আবুল কাশেম সাহেবের বড় ছেলে

ময়মনসিংহ শহর অনেক কারণেই বিখ্যাত। শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা কিংবা সুস্বাদু মিষ্টি সব দিক থেকেই এই ঐতিহ্যবাহী শহরটা একেবারে অনন্য। শহরটা এখন অবশ্য আরেকজন মানুষের সুবাদে বিখ্যাত। তিনি হলেন আবুল কাশেম সাহেবের বড় ছেলে।

একসময় দেশের ক্রিকেটে ময়মনসিংহ অসংখ্য তারকা উপহার দিয়েছে। তেমন ভাবেই ক্রিকেটার বানানোর নেশায় মেতেছিলেন ময়মনসিংহ জেলা স্টেডিয়ামের কর্মকর্তা আবুল কাশেম সাহেব।

এক হাতে নানা খেলা পরিচালনায় সারাটা দিনমান ব্যস্ত থাকতেন। আরেক দিকে নিজে ছোটদের নিয়ে একটা ক্রিকেট দল চালাতেন। স্বপ্ন দেখতেন—এই দল থেকে দু-একটা ছেলে একদিন বাংলাদেশের জার্সি পরবে।

সেই স্বপ্ন থেকেই একদিন বড় ছেলেটাকে মাঠে নিয়ে আসেন। ছেলেটাও তেমন। মাঠে এসেই ব্যাটে-বলে পাগল করে ফেললো সবাইকে। ক’দিন পর দেখাদেখি ছোট দুই জমজ ছেলে – সান আর মুনও আসতে শুরু করলো মাঠে। তিন ছেলের দাপট দেখে হাসতে হাসতে আবুল কাশেম বলেন, ‘একদিন ছেলেরা আমার জাতীয় দলে খেলবে।’

নিয়তির কী নির্মম পরিহাস!

কাশেম সাহেবের সেই বড় ছেলে এখন খেলেন জাতীয় দলে। শুধু খেলাই নয়, তিনি অনেক জয়ের নায়কও হন। কিন্তু, সেই কাশেম সাহেব আর পৃথিবীতে নেই!

আফসোসটা আরেকটু বাড়ানোর মতো তথ্য হল – সৈকতের ছোট দুই ভাই মোসাব্বের হোসেন সান ও মোসাব্বেক হোসেন মুন বিকেএসপি থেকে বেরিয়ে এখন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে এসেছেন। এর মধ্যে সান অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের জাতীয় দলেও ছিলেন। দুই ভাই-ই ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট খেলেন। মানে, ঢাকার ক্রিকেটে একসাথে তিন ভাইকে দেখা যায় হরহামেশাই।

বলাই বাহুল্য, আলোটা আপাতত সেই কাশেম সাহেবের বড় পূত্র সৈকতের ওপর। সবার আগে হয়েছে টি-টোয়েন্টি অভিষেক। এরপর খেলছেন ওয়ানডে, ছিলেন বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলেও। তবে, এর চেয়েও বিস্ময়কর ঘটনা তিনি ঘটালেন বিশ্বকাপের আগে। অনন্য এক ইনিংস খেলে তিনিই তো বহুজাতিক কোনো আসরে বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা জয়ের নায়ক।

সৈকতের মূল পরিচিতিটা ছিল লঙ্গার ভার্সন ক্রিকেটার। জাতীয় লিগ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে মাঝের কয়েক বছর রীতিমতো রানবন্যা বইয়ে দিয়েছেন। মারাত্মক ফর্মের কারণেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখনই সৈকত বলেছিলেন, টি-টোয়েন্টি তাঁর স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা নয়।

এমনকি রানবন্যা হলেও লঙ্গার ভার্সনও নয়, তার মূল আকর্ষণের জায়গা ওয়ানডে। ওয়ানডে ক্রিকেটে ২০১৯ সালে যে একবারই কোনো বহুজাতিক সিরিজের ট্রফি হাতে নেয় বাংলাদেশ – সেখানে ফাইনালের নায়ক ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঝড়ো এক হাফ সেঞ্চুরি করে প্রায় অসম্ভব এক ম্যাচ জেতান তিনি।

নিশ্চয়ই সেদিন কোথাও না কোথাও নিজের স্বপ্ন পূরণের আনন্দে ভাসছিলেন সৈকতের বাবা আবুল কাশেম সাহেব।

এখনকার দিনে এমন গল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন। ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারানোর পর সেই বাবার এবং নিজের স্বপ্নের পেছনে এমন করে ছোটা, ভাইদেরও সেই পথে রাখা – এটা নি:সন্দেহে অসামান্য এক গল্প। সেই গল্পের ফসল হিসেবে সাফল্যের সমুদ্রে প্রবেশ করতে আরও পথ পাড়ি দিতে হবে সৈকতকে। কারণ, অনেক স্বপ্ন দেখালেও জাতীয় দলের হয়ে সৈকতের পথটা মসৃন নয় একদমই। আসা-যাওয়ার মধ্যেই থাকেন। ঠিক কোনো ভাবেই যেন জায়গাটা স্থায়ী হচ্ছে না। এর মধ্যে তাঁর ব্যক্তিগত অনিয়ন্ত্রিত জীবনও গণমাধ্যমে আলোচনার ঝড় তুলছে।

তবে, মোসাদ্দেকের লড়াই থেমে নেই। তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সময়ের সাথে সাথে প্রায় পরিপূর্ণ একজন অলরাউন্ডারই হয়ে উঠছেন। এবার কেবল জাতীয় দলে নিজেকে মেলে ধরার অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link