‘কোল্ড ব্লাডেড’ আর্শদ্বীপ
স্লগ ওভারের তাঁর বোলিং রীতিমত ঈর্ষনীয়। তিনি রান আটকে রাখছেন। তিনি পরিকল্পনা মাফিক বল করে যাচ্ছেন। এছাড়াও তিনি থাকছেন একেবারে শান্ত। শেষের দিকে যখন ক্লান্তি এসে ভর করে। স্নায়ুচাপের মাত্রা বেড়ে ছুঁয়ে যায় আকাশ। তবুও কোন এক শীতল তরল বয়ে যায় আর্শদ্বীপের প্রতিটি ধমনী দিয়ে। তিনি যেন বরফ শীতল হিমালয়। পরিকল্পনায় স্থির, হিম টগবগে রক্তও যেন একেবারে নিরব।
‘মাঝে মাঝে উইকেটে কলাম মিথ্যে বলে’ এই মন্তব্যটা করেছেন সাবেক ভারতীয় স্পিনার অমিত মিশ্র। হ্যাঁ, সত্যিই তো উইকেটের কলামটা সবসময় যে সত্য বলে বিষয়টা তো তেমন নয়। এই যেমন পাঞ্জাব কিংসের আর্শদ্বীপ সিংয়ের উইকেট কলামটাই তো এমন মিথ্যাচার করছে।
আর্শদ্বীপ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত উইকেট পেয়েছেন মাত্র তিনটি। খেলেছেন নয়টি ম্যাচ। মাত্র তিন উইকেট দেখে হয়ত অনেকে ভ্রু খানিক কুচকে ফেলেছেন। তবে আরও একবার ভাবুন। তিন উইকেট পেয়েও তিনি নয় ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। নেতিবাচক চিন্তাধারার যারা তাঁরা হয়ত আবার চিন্তা করছেন যে পাঞ্জাবের হয়ত আর তেমন কোন বোলার নেই বিধায় আর্শদ্বীপ ক্রমাগত খেলে যাচ্ছেন।
আপনি যদি খেলা না দেখে থাকেন, তবে আপনি এমনটাই ভাববেন হয়ত। তবে যারা খেলা দেখেছেন তাঁরা নিশ্চয়ই জানেন ঠিক কি কারণে আর্শদ্বীপ খেলে যাচ্ছেন টানা। যারা জানেন না তাঁদের জন্যে ভারতের কিংবদন্তি বোলার হরভজন সিংয়ের একটি টুইট তুলে ধরা যেতে পারে। তিনি টুইটে লিখেছেন, ‘আর্শদ্বীপ সেরা বোলার!’ একজন কিংবদন্তির কাছ থেকে নিশ্চয়ই অযথা সেরার তকমা মেলেনা।
স্লগ ওভারের তাঁর বোলিং রীতিমত ঈর্ষনীয়। তিনি রান আটকে রাখছেন। তিনি পরিকল্পনা মাফিক বল করে যাচ্ছেন। এছাড়াও তিনি থাকছেন একেবারে শান্ত। শেষের দিকে যখন ক্লান্তি এসে ভর করে। স্নায়ুচাপের মাত্রা বেড়ে ছুঁয়ে যায় আকাশ। তবুও কোন এক শীতল তরল বয়ে যায় আর্শদ্বীপের প্রতিটি ধমনী দিয়ে। তিনি যেন বরফ শীতল হিমালয়। পরিকল্পনায় স্থির, হিম টগবগে রক্তও যেন একেবারে নিরব।
তিনি যেন নতুন এক অগ্রদূত। ডেথ বোলিংয়ের নতুন কান্ডারি। তিনি যেন নতুন করে জানান দিচ্ছেন তিনি হতে পারেন স্লগওভার গুলোতে দলের অন্যতম ভরসার প্রতীক, তিনিই হতে পারেন তুরুপের তাস কিংবা প্রতিপক্ষের জন্যে দুভের্দ্য এক মারণাস্ত্র। তাঁর পক্ষে অবশ্য কথা বলেছেন আরেক কিংবদন্তি বোলার ড্যানিয়েল ভিট্টোরি। তিনি বলেছেন, ‘যখন ভারত তাদের পরবর্তী দল গোছাবে তখন নিশ্চয়ই এমন একজন বোলারকে খুঁজবে যে কিনা পাওয়ার প্লে-তে উইকেট নিতে পারবে এবং ইনিংসের শেষটাও করতে পারবে।’
মূলত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারত দল নতুন করে সাজাবে আগামী বিশ্বকাপের জন্যে। সে দলের জন্যে ভেট্টরি চাইছেন আর্শদ্বীপও যেন থাকেন দলে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি আর্শদ্বীপ, হার্শাল এবং বুমরাহ হতে পারে ভারতের পছন্দ।’ তবে নিজের পারফরমেন্স সন্তুষ্ট নন আর্শদ্বীপ।
তিনি বলেন, ‘আমি খুশি কিন্তু একজন খেলোয়াড় কখনোই সন্তুষ্ট হয় না। আমি কৃতজ্ঞ কারণ আমাকে দল সুযোগ দিচ্ছে এবং আমি দলের জন্যে পারফরম করতে পারছি দলের যখনই প্রয়োজন।’ তাছাড়া ডেথওভারে নিজের এমন দূরন্ত সময় নিয়েও তিনি খুব বেশি উৎফুল্ল নন। তিনি বরং নিজের কাজটা ঠিকঠাক করে যাওয়া নিয়েই অধিক সচেতন।
তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত পারফরমেন্সকে বেশি গুরুত্ব দেই না কেননা এটা একটা দলগত খেলা। আপনাকে দেওয়া দায়িত্বটা আপনার যথাযথভাবে পালন করতে হবে। সবসময় আমার পরিকল্পনা থাকে ভাল জায়গায় ধারাবাহিকভাবে বল করে যাওয়া ও ব্যাটারকে ভুল করতে বাধ্য করা। আর ডেথ ওভারে আমার পরিকল্পনা থাকে খুব সরল।’
আর্শদ্বীপ হয়ত জানেন না তাঁর জন্যে ভারত জাতীয় দলের রাস্তা খুলবে কিনা। তবে তিনি নিশ্চয়ই তখনও সন্তুষ্ট হবেন না। তিনি নিজের সেরাটা দিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন একেবারে ক্যারিয়ারের শেষদিন অবধি।