ধোনি ‘একাই একশো’

‘ক্যাপ্টেন কুল’ কিংবা ফিনিশার যে কোন বিশেষণে আপনি মানুষটিকে বেঁধে ফেলতে পারবেন। মহেন্দ্র সিং ধোনি, এই একজন মানুষ যে কি না ক্রিকেটের পুরো ব্যাকারণে পরিবর্তন এনে দিয়েছেন। কি করে কঠিন পরিস্থিতিতে খেলা সামলে নিতে হয়, কি করে প্রতিপক্ষের হাত থেকে জয় ছিনিয়ে আনতে হয় তা তিনি করে গেছেন, শিখিয়ে গেছেন।

২০১১ সালে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কান বোলার নুয়ান কুলাসেকারাকে মারা ছক্কাটা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। ত্রিশের ঘর ছুঁই ছুঁই করা ধোনি আর চল্লিশে পা রাখা ধোনির কোন পার্থক্যই যেন আপনি করে দিতে পারবেন না। তিনি চির সজীব।

তিনি যতক্ষণ ব্যাট হাতে বাইশ গজে রয়েছেন ততক্ষণ আপনি বলে দিতে পারবেন না যে ঠিক কোন দল জিততে চলেছে ম্যাচ। তিনি মাঠে থাকা মানেই বাড়তি এক আত্মবিশ্বাস, তিনি মাঠে থাকা মানেই জয়ের ক্ষীণ আশা  দুপুরের প্রখর রোদের ন্যায় তীব্র হয়ে ওঠে।

বছর দুই হল তিনি ছেড়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। তবে এখনও খেলে যাচ্ছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। ফাঞ্চাইজির অনুরোধে কিংবা নিজের ইচ্ছায়। তবে তিনি যে একদমই ফুরিয়ে যাননি তা তো মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে হওয়া ম্যাচে দেখিয়েই দিলেন। নিজের ব্যাটিং সত্ত্বা যে একেবারেই হারিয়ে ফেলেননি তাঁর প্রমাণ তো দিয়েই যাচ্ছেন এবারের আইপিএলে। এখন পর্যন্ত সাত ম্যাচ খেলে তাঁর ব্যাটিং গড় ৬০।

বয়সের বিস্তর ফাঁরাক, অপেক্ষাকৃত তরুণদের সাথে ক্রমাগত লড়াই করে নিজের ব্যাটিংটাকে রেখেছেন আলাদা এক উচ্চতায়। জয়দেব উনাদকাতের মত তরুণ বোলারদের শেষ ওভারেও অনায়সে মাথা ঠান্ডা রেখে দলকে নিয়ে যাচ্ছেন জয়ের বন্দরে। যেন মাত্রই ক্যারিয়ার শুরু করা কোন এক ছোকড়া তিনি। তর্কসাপেক্ষে তিনি সেরা কিংবা সর্বকালের সবার সেরা ফিনিশার। যাই হোক তিনি সেরা সেটা মেনে নিতে তো দ্বিধা নেই।

চেন্নাই সুপার কিংসের আইপিএল ইতিহাসে আট দফা শেষ বলে ম্যাচ জিতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অধিকাংশ সময়ই ধোনির হাত ধরেই ম্যাচ জিতেছে চেন্নাই অথবা তিনি জয়ের সে ভিত গড়ে দিয়ে গেছেন। তবে গেল আসরে ধোনির ব্যাটিং নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। তাঁর অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক তিনি। সম্ভাব্য সকল আইসিসি ট্রফি তিনি জিতেছেন, দলকে জিতিয়েছেন।

তবে তাঁর ব্যাটিং নিয়ে নানা সময়ই উঠেছে প্রশ্ন। গত মৌসুমের মত। তবে আদৌ কি তাঁর ব্যাটিংকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করা যায়? আইপিএল প্রেক্ষাপটে তো তা সম্ভব নয়। সেই ২০০৮ থেকে এখন অবধি যতগুলো আসর ধোনি খেলেছেন তার কোন আসরেই ধোনির স্ট্রাইকরেট কখনো নামেনি ১০০ এর নিচে, বরং তাঁর স্ট্রাইকরেটটা বেশ প্রশংসনীয়। গড়ে প্রায় ১৩৫.৭৩ স্ট্রাইকরেটে তিনি ব্যাট করে গেছেন প্রতিটি আসর।

শুধু তাই নয় তাঁর ব্যাটিং গড়টা বিরাট কোহলি, ঋষাভ পান্ত, শিখর ধাওয়ানদের থেকেও বেশি, ৩৯.৮৮। তাঁর সেরা মৌসুমে তিনি ঠিক কতটা ব্যাট হাতে রান তুলতে সক্ষম তাঁর উদাহরণ হতে পারে ২০১৩ ও ২০১৯ আসর। ২০১৩ সালে তিনি তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ৪৬১ রান করেছিলেন। আর ২০১৯ মৌসুমে তাঁর গড় রেকর্ড ছুঁয়েছে। ৮৩.২ গড়ে তিনি রান করেছেন ৪১৬। সেটাও কিন্তু তাঁর ক্যারিয়ারের গোধূলি লগ্নে।

সুতরাং একটা মাত্র খারাপ মৌসুম দিয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে বিচার করা বড্ড বেশি বোকামি হয়ে যায়। তিনি অনন্য, তিনি কিংবদন্তি, তিনি অন্যতম সেরা ফিনিশার, তিনি সফলতম অধিনায়ক। তিনি যেন ‘একাই একশো’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link