পুরনো হতাশার চাদর জড়িয়ে…

ক্লাসে রোল এক হওয়াটা নেহায়েৎ চাট্টিখানি কথা নয়। কঠোর পরিশ্রম আর সাধনার পাশাপাশি ভাগ্যটাও খানিকটা প্রয়োজন। কথায় আছে পরিশ্রমকারীদের সাথে ভাগ্যটাও সহায় হয়। তবে অনেকেই আছেন কঠোর পরিশ্রম করে ভাল ফলাফল করেও শীর্ষে উঠতে পারে না। সেরাদের মাঝে রোল থাকলেও এক আর হয়ে উঠে না।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) সেই অভাগা দলটা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। বছরের পর বছর চেষ্টা করেও শিরোপা জিতেতে পারেনি দলটি। আইপিএলের পনেরো আসর কেটে গেলেও শিরোপা জয়ের স্বপ্নটা এখনও অধরাই রয়ে গেল ব্যাঙ্গালুরুর।

অধিনায়ক বদল, জার্সি পরিবর্তন; নতুন মৌসুম, নতুন কিছু নিয়ম – তবু পুরনো দশা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের পঞ্চদশ আসরে দলটি বিদায় নিয়েছে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রাজস্থান রয়্যালসের কাছে ধরাশায়ী হয়ে।

অবশ্য আগের দুই আসর বিবেচনায় সাফল্যের ক্লাসে খানিকটা উন্নতি হয়েছে ব্যাঙ্গালুরুর। গেল দুই আসরে এলিমিনেটরেই বিদায় নেয় বিরাট কোহলির দল। পঞ্চদশ আসরের আগে অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান এই ভারতীয় তারকা।

নতুন দায়িত্ব সঁপে দেওয়া হয় দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা ফাফ ডু প্লেসিসের উপর। দলটাও আগের চেয়ে বেশ ভাল। দীনেশ কার্তিকের উড়ন্ত ফর্ম, বল হাতে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার ম্যাজিকেল মৌসুম, রজত পাতিদারের উত্থান – তবুও ফাইনালের আগেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় ব্যাঙ্গালুরুর।

উদ্বোধনী আসর থেকে একটা শিরোপার আক্ষেপ। সেই আক্ষেপটা আরও দীর্ঘ হল। বিরাটের ব্যাটে রানের দেখা নেই, কাগজে কলমে বেশ শক্তিশালী দল হওয়া সত্ত্বেও কাটা পড়তে হল কোয়ালিফায়ারে।

টুর্নামেন্টের শুরুটা হয়েছিল হার দিয়ে। পরের ছয় ম্যাচের পাঁচটিতে জয়। পয়েন্টস টেবিলের দুইয়ে উঠে আসে ব্যাঙ্গালুরু। ফাফ ডু প্লেসিস, বিরাট কোহলি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, জশ হ্যাজেলউড, দীনেশ কার্তিক, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাদের নিয়ে গড়া দলটা এবার শিরোপা জয়ের অন্যতম দাবিদার বলা চলে। দুর্দান্ত পারফরম করতে থাকা দলটা মাঝে টানা তিন হারে আবার পিছিয়ে পড়ে।

পরের পাঁচ ম্যাচে আবার চার জয়ে প্লে অফের আশা জাগায় দলটি। তবে শেষ পর্যন্ত মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের কল্যাণে প্লে অফে উঠে আসে ব্যাঙ্গালুরু। এলিমিনেটরে দলের বাকিদের ব্যর্থতার পরেও রজত পাতিদারের অবিশ্বাস্য এক সেঞ্চুরিতে উড়তে থাকা লখনৌকে মাটিতে নামায় প্লেসিস বাহিনী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রাজস্থান রয়্যালসের কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নেয় ব্যাঙ্গালুরু। জশ বাটলারের তাণ্ডবে আবারও কাছে গিয়ে শিরোপা জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয় দলটির।

প্রথম আসরে লিগ পর্বেই বিদায়। পরের বছর ২০০৯ আসরে প্রথমবার শিরোপা জয়ের হাতছানি। ডেকান চার্জারসের কাছে হেরে সেই যে স্বপ্নভঙ্গের শুরু – এরপর আর জোড়া লাগেনি; মৌসুমের পর মৌসুম কেটেছে, শিরোপা আর ধরা দেয়নি ব্যাঙ্গালুরুর হাতে। ২০১১ আর ২০১৬ আসরেও আইপিএলে ফাইনালে পৌঁছেছিল দলটি। কিন্তু কোনো ফাইনালেই ভাগ্য সাথ দেয়নি বিরাট বাহিনীর।

আইপিএলের মঞ্চে গেল কয়েক আসর ধরে অধিনায়ক হিসেবে বিরাট ছিলেন সমালোচিত। চৌদ্দ আসরেও দলকে শিরোপা জেতাতে পারেননি তিনি; সমালোচনা হওয়াটাও স্বাভাবিক। ব্যাট হাতে সময়টা ভাল যাচ্ছে না – পঞ্চদশ আসরে আগে ছেড়ে দিলেন অধিনায়কত্ব।

এবার হয়ত ঘুচবে ব্যাঙ্গালুরুর শিরোপা জয়ের আক্ষেপ। নতুন অধিনায়কের হাত ধরে ভাগ্য বদলাবে দল – এমনটাই প্রত্যাশা ছিল সমর্থকদের। তবে না সেটি আর হয়ে উঠেনি। ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থ ছিলেন বিরাট আর দল আরও একবার ব্যর্থ শিরোপা ছুঁতে – তবে এবার ডু প্লেসিসের হাত ধরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link