চোখের মণি মুস্তাফিজ

এই কারণেই বোধহয় ক্রিকেটকে বলা হয় দলগত খেলা। এই যে সতীর্থকে সহয়তার করার পাশাপাশি তিনি যে রানের লাগাম টেনে রাখছেন সেটাও তো আখেরে দলের জন্যে বেশ উপকার হিসেবেই প্রমাণিত হচ্ছে বারবার। দলের পরিকল্পনার একটা বড় অংশ এখন মুস্তাফিজুর রহমান। কোচ রিকি পন্টিং থেকে শুরু করে অধিনায়ক সবাই যেন মেতেছেন কাটার মাস্টারের বন্দনায়। গতির ভেরিয়েশন, ইয়োর্কার, শেষ মুহূর্তে ব্যাটসম্যানের পজিশন দেখে লাইন চেঞ্জ করা, সত্যিই মন ভরানো বোলিং করছেন মুস্তাফিজ।

আপনার কাছে যখন মুস্তাফিজ রহমান থাকবে, তখন আপনি নিশ্চয়ই শেষের দিকে ওভারটা তাঁকে দিয়েই করাতে চাইবেন। আর তা যদি হয় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাহলে তো কথাই নেই। চোখ বন্ধ করে বল তুলে দেওয়া যাবে তাঁর হাতে। ঠিক এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটে ‘ডেথ ওভার স্পেশালিস্ট বোলার’ তালিকায় উপরে থাকবেন মুস্তাফিজুর রহমান।

না একেবারে হাওয়ায় ভেসে, আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখে তাঁকে এই তকমা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে তা নয়। এই যে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মত এত এত মহাতারকার ভিড়েও উজ্জ্বল আমাদের ‘কাটার মাস্টার’। তিনি নিজের একটা আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন আইপিএল দেখা সবার মনেই। তিনি অনন্য, তিনি অনবদ্য।

এখন পর্যন্ত আইপিএলে চার দলের হয়ে খেলে ফেলেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। শুরুটা করেছিলেন সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে। এরপর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, রাজস্থান রয়্যালস হয়ে তিনি এবার রয়েছেন দিল্লী ক্যাপিটালস শিবিরে। তবে প্রতিটা দলেই তিনি আলাদা একটা জায়গা করে নেন। স্বল্পভাষী মুস্তাফিজ, নিজের আলাদা একটা স্থান তৈরি করে নেন পারফরমেন্স দিয়ে। মুহূর্তেই তিনি বনে যান পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু।

এই যে নতুন দল দিল্লি ক্যাপিটালসে তাঁর একাদশে সুযোগ নিয়েই ছিল সংশয়। বিদেশি বোলার হিসেবে এনরিচ নরকের মত বোলার রয়েছে দিল্লির শিবিরে। তবে তাঁকে হটিয়ে একাদশে জায়গা করতে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ করেননি। এই যে কলকাতা নাইট রাইডার্সের সাথের ম্যাচটার কথাই চিন্তা করুন না। শেষ ওভারে মুস্তাফিজের শিকার তিন উইকেট। রান খরচ করেছে মাত্র দুইটি রান।

অথচ আইপিএলের শেষ ওভারে রান হয় মুড়িমুড়কির মত। সেখানটায় শেষ ওভারটা যেন বোলারদের জন্যে দুঃস্বপ্ন। আর তখন যদি বাইশ গজে থাকে ইনফর্ম নিতিশ রানার মত ব্যাটার তখন যেন বোলারদের চিন্তায় ধরণী দু’ভাগ হয়ে যায়। আর সে সাথে রিংকু সিং প্রায় ১৪০ এর বেশি স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করছিলেন। সে সময়ে অধিনায়ক ঋষাভ পান্ত ভরসা রাখলেন মুস্তাফিজের উপর। আর মুস্তাফিজ ভরসার প্রতিদান দিবেন না তা কি করে হয়।

প্রথম বলে এক রান দিয়ে তারপরের বলেই তিনি সাজঘরে ফেরান রিংকুকে। এরপর আরেকটি রান খরচ করেন তিনি। তারপর মুস্তাফিজের বোলিং বৈচিত্র্যে পরপর দুই বলে চোখ ছানাবড়া রানা ও টিম সাউদির। শেষ বলটায় কোন রান না দিয়ে মুস্তাফিজ চার ওভার শেষে ১৮ রান খরচে তিন উইকেটের একটা বোলিং ফিগার নিয়ে মাঠ ছাড়ে। এই একটা ফিগার দেখেই আন্দাজ করে নেওয়া যায় মুস্তাফিজ ঠিক কতটা কার্য্যকর একজন বোলার। অন্তত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।

পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই মুস্তাফিজ ছন্দে আছেন। উইকেটের দেখা তিনি পাচ্ছেন না খুব একটা। আবার একেবারে খালি হাতে ফেরত যাচ্ছেন এমনটাও ঘটতে দেখা যাচ্ছে না। তিনি আসলে যে কাজটা করছেন তা নিয়মিত উইকেট নেওয়ার থেকেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি একপ্রান্ত থেকে চাপ সৃষ্টি করে দিয়ে যাচ্ছেন। আর অপরপ্রান্ত থেকে সতীর্থ বোলাররা উইকেট তুলে নিচ্ছেন।

এই কারণেই বোধহয় ক্রিকেটকে বলা হয় দলগত খেলা। এই যে সতীর্থকে সহয়তার করার পাশাপাশি তিনি যে রানের লাগাম টেনে রাখছেন সেটাও তো আখেরে দলের জন্যে বেশ উপকার হিসেবেই প্রমাণিত হচ্ছে বারবার। দলের পরিকল্পনার একটা বড় অংশ এখন মুস্তাফিজুর রহমান। কোচ রিকি পন্টিং থেকে শুরু করে অধিনায়ক সবাই যেন মেতেছেন কাটার মাস্টারের বন্দনায়। গতির ভেরিয়েশন, ইয়োর্কার, শেষ মুহূর্তে ব্যাটসম্যানের পজিশন দেখে লাইন চেঞ্জ করা, সত্যিই মন ভরানো বোলিং করছেন মুস্তাফিজ।

মুস্তাফিজ তাঁর বোলিং বৈচিত্র্য আর অসাধারণ ক্রিকেটীয় জ্ঞানের সংমিশ্রণে প্রমাণ করছেন যে তিনি ঠিক কতটা দূর্ধর্ষ একজন বোলার। মুস্তাফিজের এমন চোখে লেগে থাকা পরান জুড়ানো পারফরমেন্স চলতে থাকুক নিরবিচ্ছিন্নভাবে। আমাদেরও গর্ব হোক।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...