বাঁ-হাতি স্পিনের ভবিষ্যত

অথর্ব অ্যাঙ্কলেকরের লেগ স্টাম্পের উপর করা বলটা ডাউন দ্য উইকেটে এসে কব্জির মোচড়ে অন সাইডে উঠিয়ে দিয়েই দৌড় – রাকিবুল হাসানের ব্যাটেই প্রথমবারের মত অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল বাংলাদেশ। ভারতীয় যুব দলের স্পিনার রবি বিষ্ণয়ের বলে যেখানে মুখ থুবড়ে পড়েছিল বাংলাদেশ যুবারা – সেখান থেকে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক আকবর আলী। শেষে যখন পরাজয় চোখ রাঙাচ্ছিল – তখন আকবরকে যোগ্য সমর্থন দিয়ে দলের জয়ের বন্দরে নিয়ে যান বাঁ-হাতি স্পিনার রাকিবুল হাসান। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বাঁধাই করে রাখার মত এক মুহূর্ত।

সেবার শিরোপা জয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল এই রাকিবুলের। গ্রুপ পর্বে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে চার উইকেট শিকার করে হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যাজিকেল স্পেলে একাই ধসিয়ে দেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তাঁর পাঁচ উইকেট শিকারে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে বাংলাদেশ।

মোহামেডান ইয়ুথ ক্লাবের হয়ে খেলতেন। সেখান থেকেই বয়সভিত্তিক দলে উঠে আসা। আর দুর্দান্ত বোলিংয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে নিজের জায়গা মেলাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি এই তরুণ তারকার।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্মলগ্ন থেকেই বাঁ-হাতি স্পিনারদের দাপট। যুগে যুগে বহু বাঁ-হাতি স্পিনার জাতীয় দলে এসেছেন, অনেকেই ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন। বাঁ-হাতি ক্রিকেটারদের আতুরঘর বললে ভুল হবে না। বাঁ-হাতি স্পিনারদের মধ্যে বিশ্ব দরবারে সেরাদের কাতারে যেতে পেরেছেন শুধুই সাকিব আল হাসান। সাকিব ছাড়াও দলে এখন নিয়মিত মুখ তাইজুল ইসলাম। তবে গেল বছর দুয়েক ধরেই ঘরোয়া ক্রিকেটে বাঁ-হাতি স্পিনার রাকিবুল হাসানের বেশ নামডাক।

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা স্পিনারের দুর্দান্ত লাইন-লেন্থের পাশাপাশি বলে টার্নও আছে বেশ। উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি কিপটে বোলিংয়ের জন্য বেশ সুনাম এই তরুণের।

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে রূপসি ইউনিয়নের বাঁশটি গ্রামের এক স্কুল রূপসি উচ্চ বিদ্যালয়। এই স্কুল মাঠেই অনেক সময় খেলেছেন রাকিবুল। যদিও পরিবার সমেত ঢাকায় থাকেন তিনি; গ্রামে যাওয়া হয় বছরে বেশ কয়েকবার। ছোট্ট টিনের ঘর। ছেলেবেলায় পড়াশোনার প্রতি খুব একটা মনযোগী ছিলেন না। ক্রিকেট নিয়েই পড়ে থাকতেন তিনি। সেই লক্ষ্যেই মোহামেডান ইয়ুথ ক্লাবে আসে। এরপর সেখান থেকে প্রতিভার সবটা দিয়ে বনে যান বিশ্বকাপজয়ী তরুণ এক তারকা।

২০২১ সালে ঢাকা মেট্রোর হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক। তবে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার বছর দুয়েক আগেই সুযোগ পান লিস্ট-এ ক্রিকেটে। প্রাইম ব্যাংকের হয়ে লিস্ট ‘এ’ তে সবশেষ আসরেও করেছেন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। বল হাতে ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ১৫ ম্যাচে শিকার করেন সর্বোচ্চ ২৯ উইকেট।

২০২০ যুব বিশ্বকাপে খেলার পর ২০২২ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন তিনি। যদিও তাঁর অধীনে বেশিদূর যেতে পারেনি বাংলাদেশ যুবারা।

সাকিবের পর বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে রাকিবুল ছাড়া সম্ভাবনাময় তেমন কেউ নেই বললেই চলে। জাতীয় দলের ভবিষ্যত তারকা তকমাও পেয়েছেন ইতোমধ্যেই। লোয়ার অর্ডারে ব্যাট হাতেও টুকটাক অবদান রাখার সামর্থ্য আছে। বল হাতে এর মধ্যেই যুব বিশ্বকাপ সহ ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে নিজের সামর্থ্য জানান দিয়েছেন এই তরুণ স্পিনার। আপাতত অপেক্ষা সুযোগের; জাতীয় দলে ডাক পাবার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তিনি। সুযোগ পেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও দ্যুতি ছড়াবেন সেই আশা ভক্ত-সমর্থকদেরও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link