ধনি কিংবা রজনীকান্ত, আগন্তুক যখন ঘরের ছেলে

কেবল মহেন্দ্র সিং ধোনি আর রজনিকান্তই পেরেছিলেন তালিমনাড়ুর মানুষদের আপন হতে। এই দুইজনই পেয়েছেন দক্ষিণের অকৃত্রিম ভালবাসা।

রবীন্দ্র জাদেজা খানিকটা আক্ষেপ নিয়েই হয়ত বলেছিলেন যে তিনি সারাক্ষণই ‘মাহি মাহি’ চিৎকার শোনেন। যখন জাদেজা ব্যাট করতে আসেন তখন স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক নাকি তার আউট হওয়ার অপেক্ষা করে। হয়ত জাদেজার আফসোস হয়। তিনি চেন্নাইয়ের মানুষদের আপন হতে পারেননি। সবাই তো আর পারে না সেটা।

কেবল মহেন্দ্র সিং ধোনি আর ফিল্ম স্টার রজনিকান্তই পেরেছিলেন তালিমনাড়ুর মানুষদের আপন হতে। এই দুইজনই পেয়েছেন দক্ষিণের অকৃত্রিম ভালবাসা। চেন্নাইয়ের চিপক স্টেডিয়ামে মহেন্দ্র সিং ধোনি যখন খেলতে নামেন তখন পুরো আকাশ-বাতাস ভরে ওঠে, ‘মাহি মাহি’ স্লোগানে। পুরো স্টেডিয়াম যেন কেঁপে ওঠে ধ্বনি তরঙ্গের অবাধ বিস্তারে।

ঠিক যেমনটা হতো রজনিকান্তের সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ার পর। গোট একটা হল ভর্তি মানুষের বুনো উল্লাস বদ্ধ সেই সিনেমা হলের বাইরে অবধি চলে আসে। কাওকে বলে দিতে হয়না বাশি বাজিয়ে আনন্দ করতে। সবাই আপন মনেই যেন সেটা করে। এমন হয়েছ শহরের মানুষ ঘুম বাদ দিয়ে হল ভর্তি হয়ে গোগ্রাসে গিলেছে রজনিকান্তের বলা এক একটি সংলাপ।

ঠিক এতটাই আপন ছিলেন রজনিকান্ত। অবশ্য আপন ছিলেন বললেই খানিকটা ভুলই বলা হয়। এখনও আছেন তিনি। সেই সাথে যোগ হয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। একটা জায়গায় অবশ্য ধোনি আর রজনিকান্ত মিলেমিশে একাকার। তারাই কেউই তামিল নাড়ুর না। প্রদেশের বাইরের একটা ছেলে ঠিক এতটা আপন করে নেওয়া যায়!

আবার রজনিকান্তের সুপারস্টার হওয়ার আগের জীবনের সাথে খানিকটা মিলে যায় ধোনির শুরুর দিনগুলো। রজনিকান্তের জন্ম হয়েছিল মহারাষ্ট্রে। তবে তিনি বড় হয়েছেন কর্ণাটকে। কিন্তু তাকে ঘরের ছেলে বানিয়েছে তামিল নাড়ু। রজনিকান্তের বাড়ি এখন চেন্নাই।

ঠিক একই রকমভাবে, ধোনির জন্মটা ভারতের বিহারে। তবে তার বেড়ে ওঠা উত্তরাখণ্ডে। তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটের যাত্রা শুরু করেন ঝারখণ্ডের হয়ে। ধোনি বলেন আর রজনিকান্ত, দুইজন বেশ সাধারণ একটা পরিবেশ থেকে উঠে এসে হয়েছেন সুপারস্টার।

রজনিকান্ত কর্ণাটকে বাসের কন্ডাক্টর ছিলেন। ধোনিও তো একটা সময় খড়কপুর রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট চেকারের দায়িত্ব পালন করেছেন। এই দুই মহারথী জানেন ঠিক কি করে মিশে যেতে হয়ে মানুষের মাঝে। মানুষের হৃদয়ের মধ্যখানে জায়গা করে নিতে ঠিক কতটুকু পরিশ্রম করা প্রয়োজন। দুইজনই করেছেন। দুইজনকে তাই চেন্নাই নিজেদের মনে আলাদা আসন করে দিয়েছে।

এই দুইজনের গতিপথটা এক। তাইতো ধোনিকে চিপক স্টেডিয়ামে স্বাগতম জানানো হয় রজনিকান্তের সিনেমার গান দিয়ে। কখনো ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বাদশা’ সিনেমার টাইটেল ট্র্যাকে আগমন ঘটে ধোনির তো কখনো আবার অন্যকোন গান।

এই দুইজন মানুষ খুব অবলীলায় মিশে গেছেন তামিল নাড়ুর মানুষদের আবেগের সাথে। এমনকি দক্ষিণের সেই প্রদেশে রয়েছে বহু তারকা। অস্কার বিজয়ী এ আর রহমান থেকে শুরু করে ঘরের ছেলে রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তবে কেউই রজনিকান্ত আর ধোনির জায়গায় পৌঁছাতে।

দুই আগন্তুক দখল করে রেখেছে দক্ষিণের ভালবাসার পুরোটা অংশ। এই দুইজনের প্রস্থানে নিশ্চয়ই চোখের জলের অবারিত ধারা প্রবাহিত হবে পুরো তামিল নাড়ু জুড়ে। মহেন্দ্র সিং ধোনি অবশ্য বলেই দিয়েছেন এটাই তার শেষ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ।

শেষদিনে হয়ত আরও একটি রজনিকান্তের গানেই নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বিদায় বলে দেবেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। অবশ্য এরপরও হয়ত চিপক স্টেডিয়ামে ক্ষণে ক্ষণে শোনা যাবে ‘মাহি মাহি’ স্লোগান। ঠিক যেমনটা এখনও শোনা যায় সূদুর স্পেনের ক্যাম্প ন্যু-তে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...