ফুলস্টপ পেইন!

স্যাণ্ডপেপার কান্ডে স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নারের নিষেধাজ্ঞার পর খানিকটা ব্যাকফুটেই ছিল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট। ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেলেন অ্যারন ফিঞ্চ। কিন্তু পরবর্তী টেস্ট অধিনায়ক কে হবে তা নিয়েই চলছিল বেশ আলোচনা। হুট করেই টেস্ট দলে ফিরেন টিম পেইন। লম্বা সময় পর ফিরেই পেয়ে গেলেন সাদা পোশাকে অধিনায়কের দায়িত্ব। অভিজ্ঞ এই উইকেটরক্ষকের হাত ধরেই সাদা পোশাকে নতুন শুরু করবে অজিরা।

স্যান্ডপেপার কান্ডের পর অস্ট্রেলিয়া দলটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ঠিক। ২২ গজের দাপটটাও ছিল। অধিনায়ক হিসেবে পেইন বেশ সফলতার ছাপ রাখছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সটা ছিল একদমই সাদামাটা। অধিনায়ক হিসেবেই যেন দলে থাকছেন তিনি; ব্যাট হাতে অধিনায়কচিত কোনো ইনিংসের দেখা মিলছিল না। স্মিথ-ওয়ার্নাররাও নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফিরলেন। তবে ব্যাট হাতে ব্যর্থতার পরেও স্বপদে বহাল ছিলেন পেইন।

এরপর ঘরের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে লজ্জাজনক সিরিজ হারের পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন পেইন। পদত্যাগ করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় তুলেন অজি সমর্থকরা। এরপরই হঠাৎ যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে এই অজি অধিনায়কের উপর। এক তরুণীর করা এই অভিযোগ মাথা পেতে নিয়ে ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়েই অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান টিম পেইন। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারও যে শেষ হয়ে গেছে তাঁর সেটাও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন।

২০০৫ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক; একই বছর ওয়ানডেতেও অভিষেক হয় এই ব্যাটারের। মাত্র ১৬ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে তাসমানিয়ার সাথে চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। ব্র‍্যাড হাডিনের স্থলে ওয়ানডেতে অভিষেক হয়। একই ভাবে ২০১০ সালে হাডিনের ইনজুরিতে ভাগ্য খুলে যায় পেইনের; অভিষেক হয় টেস্টে ক্রিকেটে।

মাত্র তৃতীয় টেস্টেই ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতেই খেলেন ৯২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। পরের টেস্টেও দেখা পান ফিফটির। ভারতের মাটিতে দুই টেস্টে দুই ফিফটির পরেও বাদ পড়েন দল থেকে। ব্র‍্যাড হাডিন থাকায় আর দলে সুযোগ পাননি তিনি। তবে ওয়ানডেতে খেলেছেন বেশ কিছু ম্যাচ। হাডিনের ইনজুরিতে রঙিন পোশাকে অনেকটাই নিয়মিত মুখ ছিলেন তিনি।

অভিষেকের প্রথম দুই বছর রঙিন জার্সিতে বেশ ভাল সময়ই পার করছিলেন। ২৪ ম্যাচে দেখা পান পাঁচ ফিফটির। এরপরই বাদ পড়েন দল থেকে। পিটার নেভিল, ম্যাথু ওয়েডদের ভীড়ে টেস্ট ও ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই সাত বছর আর ফিরতে পারলেন না দলে!

সাত বসন্ত কেটে গেছে। বয়স তখন ৩৪। ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়মিতই খেলছিলেন, ফ্র‍্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বিগ ব্যাশেও বেশ ভালই করছিলেন তিনি। তবে জাতীয় দলে আসার সুযোগ কিংবা সম্ভাবনা কোনোটাই আর ছিল না। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে একপ্রকার দাপট দেখিয়ে উঠে আসেন জাতীয় দলে। বলতে গেলে সাদা পোশাকে উইকেটরক্ষক সংকটেই ভাগ্য খুলে যায় পেইনের।

কিন্তু পেইনের জন্য যেনো পোয়াবারো! প্রত্যাবর্তনের পর পাঁচ টেস্ট খেলার পর সুযোগ পান দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে। আর সেখানেই স্যান্ডপেপার কান্ডে নিষিদ্ধ হলেন অধিনায়ক স্মিথ ও সহকারী অধিনায়ক ওয়ার্নার। ব্যাস অভিজ্ঞতার আলোকে টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব পেয়ে গেলেন পেইন। স্রেফ অভিজ্ঞতাই! কারণ পারফরম্যান্স ছিল একেবারেই সাদামাটা।

সেই সাদামাটা পারফরম্যান্স আর রঙিন হয়নি। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর খেলেছেন ২৩ টেস্ট। এই ২৩ টেস্টে মোটে চার ফিফটি করেন তিনি। মাত্র ২৮ গড়ে ৯০৯ রান করেন অধিনায়ক হিসেবে গুরুদায়িত্ব পাওয়ার পর। তাঁর অধীনে ২৩ টেস্টে দল জয় পেয়েছে ১১টিতে, বিপরীতে হেরেছে ৮ ম্যাচে।

ফিরেছিলেন ওয়ানডেতেও। কিন্তু সেখানেও রাখলেন ব্যর্থতার ছাপ। ৯ ম্যাচে সুযোগ পেলেও মাত্র ২১.৮৬ গড়ে করেন ১৫৩ রান। অধিনায়ক হিসেবে পেইনের অধীনে পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিতেই হেরেছে অজিরা।

অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ দলে অধিনায়কত্ব করেছিলেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার সুযোগ পান তিনি। প্রতিভা ছিল, সামর্থ্য ছিল। কিন্তু সেই সামর্থ্যের সিকিভাগও তিনি জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দিতে পারেননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ ভালই করছিলেন। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে জাতীয় দলে ফিরেছিলেন। সুযোগ পেয়েছিলেন নিজেকে প্রমাণ করার।

অধিনায়কের মুকুট টাও মাথায় তুলেছিলেন; কিন্তু পারেননি নিজেকে প্রমাণ করতে। বরং ব্যর্থতার পাল্লা ভারী করে লজ্জাজনক কান্ডের জন্ম দিয়েই একপ্রকার বিতাড়িত হলেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে আর ঠাঁই মিলল না। সাদামাটা ক্যারিয়ারে যেভাবে শুরু করেছিলেন, ব্যর্থতা আর সমালোচনার বোঝা মাথায় নিয়েই বিদায় নিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link