দাদা, ধোঁয়াশা ও ধাঁধা

দশ লাইন আর প্রায় শ’খানেক শব্দ। জুনের প্রথম দিন। বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল সৌরভ গাঙ্গুলির এক টুইট। মিনিট ত্রিশ না পেরোতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সৌরভের পদত্যাগ বার্তায় সয়লাব। বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন ‘প্রিন্স অব কলকাতা’ খ্যাত সৌরভ গাঙ্গুলি – এমন খবরে ক্রিকেট পাড়ায় বেশ হৈচৈ।

কেউ কেউ বলছেন রাজনৈতিক দল বিজেপিতে যোগ দিতেই সৌরভের এমন সিদ্ধান্ত। তবে এই টুইটের ঘন্টা খানেকের মাঝে বিসিসিআই’য়ের সচিব জয় শাহের টুইট বার্তায় জানা গেল ভিন্ন খবর। সৌরভ গাঙ্গুলি বিসিসিআই’র সভাপতি পদ থেকে অবসরে যাচ্ছেন না।

একজন সাবেক প্রতিভাবান অলরাউন্ড ক্রিকেটার, ভারতের একজন অধিনায়ক, ধারাভাষ্যকার, গেম-শো সঞ্চালক, বিভিন্ন নামি-দামি ব্র‍্যান্ডের পরিচিত মুখ, পরামর্শক, বিসিসিআই’র সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি যে একটি স্বপ্নের টিজার টুইট রচনা করতে পারেন – যা কিনা আধুনিক মার্কেটারদের হাঁটু কাপিয়ে দিতে পারে; সেটা গাঙ্গুলির সমর্থকরা জানতেন না।

আইপিএল শেষ হয়েছে সপ্তাহখানেকও হয়নি। ক্রিকেট পাড়ায় সময়টাও একদমই শান্ত ছিল বলা যায়। ঠিক তখন-ই সৌরভের এক টুইটে হৈচৈ অবস্থা পুরো ক্রিকেট পাড়ায়। তাই আবার রহস্যে ঘেরে এক টুইট। শ’খানেক শব্দের মাঝে যেন কিছু একটা রহস্য লুকানো আছে। ঘন্টা খানেকের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত খবর বনে গেল সৌরভের দশ লাইনের এক টুইট।

রাজনীতিবিদদের সাথে বেশ মেলামেশা, ক্রিকেট থেকে সরে যাওয়ার বেশ কিছু গুঞ্জন – সব মিলিয়ে সৌরভের টুইটে যে গুঞ্জন কিংবা অনুমান সমর্থকরা করেছিলেন, এমন কিছুই নয়! পরবর্তীতে আরেক সাক্ষাৎকারে সেটি স্পষ্ট করেন সৌরভ।

নিজের টুইট বার্তায় সৌরভ লিখেছিলেন, ‘ ১৯৯২ সালে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরুর পর কেটে গেছে ৩০ বছর। ক্রিকেট আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছে। সবথেকে বড় বিষয় ক্রিকেট আমাকে সকলের সমর্থন জুগিয়েছে। এই যাত্রায় যারা আমাকে সমর্থন করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আজ এমন কিছু শুরু করতে চলেছি, যার মাধ্যমে হয়ত অনেকের উপকার হবে। আমি আশা করি ভবিষ্যতেও আপনাদের কাছ থেকে এমন সমর্থন পাবো। ‘

সব ধোঁয়াশা খোলা হল সৌরভের পরবর্তী সাক্ষাৎকারে। এক দল বাঙালি সমর্থকদের ভীড়! ‘এটা কি মহারাজের গুগলি ছিল তাহলে?’ – একটু হাসি টেনে সৌরভ হয়ত বলবেন, ‘এই টুইট ছিল একটা শিক্ষামুলক অ্যাপ চালু করার ব্যাপারে। এটা খুব সাধারণ একটা টুইট ছিল। এখানে পদত্যাগ করার কিছুই নেই।’

