২০১৬ সাল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। দিনের শুরুতেই ২৬ রানের মাথায় পাঁচ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা যখন লজ্জার রেকর্ড গড়ার অপেক্ষায় তখনই দৃশ্যপটে আগমন ঘটে সদ্য আন্তজার্তিক অঙ্গনে পা রাখা তরুণ এক অলরাউন্ডারের।
দিনেশ চান্দিমালকে নিয়ে রেকর্ড ২১১ রানের জুটি গড়ে দলকে ড্রাইভিং সিটে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। করেছিলেন নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। সেখানেই শেষ নয়, দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৬৫ রান করে দলকে জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে দেন সেই তরুণ।
ঠিক পরের বছর, দিল্লিতে শ্রীলঙ্কা-ভারত টেস্ট ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ১১৯ রানের কাব্যিক এক ইনিংস খেলে লঙ্কানদের পরাজয় থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন এক ব্যাটসম্যান। সফরকারী কোন ব্যাটসম্যানের জন্য ভারতের মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে এটিই সর্ব্বোচ্চ রানের ইনিংস।
উপরের গল্পগুলো ধনাঞ্জয়া মাদুরাঙ্গা ডি সিলভার, যিনি ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন হয়ে উঠেছিলেন।
১৯৯১ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার দক্ষিণের একটি শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি তাঁর। বয়স ভিত্তিক বিভিন্ন দলে খেলতে খেলতে বেড়ে উঠেন তিনি। এরপর শ্রীলঙ্কার অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও ডাক পেয়েছিলেন সিলভা।
তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ডি সিলভার ক্যারিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল ২০১৫ সাল। সুপার টি২০ প্রভিনশিয়াল টুর্নামেন্টে সিলভা ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ছিলেন। ৬ ইনিংসে ১৩৩ স্ট্রাইক রেটে সেবার ২৩৪ রান করেছিলেন তিনি। কয়েকমাস পরেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তামিল ইউনিয়নের হয়ে রীতিমতো স্বপ্নীল এক মৌসুম কাটান সিলভা। তামিল ইউনিয়ন সে বছর প্রথম শিরোপা জিতেছিল যার অনেকটাই কৃতিত্ব ডি সিলভা’র।
ডি সিলভার ব্যাট থেকে ৫৪ এর বেশি গড়ে ৮৬৪ রান এসেছিল। এছাড়াও শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে অনবদ্য ১২১ রানের ইনিংস খেলে দেশজুড়ে আলোচনায় উঠে আসেন ডি সিলভা। তামিল ইউনিয়নের বোলিং আক্রমণেরও অন্যতম সেরা অস্ত্র ছিলেন তিনি। মাত্র ১৪.২৪ গড়ে তুলে নিয়েছিলেন ৩২ উইকেট।
এমন অতিমানবীয় অলরাউন্ড পারফর্ম্যান্স চোখ এড়ায়নি নির্বাচকদের। সে বছরই পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০ দলে জায়গা পেয়ে যান ধনাঞ্জয়া। তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি সে সময়। কিন্তু পরের বছরই অস্ট্রেলিয়া সিরিজে টেস্ট অভিষেক হয় সিলভার। দলের হয়ে সে সিরিজে সর্ব্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছিলেন সিলভা।
এখন পর্যন্ত নিজের প্রিয় সাদা পোশাকের ফরম্যাটে ৪০টি ম্যাচ খেলেছেন ডি সিলভা। ৩৭ গড়ে ২৫১৭ রান করেছেন তিনি। শতকের দেখা পেয়েছেন ৮ বার, অর্ধশতক করেছেন ৯টি। শ্রীলঙ্কার টেস্ট ইতিহাসে যৌথভাবে দ্রুততম ১০০০ রান করেছেন ডি সিলভা। অন্যদিকে টেস্ট ক্রিকেটে সিলভার উইকেট ২৯টি। এখনো বল হাতে নিজের সামর্থ্যের পুরোপুরি প্রমাণ দিতে পারেননি এই অলরাউন্ডার।
এছাড়াও ২০১৬ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ফরম্যাটে অভিষেক হয় ধনাঞ্জয়ার। এখন পর্যন্ত ৫৬টি ওয়ানডে খেলেছেন তিনি, রান করেছেন ১১৯৯। গড়টা ২৬.৬৪। বল হাতেও নিজের দায়িত্ব ভালভাবেই সামলেছেন ডি সিলভা। ৫.১৮ ইকোনমিতে বোলিং করেছেন। পাশাপাশি এখন পর্যন্ত তাঁর উইকেট সংখ্যা ২৮টি।
তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তুলনামূলক পিছিয়ে আছেন ডি সিলভা। মাত্র ২৩ ম্যাচ খেলেছেন তিনি, রান করেছেন ২০ গড়ে। স্ট্রাইক রেট মোটেও টি-টোয়েন্টি সুলভ নয়, মাত্র ১০৮! বোলিংয়েও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। টি-টোয়েন্টিতে নামের পাশে রয়েছে মাত্র পাঁচ উইকেট।
এক সময় শ্রীলঙ্কা ছিল ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি। কিন্তুর সময়ের আবর্তনে লঙ্কান কিংবদন্তিরা যখন অবসরে গিয়েছেন, সাথে করে নিয়ে গিয়েছেন লঙ্কান ক্রিকেটের জৌলুশ। তিলকারত্মে দিলশান, সনাথ জয়াসুরিয়া, কুমার সাঙ্গাকারাদের অবসরের পরেই মূলত পিছিয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট।
তবে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কানরা। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, মাহিশ থিকসানাদের মত একঝাঁক তরুন ক্রিকেটারদের ঘিরে স্বপ্ন বুনছে তারা। হয়তো নিকট ভবিষ্যতে আবার ক্রিকেটে পরাশক্তি হয়ে উঠবে দ্বীপরাষ্ট্রটি।
বর্তমানে লঙ্কানদের ভরসা করার মত যে কয়েকজন ক্রিকেটার রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। তরুনদের নিয়ে নতুন করে লঙ্কানদের ঢেলে সাজানোর দায়িত্ব তো সিলভাদের মত অভিজ্ঞদের হাতেই।