সি ফর কন্সিসটেন্সি, সি ফর কনওয়ে

ত্রিশ বছর বয়সে অভিষেক। সেখান থেকে বনে গেলেন সেরাদের একজন। মি. ক্রিকেট খ্যাত অস্ট্রেলিয়ান তারকা মাইক হাসি বহু ক্রিকেটারদের জন্য অনুপ্রেরণার এক নাম। হাল ছেড়ে না দিয়ে অদম্য চেষ্টা যে সফলতার দুয়ার খুলে দেয় তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হাসি।

সেই অনুপ্রেরণা থেকেই যেন ক্রিকেট পাড়ায় এক নতুন হাসির আগমন হল। ত্রিশ বছর বয়সে অভিষেক। এখন পর্যন্ত তিন ফরম্যাটেই পঞ্চাশের বেশি ব্যাটিং গড়। তিন ফরম্যাটেই দেখাচ্ছেন নজরকাড়া পারফরম্যান্স। হাসির মতই বাঁহাতি ব্যাটার। শুরুতে লোয়ার অর্ডারে ঝড় তুলতেন; এখন ওপেনিংও তিনি অনেকটাই নিয়মিত।

আইপিএল ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচ। প্রত্যাশার পারদ অনেক উপরে থাকলেও সেটি পূরণ করতে পারলেন না। মাত্র তিন রানেই ফেরত গেলেন। এরপর ম্যাচের পর ম্যাচে বাউন্ডারি লাইনের বাইরে ডাগ আউটে বেঞ্চি গরম করলেন। মনে মনে হয়ত ভাবছিলেন আরেকটা সুযোগ পেলেই করবেন বাজিমাত। সেই সুযোগটা শেষ অবধি এলো; সুযোগ পেয়ে বাজিমাতও করলেন। চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সি গায়ে সবশেষ তিন ম্যাচেই ফিফটি করেছেন নিউজিল্যান্ডের তারকা ক্রিকেটার ডেভন কনওয়ে।

প্রথম ম্যাচের পরই বাদ পড়েন। এরপর গুনছিলেন অপেক্ষার প্রহর। আইপিএলের মঞ্চটাই এমন। বিশ্বের নামি-দামি তারকা ক্রিকেটাররাও এখানে ম্যাচের পর ম্যাচ বেঞ্চে বসে কাটায়। একই চিত্র দেখা গেল কনওয়ের ক্ষেত্রেও। প্রথম ম্যাচের পর আর সুযোগই পাচ্ছিলেন না। ওপেনিংয়ে রুতুরাজ গাইকড়, রবিন উথাপ্পারা বেশ ভালই করছিলেন। তবে ফলাফলটা শূন্য। প্রথম নয় ম্যাচে জয় পান মাত্র দু’টিতে। দল যখন প্লে অফের লড়াইয়ে ছিটকে গেল, তখনই আবার সুযোগ পেলেন কনওয়ে।

এবার সেই সুযোগ হাতছাড়া করেননি। নিজেকে প্রমাণের জন্য সবচেয়ে বড় সুযোগ। টানা তিন ম্যাচেই করলেন দুর্দান্ত তিন ফিফটি। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে খেললেন ৫৫ বলে ৮৫ রানের ঝড়ো ইনিংস। এই ইনিংস দিয়েই যেন বার্তা দিয়েছেন – আইপিএলেও তিনি এসেছেন দাপট দেখাতে। পরের ম্যাচেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে ৩৭ বলে ৫৬ রানের আরেক দাপুটে ইনিংস।

ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন পরের ম্যাচেও। দিল্লী ক্যাপিটালসের বিপক্ষে খেললেন ৪৯ বলে ৮৭ রানের তাণ্ডব ইনিংস। মাত্র ১৩ রানের জন্য সেঞ্চুরির আক্ষেপটা তো আছেই। হায়দ্রাবাদের বিপক্ষেও দেখা পাননি সেঞ্চুরির। এবার দিল্লীর বিপক্ষেও কাছে গিয়েও ছুঁটে পারলেন না সেই কাঙ্ক্ষিত মাইলফলক। প্রথম ম্যাচের ব্যর্থতার পর ফিরেছেন স্বরূপেই। সাত ম্যাচ পর একাদশে ফিরেই টানা তিন ফিফটিতে এবারের আসরে ৭৭ গড়ে করেছেন ২৩১ রান।

দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলে খেলার সুযোগ খুঁজছিলেন। দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও সুযোগ হয়নি। পাড়ি জমান নিউজিল্যান্ডে। সেখানে নতুন করে শুরু করেন আবার। সুযোগ পেলেন নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছিলেন উড়ন্ত ফর্মে।

টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি – যেখানেই খেলেছেন রানের ফোয়ারা ছুঁটিয়েছেন তিনি। লাইমলাইটে থাকলেও আইপিএলের পঞ্চদশ আসরের মেগা নিলামে অবশ্য খুব বেশি দাম পাননি তিনি। মাত্র ১ কোটি রূপিতেই কনওয়েকে দলে ভেড়ায় চেন্নাই সুপার কিংস। প্রথম ম্যাচে সুযোগ পেলেও নিজের সামর্থ্যের ছিটেফোঁটাও দিতে পারেননি। ফেরার পর থেকেই আবার সেই চিরচেনা রূপ। আইপিএলের মঞ্চেও কনওয়ে যেন জানান দিচ্ছেন – তিনি শেষে এসে সেরা হতে চান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link