাদ পড়েছেন। অসংখ্যবার ফিরেও এসেছেন। তবে, তাঁর বাদ পড়া বা ফেরা কোনোটারই কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। ফিরেও তিনি এমন কোনো কিছু করে দেখাতে পারেননি যে, শফিউলকে নিয়ে হাহাকার করা যায়।

তবে, ইংল্যান্ড বরাবরই শফিউলের প্রিয় প্রতিপক্ষ ছিল। ২০১০ সালে ব্রিস্টলে যেবার ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ দল, সেবারও অন্যতম নায়ক ছিলেন শফিউলই। এবার অবশ্য তিনি যা করার বল হাতেই করেন। সেদিন চার বলে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের যখন মাত্র ছয় রান দরকার তখন গলার কাটা হয়ে থাকা জোনাথন ট্রটকে ফিরিয়ে দেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ৯৪ রান করা ট্রট টিকে গেলে বাংলাদেশের জয় পাওয়াটা মুশকিল হত। সেবারই প্রথমবারের মত কোনো ফরম্যাটে ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ।

আবার লিকলিকে গড়ণের শফিউল খুবই ইনজুরিপ্রবণ। সর্বশেষ জাতীয় ক্রিকেট লিগে খেলেননি। বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগেও দল পাননি। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) তাঁর প্রতি আগ্রহী হয়নি কোনো দল। যদিও, খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, যেদিন খোদ ভারতের মাটিতেই তাঁর বিপক্ষে ব্যাটিং করতে গিয়ে ভুগতে হয়েছেন আধুনিক টি-টোয়েন্টির অন্যতম গ্রেট রোহিত শর্মাকে।

কিন্তু, সেই শফিউল আজ কোনো আলোচনাতেই নেই। কোনো খবরে খুঁজেই পাওয়া যায় না এই পেসারকে। অথচ, শফিউলের বয়স মাত্র ৩২ কি ৩৩। বিষয়টাকে অদ্ভুত বলবেন না তো কি, অন্তত এভাবে দৃশ্যপট থেকে তাঁর তো আর হারিয়ে যাওয়ার কথা নয়।

তবুও শফিউল স্বপ্ন দেখে যাচ্ছেন, ফেরার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে, জাতীয় দলের এখন পেস আক্রমণের যা অবস্থা – তাতে শফিউলের জন্য স্বপ্ন দেখাটা খুব কঠিন। তবুও চলুক লড়াই। সব লড়াইয়ের শেষটা যে জাতীয় দল দিয়েই হবে সেই দিব্যি কে দিয়েছে!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...