২০০ এর একটু বেশি স্ট্রাইকরেট, আর ঠিক ১০৫ গড়। এমন এক ব্যাটিং প্রদর্শন নিশ্চয়ই প্রতিটি ব্যাটারের স্বপ্ন। লাখো ব্যাটার যখন একটা স্বপ্ন দেখছেন তখন ৩৭ বছর বয়সী দীনেশ কার্তিক সে স্বপ্নটা উদযাপন করছেন। হ্যাঁ এই পরিসংখ্যানের মালিকে ডান-হাতি ব্যাটার দীনেশ কার্তিক। তিনি ঠিক এমন ধ্বংসলীলাই চালাচ্ছেন।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের পঞ্চদশতম আসরে দীনেশ কার্তিক নতুন এক রোলে নিজেকে বাজিয়ে দেখছেন। নতুন বলাটা যুক্তিযুক্ত হবে না। তিনি আগেও এই পজিশন কিংবা রোলে খেলেছেন কিংবা দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে এবার নতুন এক শিবিরের ছায়াতলে তিনি যেন রীতিমত ভিন্ন কেউ। রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে ফিনিশার রোলটাকে পূর্ণতা দিচ্ছেন দীনেশ কার্তিক।
এখন পর্যন্ত আট ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে রান এসেছে ২১০। যার ছয় ইনিংসেই ছিলেন তিনি অপরাজিত। ফর্মে একেবারে তুঙ্গে থাকা বলতে যা বোঝায়। তবে তাঁর এই ফর্ম ভারতের নির্বাচকদের একটু অস্বস্তিতে ফেলছে। কেননা এই বছরের শেষে দিকে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানটায় ভারতের দল সাজাতে নির্বাচকরা যখন হিমসিম খাচ্ছেন কাকে রেখে কাকে বাদ দেবেন এমন সমীকরণে, তখনই কার্তিক তাঁকে বিবেচনা করার জোর দাবি জানাচ্ছে।
কার্তিক নিজেও অকপটে স্বীকার করেছেন যে তিনি আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে চান। তিনি চান ভারতের শিরোপ জয়ে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হতে। তবে তাঁকে কি আদৌ বিবেচনা করবে নির্বাচকেরা? এমন প্রশ্ন ওঠাটা বড্ড স্বাভাবিক। তাঁকে দলে নেওয়ার প্রধান অন্তরায় হয়ত হতে পারে বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে তাঁর পারফর্মেন্স। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি। তাছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তিনি শেষ খেলেছেন প্রায় এক যুগ আগে ২০১০ সালে।
সেবারও বলার মত কিছুই নেই তাঁর ঝুলিতে। ১১ এর আশেপাশে গড়ে তিনি ১২০ স্ট্রাইকরেটে রান করেছনে। এরপর থেকেই আর দীনেশ কার্তিক খেলেন নি ভারতের হয়ে কোন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এবার কি তবে তিনি খেলবেন? এমন সম্ভাবনায় আরও বেশ কিছু অন্তরায় রয়েছে। কার্তিক চাইছেন তিনি ধোনির মত ভারত দলে ফিনিশার হিসেবে খেলতে চাইছেন। তাঁকে খেলাতে হলে ভারত জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্টকে বেশ কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রথমত, একজন অলরাউন্ডার কম নিয়ে খেলতে হবে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ভারত সাধারণত একজন পেস ও একজন স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার নিয়ে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ধরে নেওয়া যাক যে এক থেকে তিন এই পজিশনে খেলোয়াড় চূড়ান্ত। রোহিত শর্মার ও লোকেশ রাহুলের ওপেনিং জুটি, আর বিরাট তিন নম্বরে। রইলো বাকি চার নম্বর পজিশন সেখানটায় আবার আরেক সমস্যা। তিন ব্যাটারদের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নিতে হবে ভারত দলকে। শ্রেয়াস আইয়ার, সুরিয়াকুমার যাদব ও ঋষাভ পান্ত। তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক সুরিয়াকুমার যাদব খেলবেন। তাহলে কার্তিক পাঁচ কিংবা ছয়ে খেলবেন।
সেখানটায় আবার ভেঙ্কেটেশ আইয়ারকে বাজিয়ে দেখছেন ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট। তাঁর পজিশনেও আমুল পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। তাছাড়া আরও একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে খেলানোর জায়গা নিশ্চয়ই নষ্ট করতে চাইবে না ভারত, যেহেতু খেলা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। আবার ঋষাভ পান্তের মত একজন ব্যাটারকে বাইরে রেখে একাদশ সাজানো বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। তাকেও যদি খেলাতে চায় দল তাহলে স্পিন বোলিং অলরাউন্ডারের জায়গাটা হয়ত ছেড়ে দিতে হতে পারে।
তেমনটা হলে বোলিং বিকল্প সীমিত হয়ে আসবে। মূল বোলারদের কেউ একজনের খারাপ দিনে রোহিতে কাছে বিকল্প থাকবে না কাজ চালিয়ে নেওয়ার মত। মোদ্দাকথা দীনেশ কার্তিককে একাদশে জায়গা দিতে হলে ‘গ্যাম্বলিং’ করতে হবে ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টকে। এখন প্রশ্ন আরও একটা উঠতে পারে যে তিনি কি বাজি ধরার মত ঘোরা? সে প্রশ্নের উত্তরে তাঁর সাম্প্রতিক ফর্ম হতে পারে উত্তর। তিনি রীতিমত কোন বোলারকে সমীহ করছেন না।
তিনি চড়াও হচ্ছেন এই ফরম্যাটের অন্যতম সফল বোলার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও মুস্তাফিজুর রহমদের বিপক্ষে। তাঁদেরকে মারছেন ভয়ডরহীন ভাবে। এমনকি নিজের ইনিংস গড়তে বা বাইশ গজে সেট হতেও কালক্ষেপন করছেন না। তিনি প্রথম চার-পাঁচ বলের মাঝেই বাউন্ডারি হাঁকাচ্ছেন। সর্বোপরী তিনি চাপের মুখেও ভাল ব্যাটিং করছেন। তিনি সময়ের সাথে পরিণত হয়েছেন, নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। এখন নির্বাচকদের পালা, তাঁকে সুযোগ দেওয়ার এখতিয়ার তো তাঁদেরই হাতে।