‘বাংলাদেশি’ রবিনের লর্ডস টেস্ট দর্শন

লর্ডসে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের লড়াইয়ের প্রথম দিন। ৩৮ তম ওভারে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে ইংল্যান্ডের হয়ে মাঠে নামলেন এক তরুণ। জার্সিতে নাম কিংবা কোনো নম্বর নেই! ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে চেহারাটাও একেবারে নতুন। মাত্র চার বলের জন্য মাঠে ছিলেন এরপরই আবার উঠে গেলেন।

কিন্তু, এই তরুণকে নিয়ে যেন এখন আলোচনার শেষ নেই। বিশেষ করে বাংলাদেশের মাটিতে। কারণ, এই তরুণের গায়ে যে বইছে বাংলাদেশের রক্ত! ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে দ্বাদশ ক্রিকেটার হিসেবে ‘অভিষেক’ হয়েছে বাংলাদেশি বংশদ্ভূত রবিন জেমস দাসের।

নতুন কোচ আর নতুন অধিনায়কের অধীনে নতুন উদ্যমে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে মাঠে নেমেছে ইংল্যান্ড। প্রথম দিনে প্রথম ইনিংসের ৩৮তম ওভারে চোট পান ম্যাথু পটস। বদলি ফিল্ডার হিসেবে মাঠে নামলেন ২০ বছর বয়সী তরুণ রবিন দাস। এই রবিন দাস বাংলাদেশি বংশদ্ভূত। অবশ্য তিনি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের স্কোয়াডেও ছিলেন না। বিপাকে পড়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই তাকে নামাতে হয় মাঠে।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দলটা ছিল মাত্র ১৩ সদস্যর। অর্থাৎ মাত্র দুইজন অতিরিক্ত খেলোয়াড় ডাগ আউটে ছিলেন। প্রথম টেস্টের মূল একাদশে জায়গা না পাওয়া দুই ক্রিকেটার হ্যারি ব্রুকস ও ক্রেইগ ওভারটন অবশ্য দুইজনের বদলি হিসেবে আগে থেকেই ছিলেন মাঠে।

৩৮ তম ওভারে পটসের চোটের কারণে বদলি হিসেবে নামানোর কেউই ছিল না। ঠিক তখন-ই বাধ্য হয়ে তরুণ রবিন দাসকে পাঠানো হয় ফিল্ডিংয়ে। আসলে দ্বাদশ সদস্য হিসেবে কাউন্টির তরুণদের নামানোর রেওয়াজ ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায় বেশ পরিচিত রীতি। সেই সুবাদেই টেস্ট দর্শন হল রবিনের।

রবিন দাস – ক্রিকেট ভক্তদের জন্য একেবারেই অপরিচিত এক নাম। তবে বাংলাদেশি ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে একদিনের ব্যবধানে এই নামটা এখন বেশ পরিচিত। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রবিনকে নিয়ে বাংলাদেশি সমর্থকদের মাতামাতি চোখে পড়ার মত।

রবিন দাসদের পৈত্রিক নিবাস সুনামগঞ্জের ছাতকে। তাঁর বাবা মৃদুল কান্তি দাস ছাতকের বাসিন্দা। মৃদুল ইংল্যান্ডে পারি জমিয়ে সেখানেই স্থায়ী হয়েছেন তিনি। ইংল্যান্ডের লেটনস্টোনে ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেয় মৃদুল দাসের দ্বিতী‍য় ছেলে রবিন। রবিনের বড় ভাই জোনাথন জয় দাস সুনামগঞ্জ জেলা অনূর্ধ্ব ১৬ দলে খেলেছেন, খেলেছেন কাউন্টি ক্রিকেটও। জয় উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে খেলেছেন এসেক্স অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে।

বয়সভিত্তিক দলগুলোতে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত পারফরম করে রবিন ২০২০ সালে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট ভাইটালিটি ব্লাস্টে খেলেন। তবে, সুযোগ পান মাত্র এক ম্যাচে। ওই ম্যাচ খেলে সাসেক্সের বিপক্ষে করেছিলেন মোটে সাত রান।

২০১৮ সালে এসেক্স কাউন্টি ক্লাবের অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান রবিন। এক টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে এই ইনিংস খেলেন রবিন। তখন-ই তাঁকে ইংল্যান্ডের ভবিষ্যত তারকা তকমা দেওয়া হয়।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বাদশ ক্রিকেটার হিসেবে নিজের অভিষেকে মাঠে মাত্র চার বল স্থায়ী হয়েছিলেন রবিন। ওই ওভার পরই স্টুয়ার্ট ব্রড মাঠে ফেরায় প্যাভিলিয়নে ফেরত যান এই তরুণ ক্রিকেটার।

২০২০ বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ড্রাফটে তিনি নাম দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো দলই তাকে নিতে আগ্রহ দেখায়নি। অন্যান্য ক্রিকেটারের মত রবিনের স্বপ্নটা বেশ বড়। বাংলাদেশ দলের হয়েও খেলার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। আর সেই থেকেই টি-টোয়েন্টি কাপে নাম দিয়েছিলেন।

বছর দুই বাদে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বাদশ ক্রিকেটার হয়ে তিনি মাঠে নেমেছেন। এখন হয় ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে জড়ানোর স্বপ্নটা জাপ্টে ধরেছে এই তরুণকে। তবে এর জন্য পাড়ি দিতে হবে লম্বা পথ, ঘরোয়া ক্রিকেটে ধরে রাখতে হবে বয়সভিত্তিক দলের সেই ধারাবাহিক পারফরম্যান্সটা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link