বিষাক্ত বাউন্স কিংবা দুর্দান্ত ইয়র্কার, গতির ঝড় কিংবা ডেথ ওভারে স্লোয়ার ইয়র্কার – জাসপ্রিত বুমরাহ মানেই যেন প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের জন্য এক আতংকের নাম। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বল হাতে দাপট দেখাচ্ছেন। প্রতিপক্ষের বাঘা বাঘা অনেক ব্যাটারও তার সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন। বুমরাহর বিপক্ষে রান বের করতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয় ব্যাটারদের। সেই বুমরাহ যেন হঠাৎ থমকে গেছেন!
চলছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) পঞ্চদশ আসর। এবারের আসরে বুমরাহর সেই ভয়ংকর বোলিংয়ের দেখা নেই, অনভিজ্ঞ ব্যাটারদের কাছেও বেধরক মার খাচ্ছেন। পুরনো সেই আগ্রাসনটা যেন হারিয়ে ফেলেছেন; বোলিংয়ে আগের সেই ধারটা নেই। সব মিলিয়ে লম্বা সময় বুমরাহ ছিলেন নিষ্প্রভতার সুপ্তিতে।
আইপিএলে চলতি আসরে বল হাতে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছিলেন না বুমরাহ। দলের অবস্থাও চরম বাজে। প্রথম আট ম্যাচের সবকটিতে হেরে প্লে অফের দৌড়ে ছিটকে যায় মুম্বাই। দলের সাথে সাথে তিনিও ছিলেন নিষ্প্রভ। তবে টুর্নামেন্টের শেষ অংশে এসে অবশেষে বল হাতে আলোর দেখা পেলেন বুমরাহ।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিংয়ে শিকার করেছেন পাঁচ উইকেট। বিধ্বংসী বোলিংয়ে কলকাতার ব্যাটিং শিবির একাই ধসিয়ে দেন এই পেসার। ঠিক যেন চিরচেনা বুমরাহর দেখা মিলল।
৪ ওভার। ১ মেইডেন। ১০ রান। ৫ উইকেট। নিতিশ রানা, আন্দ্রে রাসেল, প্যাট কামিন্স, সুনিল নারাইন, শেলডন জ্যাকসনরা দাঁড়াতেই পারেননি বুমরাহর বিধ্বংসী বোলিংয়ের সামনে।
টুর্নামেন্টের প্রথম দশ ম্যাচে মাত্র পাঁচ উইকেট। গড় ছিল ষাটের বেশি। বেশ কয়েক ম্যাচেই বেধরক মার খেয়েছেন। এমন পরিসংখ্যান বুমরাহর নামের পাশে বড্ড বেমানান। বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার, ডেথ ওভার স্পেশালিষ্ট তকমাটা ছিল। প্রায় সব ফরম্যাটেই নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রেখেছেন। খারাপ সময় কম-বেশি সবার ক্যারিয়ারেই আসে। বুমরাহও ক্যারিয়ারে খারাপ সময় পার করছেন। কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়েই নাকি সফলতার দেখা মিলে। কথাটা অনেকটাই সত্য। কঠিন সময়ের মাঝেই সফলতার আলো খুঁজে পেয়েছেন বুমরাহ।
তাঁর সামর্থ্য নিয়ে কারোই প্রশ্ন নেই, ছিলও না। বরং বুমরাহ স্বরূপে ফিরবেন সেটাই ছিল সকলের প্রত্যাশা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বুমরাহর এই ফর্ম অবশ্য ভারতীয় সমর্থকদের কপালেও দাগ কেটেছিল। তবে বুমরাহ দাপটের দেখা মিলল অবশেষে। প্রথম দশ ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেওয়া এই পেসার কলকাতার বিপক্ষে ম্যাচে একাই নিলেন পাঁচ উইকেট।
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট। এর আগে দুইশোর বেশি ম্যাচ খেললেও এই ফরম্যাটে পাঁচ উইকেটের সেই মাইলফলকে পা দিতে পারেননি এই ভারতীয় পেসার। আইপিএল ইতিহাসে ভারতীয় পেসারদের মধ্যে সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ডটাও গড়েন বুমরাহ। এর আগে ২০১১ সালে কোচি টাস্কার্সের বিপক্ষে ইশান্ত শর্মা ১২ রানে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট।
গেল কয়েক আসর ধরেই পনেরোর বেশি উইকেট নিজের নামে করেছেন। তবে এবারের আসরে বল হাঁটছিলেন উলটো দিশায়। সমালোচনাও ছিল। খারাপ সময়ে নিন্দুকদের সমালোচনাটাও স্বাভাবিক। তবে দুর্দান্ত এক স্পেলে আগ্রাসী রূপে প্রত্যাবর্তন হল চিরচেন বুমরাহর। বুমরাহর ফর্মে ফেরা যেন সমর্থক সহ ক্রিকেট বোর্ডের জন্যও স্বস্তির নিঃশ্বাস। টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচগুলো এই ফর্ম ধরে রেখে শেষটা অন্তত ভাল করতেই চাইবেন বুম বুম – বুমরাহ।