মূলত তারকারা ভাল করেই মার্কেটিং কৌশলের ব্যাপারটা জানেন। সৌরভও বিপরীত নন। এই টুইটের পেছনে ছিল মার্কেটিংয়েরই একটা কৌশল। যার মাধ্যমে তিনি জানান দিলেন শিক্ষামূলক এক অ্যাপের।

এই গুঞ্জনের পরদিনই আরেক টুইট বার্তায় সৌরভ লিখেছিলেন, ‘আমি একটা নতুন শিক্ষা অ্যাপ চালু করছি। সে ব্যাপারে শিক্ষক সহ অনেকের সাথে কথা বলেছি। আগের টুইটে আমার অবসরের গুঞ্জনের কথা শুনে বেশ অবাক হয়েছি। আমার পদত্যাগ করার কিছুই আমি বলিনি।’

বিসিসিআই’র সভাপতির এমন ধাঁধা কিংবা মার্কেটিং কৌশল অনুসরণ করাটা কতটা ঠিক ছিল সে নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠছে।

  • অনুমান নির্ভর

সৌরভ টুইট বেশ দারুনভাবে সেটা-আপ করা ছিল। উল্লেখ করা বছরগুলো একটা ভিন্ন অনূভুতি জানান দিচ্ছিল। উদযাপনের মূহুর্তগুলোর স্মৃতি – সব কিছুই জীবনের পরবর্তী ধাপে যাওয়ার একটা ইঙ্গিত। এই সবকিছুর পর ‘ধন্যবাদ’ ব্যাপারটা বিদায়ী বক্তৃতার একটা অংশ।

‘জার্নি’ শব্দটা ছাড়া কোনো আনুষ্ঠানিত বিদায় সম্পূর্ণ হয় না। সৌরভ অবশ্য এদিক থেকে ভাল কৌশল অবলম্বন করেছেন। সৌরভের টুইটে ধোঁয়াশার আরেক কারণ ছিল কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা এই সফরের সঙ্গী হয়েছে। আমি আজ যেখানে পৌঁছেছি – সেখানে যেতে সাহায্য করেছেন।’ এই দুই লাইনেই সবাই ভেবে নিয়েছিল এটি সৌরভের বিদায় বার্তা।

সৌরভের টুইটের স্পষ্ট ছিল তিনি ক্রিকেট ছেড়ে অন্য কিছুতে যাচ্ছেন। আর সেটা নিশ্চয়ই রাজনীতি? ক্রিকেট থেকে রাজনীতিতে যাচ্ছেন এমনটাই সবাই ভেবে ফেলেছিলেন। শেষ দুই লাইনে তিনি লিখেছিলেন, ‘আনি আশা করি আমার জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ে আপনাদেরকে আমার পাশে পাবো।’ এই লাইনের অর্থ আর কি-বা হতে পারে?!

সৌরভের উদ্দেশ্যে ছিল একরকম, কিন্তু তিনি মার্কেটিং কৌশল অবলম্বন করে ভিন্ন ইঙ্গিত দিতেই এই আঙ্গিকে টুইট করেন। চালু করেছেন একটি শিক্ষামূলক অ্যাপ।

  • দ্রুত অস্বীকার

সৌরভের টুইটের পরই সাংবাদিকরা সৌরভ সহ বিসিসিআইতে যোগাযোগ করলেও অনেক কর্মকর্তাই ফোন ধরেননি। তবে ঘন্টা কয়েকের মাঝেই বিসিসিআই’র সচিব জয় শাহের টুইট! সেখানে স্পষ্ট করে তিনি বলেন, ‘সৌরভের ব্যাপারে যে গুঞ্জন ছড়িয়েছে সেটি সত্যি নয়। আমরা ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যত নিয়েই ভাবছি এখন।’

সৌরভের এই টুইট নিয়ে এখনও আলোচনার শেষ নেই। শিক্ষা অ্যাপ নিয়ে এমন টুইট করলেও – তার মত একজন সাবেক ক্রিকেটার, বিসিসিআই সভাপতি কেন এমন ভিন্ন কৌশলে ধোঁয়াশা রেখে টুইট করলেন সে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে অনেক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link