কাকতালিয় এক ঘটনা। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) পঞ্চদশতম আসরের পরিসমাপ্তি ঘটছে আজ। ঠিক বছর ছয়েক আগে ২৯ মে-তেই পর্দা উঠেছিল আইপিএলের নবম আসরের। খানিকটা হকচকিত হওয়ার মতই ঘটনা। আর তেমন কোন কাকতালীয়তার সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
সেবারের আসরের ফাইনাল খেলা দুই দলের কোন দলই নেই এবারের ফাইনালে। সম্ভাবনা একটা অবশ্য ছিল রয়েল চ্যালেঞ্জার্সে ব্যাঙ্গালুরুর। তবে সেটাও আর হয়ে ওঠেনি। রাজস্থান তাদেরকে হারিয়ে প্রথম আসরের পর আবারও উঠল ফাইনালে। তবে সেসব গল্প হবে আরেকদিন।
আজকের গল্পের পুরোটা জুড়েই থাকছে ২৯ মে ২০১৬ সালে হয়ে যাওয়া আইপিএল ফাইনাল। সেবার রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। সে কি এক ম্যাচ! ৪০০ এর বেশি রান হয়েছিল চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে। ভাবা যায়। দুই দলের ব্যাট সেদিন পরিণত হয়েছিল তরবারিতে। প্রতিপক্ষের ছোড়া প্রতিটি বল যেন সেদিন কেটে কুটে হয়েছিল কয়েকশ টুকরো।
সেবারের আসরে ফাইনালের পথটা সানরাইজার্সের জন্যে মোটামুটি সুগম থাকলেও বাঙ্গালুরুর জন্যে ছিল কণ্টকাকীর্ণ এক পথ। ব্যাঙ্গালুরু তাদের যাত্রা শুরু করেছিল প্রথম সাত ম্যাচে মাত্র দুইটি ম্যাচের জয় দিয়ে। একটা সময় যখন তাদের প্লে-অফ খেলা নিয়েই তৈরি হয়েছিল শঙ্কা সে সময় দলকে খাদের কিনারা থেকে তুলে ধরেছিলেন বিরাট কোহলি।
সেবারই প্রথম আইপিএলের এক আসরে কোন এক ব্যাটার করেছিলেন চার সেঞ্চুরি। আর ঠিক একই ঘটনার পুনঃরাবৃত্তি ঘটালেন এবারের আসরে রাজস্থান রয়্যালসের ওপেনিং ব্যাটার জস বাটলার। বিরাটের সে রেকর্ডে এখন ভাগ রয়েছে তাঁরও। সে যাই হোক। কিন্তু আখেরে শিরোপা ছোঁয়াটা আর হয়ে ওঠেনি ব্যাঙ্গালুরুর। মাত্র আট রান দূরেই থেকে যায় অধরা।
অন্যদিকে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ একটা ‘রোলার-কোস্টার’ যাত্রা শেষে তিন নম্বর অবস্থানে থেকে খেলেছিল প্লে-অফ। দ্বিতীয়তে থাকা ব্যাঙ্গালুরুর সাথে পয়েন্টের ব্যবধান ছিল না। ব্যবধান ছিল শুধুই নেট রান নেটের। সানরাইজার্সের ফাইনালে উঠতে ব্যাট হাতে ডেভিড ওয়ার্নার ও বল হাতে ভুবনেশ্বর কুমার এবং তরুণ মুস্তাফিজুর রহমানের অবদান যেন অবহেলা করবার উপায়ই নেই।
প্রথমবারের মত আইপিএলে খেলতে গিয়ে বাজিমাত করেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। হয়েছিলেন আসরের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়। তিনি আর ভুবনেশ্বর জুটি বেঁধে নিয়েছিলেন মোট ৪০টি উইকেট। সেটাই যেন সবচেয়ে বেশি সহয়তা করেছিল হায়দ্রাবাদকে নিজেদের প্রথম শিরোপা ঘরে তুলতে।
ফাইনালের দিন টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল হায়দ্রাবাদ অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। নিজের সিদ্ধান্ত ভুল নয় তা প্রমাণ করতেই তিনি করেছিলেন ৩৮ বলে ৬৯ রান। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের ব্যাটিং ইনিংসের শেষের দিকে বেন কাটিংয়ের ১৫ বলে ৩৯ রানের ঝোড়ো ইনিংসের সুবাদে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ২০৯ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেয় ব্যাঙ্গালুরুকে।
জবাবে ব্যাট করতে নামা ক্রিস গেইল ও বিরাট কোহলি জুটিই যেন ম্যাচ শেষ করে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। প্রায় দুইশ স্ট্রাইকরেটে গেইল করেছিলেন ৭৬ রান। অপরদিকে ৫৪ রান এসেছিল বিরাটের ব্যাট থেকে। এই দুইজনের জুটি যখন ভাঙ্গে তখন বোর্ডে রান ১০.৩ ওভারে ১১৪। সবাই হয়ত ভেবেই নিয়েছিল যে শিরোপা উঠতে চলেছিল বিরাটের হাতে।
না তেমনটা আর হয়নি। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ বোলাররা গেইলের বিদায়ে যেন নতুন এক প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে যায়। তাঁরা নিজেদেরকে ফিরে পেতে শুরু করে। অপরদিকে ভিন্ন চিত্র ব্যাঙ্গালুরু শিবিরে। গেইলের প্রস্থানের পর যেন তাসের ঘরে পরিণত হয় ব্যাঙ্গালুরু। একের পর এক উইকেট যেতে থাকে তাঁদের। শেষমেশ ২০০ রানই সংগ্রহ করতে পারে তাঁরা।
সে ম্যাচে মুস্তাফিজ খানিকটা খরুচে থাকলেও শেন ওয়াটসনের মত গুরুত্বপূর্ণ এক উইকেট তুলে নিতে সক্ষম হন। সে সুবাদে প্রথমবারের মত সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ আইপিএলের শিরোপা ঘরে তোলে। আর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স হায়দ্রাবাদের অপেক্ষার প্রহর আরও বেশি সুদীর্ঘ হয়।
তবে, সেই একটা ম্যাচ দিয়ে তো আর বোঝা যাবে না, গোটা আসর জুড়েই মুস্তাফিজ ছিলেন বল হাতে আনপ্লেয়েবল। ১৬ ম্যাচে ১৬ উইকেট নেন তিনি। ইকোনমি ছিল মাত্র ৬.৯০! গড় ২৫-এর নিচে।