স্বপ্ন আইপিএলে খেলার, অপেক্ষা মাত্র একটি সুযোগের। তিন বছর আইপিএলের মঞ্চে তারকাদের ভীড়ে আড়ালে থাকার পর অবশেষে পেলেন নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ। সামর্থ্য দেখানোর সুযোগ কিংবা নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে আইপিএলের চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে?
এবারের আসরের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) বা হাতি পেসাররা নজর কাড়ছেন বিশেষভাবে। ইয়াশ দয়াল, আর্শদ্বীপ সিং, থাঙ্গারাসু নটরাজন, মুকেশ চৌধুরী, খলিল আহমেদের পর এবার দেখা মিলল আরেক সম্ভাবনাময় তারকার। লখনৌ সুপার জায়ান্টের হয়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে অভিষেক হয় বাঁ হাতি পেসার মহসিন খানের।
২৩ বছর বয়সী এই পেসার কাইরেন পোলার্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করেন। ৪ ওভারে মাত্র ২৭ রানের বিনিময়ে বিনিময়ে শিকার করেন ৩ উইকেট।
এরপর গেল রাতে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে দেখান দুর্দান্ত এক পারফরম্যান্স। নয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ব্যাট হাতে ৬ বলে ১ ছক্কা ও ১ চারে খেলেন ১৩ রানের ক্যামিও। এর বল হাতে দেখান ম্যাজিকেল পারফরম্যান্স। ৪ ওভারে ২৪ রানের বিনিময়ে শিকার করেন ৩ উইকেট। ইনিংসের প্রথম ওভারেই বল হাতে দেন মেইডেন। লিয়াম লিভিংস্টোন, কাগিসো রাবাদা ও রাহুল চাহারের উইকেট নেন মহসিন।
উত্তর প্রদেশের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা এই পেসারের ২০১৭-১৮ মৌসুমে বিজয় হাজারে ট্রফিতে অভিষেক হয়। এরপর ২০১৮ সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে ৮ ম্যাচে শিকার করেন। এরপর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএলে ডাক পান তিনি। যদিও কোনো ম্যাচ খেলার সু্যোগ পাননি। তবে বিশ্বের অনেক তারকা ক্রিকেটারের সাথে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুযোগ হয় এই তরুণের।
আইপিএলের ২০১৮ মৌসুমে ২০ লাখ রুপিতে প্রথমবারের মত মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএলে খেলার সুযোগ পান মহসিন। এরপর তিন মৌসুম মুম্বাইয়ে থাকলেও আইপিএলে অভিষেকের সুযোগ পাননি এই পেসার। বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে আইপিএলে অন্তত এক ম্যাচ হলেও খেলবে। তিন মৌসুম অপেক্ষার পর অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। এবারের আসরের মেগা নিলামে ভিত্তিমূল্য ২০ লাখ রুপিতে মহসিনকে দলে ভেড়ায় লখনৌ। আর লখনৌর হয়ে বাবা মায়ের সাথে সাথে নিজের স্বপ্ন পূরণ করলেন মহসিন।
অভিষেকের পর দুই ম্যাচেই এখন পর্যন্ত দুর্দান্ত বোলিং করেছেন এই তরুণ পেসার। অবশ্য ক্রিকেটে মহসিন খান বেশ পরিচিত নাম। আশির দশকে তথা পাকিস্তান ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ওপেনার হিসেবে পরিচিত মহসিন খান। তাঁর সময়ের সেরা একজন ড্যাশিং ওপেনার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন মহসিন।
সামনে-পেছনে দুই পায়েই সমানতালে শটস খেলতে পারতেন তিনি। সহজাত স্ট্রোকমেকিং ব্যাটিং ছিলো দেখার মতো। সারাদিন যেন তিনি অনায়াসে বাউন্ডারি হাঁকাতে পারবেন! মহসিনের ব্যাটিং ছিলো অনেকটাই জনপ্রিয় গেম ‘ফ্রুট নিঞ্জা’র মতো।
তবে ৩১ বছর বয়সে থমকে যায় সেই ওপেনার মহসিনের ক্যারিয়ার। বলিউডে ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে ক্রিকেট ক্যারিয়ার থমকে দাঁড়ায় মহসিনের।
আশির দশকের পর আবার ক্রিকেটে মহসিন খানের প্রত্যাবর্তন। এবার পেসার হিসেবে, ভারতের জার্সি গায়ে ভিন্ন একজন। ওপেনার মহসিন খান ক্রিকেটে নিজেকে সেরাদের কাতারে নিতে না পারলেও নিজের সময়ে পাকিস্তানের ওপেনিংয়ে ছিলেন আলোচিত একজন। তবে ভারতের তরুণ সম্ভাবনাময় পেসার মহসিন খানের ক্রিকেটে পথচলা মাত্র শুরু। কতদূর যেতে পারবেন তিনি সেটা সময়ই বলে দিবে।