ট্র্যাজেডির মোড় ঘুরে স্বপ্নের দুয়ারে
বাড়িতে আগুন। মুহূর্তেই তিলতিল করে গড়ে তোলা সকল স্বপ্নের অবসান। চোখ সেদিন সাগর। অনবরত অথৈ জল প্রবাহ। সেই প্রবাহে গা ভাসিয়ে না দিয়ে লড়াই করার প্রত্যয়ে উজ্জীবিত এক কিশোর, ছোট্ট কিশোর। সে কিশোর এখন রীতিমত পৌঁছে গেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে।
বাড়িতে আগুন। মুহূর্তেই তিলতিল করে গড়ে তোলা সকল স্বপ্নের অবসান। চোখ সেদিন সাগর। অনবরত অথৈ জল প্রবাহ। সেই প্রবাহে গা ভাসিয়ে না দিয়ে লড়াই করার প্রত্যয়ে উজ্জীবিত এক কিশোর, ছোট্ট কিশোর। সে কিশোর এখন রীতিমত পৌঁছে গেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে।
ছয় ফুটের লিকলিকে গঢ়নের এডুয়ার্ডো কামাভিঙ্গা যেন এখন রিয়াল মাদ্রিদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু। অথচ তিনি হয়ত নিজেও জানতেন না তাঁর জীবনটা ঠিক এমন করে বদলে যাবে। তাঁর ঠাঁই হবে তামাম দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ক্লাবগুলোর একটিতে। কামাভিঙ্গা কি কখনও ঠিক এত বড় এক স্বপ্ন দেখেছিলেন?
কামাভিঙ্গার জন্ম আফ্রিকার এক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে। অ্যাঙ্গোলার এক শরণার্থী শিবিরে জন্মেছিলেন ২০০২ সালের নভেম্বরের দশ তারিখে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার এমন নিদারুণ করুণ স্থান বোধকরি আর হয় না। যুদ্ধের ডামাডোলের মাঝেই কামাভিঙ্গা এলেন এই ধরায়। বাবা-মায়ের খুশির এক নতুন বার্তা হয়ে। খানিকটা লড়াই করে যাওয়ার স্পৃহা হয়ে। সে কামাভিঙ্গা এখন নিজেই লড়াইয়ের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন।
সে কাঁধ এখনও বলিষ্ঠ নয়। তবে বলিষ্ঠ তাঁর ফুটবলীয় সকল দক্ষতা। মাথার ভেতর প্রতিটি নিউরনে জায়গা করে নিয়েছে ফুটবলের সকল খুটিনাটি। ছোট্ট এক মস্তিষ্ক। তবুও যেন কত পরিণত। এখন থেকেই তিনি মধ্যমাঠে খেলায় ছড়ি ঘোরান। মাঠের ফুটবলের দিক ঠিক করে দেন। নাবিক হওয়ার দক্ষতা এখনই তাঁর দখলে। তবে মা চেয়েছিলেন ছেলে জুডো খেলুক।
কিন্তু সে মা-ই তাঁকে আবার নিয়ে আসে ফুটবল মাঠে। কেননা মাত্র সাত বছর বয়সে যখন তিনি প্রথম ফুটবলে লাথি মেরেছিলেন ঠিক তখন থেকেই যেন তিনি রীতিমত নিজেকে তারকায় পরিণত করেছেন। প্রথমে পাড়া-মহল্লার এরপর ক্রমশ ফুটবলের পথে হেঁটে গোটা বিশ্বের উদীয়মান তারকাদের একজন। ছেলে বেলা থেকেই বড়দের সাথেই খেলে অভ্যাস তাঁর।
সময়বয়সীরা ঠিক পেরে উঠতো না তাঁর ফুটবলীয় শৈলির সাথে। আর সেখান থেকেই হয়ত মায়ের আন্দাজ। ছেলে হয়ত কিছু একটা করবেন পরিবারের জন্যে, এই ফুটবল খেলেই। ততদিনে ফ্রান্সের রেনেস শহরের একটা দুরবর্তী একস্থানে বসবাস শুরু করে দিয়েছিল কামাভিঙ্গার পরিবার। যুদ্ধ থেকে অনেক দূরে নতুন করে স্বপ্নের ঘর বেঁধেছিলেন বহু কষ্টে।
তবে সে ঘরেই আগুন লেগে যায়। স্বপ্ন চোখের সামনে বিলীন হতে থাকে। কামাভিঙ্গার যখন মাত্র এগারো বছর বয়স ঠিক তখন ঘটে এমন কাণ্ড। অশ্রুসিক্ত নয়নে বাবা-মা ছেলের দিকে তাকিয়ে বলেছিল যে তাদের ছেলে তাদের হয়ে নতুন এক বাড়ি তৈরি করবে। নতুন অনুপ্রেরণা হয়ে গেল সেটিই। এরপর আর থেমে থাকেননি কামাভিঙ্গা। ফুটবলের বুলেট ট্রেনে চড়ে বসে তিনি হাজির হন রেনেস ক্লাবে।
সেখানেই হয়ে যায় রেকর্ড। মাত্র ১৬ বছর চার মাস বয়সেই তিনি রেনেসের প্রথম দলের হয়ে লিগ ওয়ান ম্যাচ খেলতে নামেন কামাভিঙ্গা। এরপর সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে তিনি লিগ ওয়ানে পঞ্চাশ ম্যাচ খেলার কীর্তিও গড়ে ফেলেন কামাভিঙ্গা। এবার তো নিজের ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সুযোগের দ্বারপ্রান্তে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ছুয়ে দেখার সুযোগ তো সবার মেলে না।
আর তাছাড়া স্বপ্ন যাত্রায় তাঁর নামের পাশে তো লা লিগা চ্যাম্পিয়নের গৌরব। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা হয়ত উঠতে পারে কামাভিঙ্গার হাতে। অথচ হয়ত তিনি আজও পরে থাকতে পারতেন অ্যাঙ্গোলার সেই শরণার্থী শিবিরে। নিয়তি তাকে নিয়ে এসেছে বিশ্ব সেরা হওয়ার দুয়ারের চৌকাঠে। শিরোপা এবার না হোক উঠবে নিশ্চয়ই। ধ্রুব তারা হতে আর কতই বা দেরি!