বাংলাদেশ কেন ‘রুট’ পায় না!

হুট করে ব্যাটিং অর্ডার হুড়মুড় করে গুটিয়ে যাওয়া। ওভারের পর ওভার, সেশনের পর সেশন বোলিং করেও উইকেট না পাওয়া। এসব তো বাংলাদেশ ক্রিকেটের টেস্ট দলের নিত্যদিনর ঘটনা। দীর্ঘ দুই দশক ধরে সাদা পোশাকের ক্রিকেটটা আমরা খেলি। আমাদের উন্নতি তবু হয় না।

এর দায় পুরোটাই কি আমাদের কিংবা আমাদের ক্রিকেটারদের? না। পুরো দায় আমাদের কারওই নয়। দায়টা খানিকটা আইসিসির। পরিসংখ্যান দিয়ে যদি একটু বিবেচনা করি তবে হয়ত বিষয়টা আরও একটু স্পষ্ট হবে। সেক্ষেত্রে ইংল্যান্ড হতে পারে একটা মানদণ্ড কিংবা তাদের খেলোয়াড়দের।

এই যেমন জো রুটের কথাই ধরুণ। এই সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে যে ক’জন ব্যাটার রয়েছেন তাদের মধ্যে উপরের দিকেই থাকছেন তিনি। কি এক দূর্দান্ত বছরও কাটিয়েছেন তিনি ২০২১ সালে। ছিলেন টেস্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। এই জো রুটের অভিষেক হয় ২০১২ সালে। এরপর তিনি প্রায় ২১৮টি টেস্ট খেলেছেন। অথচ তাঁর থেকেও বছর সাতেক আগে অভিষেক হয় মুশফিকুর রহিমের। তাঁর খেলা ম্যাচের সংখ্যা দেড়শ থেকে এক বেশি।

আবার আমাদের অন্যতম সফল ব্যাটার তামিম ইকবালের পরিসংখ্যানও যদি ঘেটে দেখা যায় তবে সেখানটায় ১২১ খানা ম্যাচের হিসেব মিলবে। তাঁর অভিষেক হয় ২০০৮ সালে। ঠিক এখানটায় বোঝা যায় আমরা টেস্ট ক্রিকেটে ঠিক কতটা অবহেলিত। অবহেলার স্বীকার হয়ে আমরা রয়েছি ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা হওয়া থেকে বেশ দূরে।

সাকিব আল হাসান, নিঃসন্দেহে আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের একজন। তবে তিনি সর্বকালের সেরাদের একজন হতে পারছেন না। কারণ, তিনি ম্যাচ খেলার সুযোগ কম পেয়েছেন। বেন স্টোকসের কথাই ধরা যাক। ২০১৩ সালে তিনি আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে পদার্পণ করেন। তাঁর খেলা টেস্ট ইনিংসের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে সাকিব আল হাসানকেও।

অথচ সাকিবের অভিষেক হয় ২০০৭ সালে। সাকিবের থেকে প্রায় ৩৬ ইনিংস বেশি খেলে স্টোকসের রান এখন ৫১১৬। অন্যদিকে সাকিবের রান ৪১১৩। সর্বসাকুল্যে সাকিব আর বিশ খানা ইনিংস হয়ত খেলতে পারতেন। সে আবার অন্য আলাপ। তবে সে আলাপকে একটু পাশ কাটিয়ে আবার ফেরা যাক মূল আলোচনায়। এই যে আমরা ম্যাচ কম খেলতে পাই। আমরা সুযোগ কম পাই এটাই কি আমাদের টেস্ট দলের এমন বাজে পারফরমেন্সের পেছনের কারণ নয়?

এটা অনেক বড় একটা কারণ। আপনি আমি অথবা আমরা কি বিশ্বাস করি না সাকিব বিশ্বমানের? অবশ্যই করি। সাকিব সেটা প্রমাণ করেছেন। তবে নিজের সেরা সময়ে ম্যাচ খেলার সুযোগটাই পাননি গোধুলী লগ্নে পৌঁছে যাওয়া সাকিব। নতুবা তাঁর উইকেটের সংখ্যা আরও বেশি থাকতে পারত। ১২৮ ইনিংস বল করে স্টোকস নিয়েছেন ১৭৫ উইকেট।  পক্ষান্তরে সাকিব ১০৩ ইনিংসে নিয়েছেন ২২৪ উইকেট। এমনটা হওয়ার পেছনে ঐ যে ম্যাচ খেলার সুযোগের অভাব।

তাছাড়া আরও এক জায়গায় আমরা বঞ্চিত। আমাদের ক্রিকেটের ইতিহাসে গেল প্রায় কুড়ি বছরে একটি টেস্টও খেলার সুযোগ হয়নি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। সেই সাথে শেষ ১২ বছর আগে ইংল্যান্ড লাল বলের ক্রিকেটে আমাদেরকে আতিথেয়তা দিয়েছে। এখন তাঁরা যে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম দুই পরাশক্তি সে বিষয়ে তো দ্বন্দের অবকাশ নেই। এই দুই দলের সাথে তাদের কন্ডিশনে গিয়ে টেস্ট খেলার সুযোগ মেলেনা আমাদের। তাহলে ঠিক কি করে আমাদের টেস্টে উন্নতি হবে?

আমরা একটা পঞ্জিকাবর্ষে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই হাতে গোনা। একটা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ চলে। বলা হয় তা লীগ সিস্টেমে চলে। তবে এখানে সবদল সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় না। আবার সব দলের সাথে মুখোমুখি হওয়ার সুযোগও মেলেনা। উদাহরণস্বরূপ ভারত-পাকিস্তান। এই জায়গায় আইসিসির খামখেয়ালী তো স্পষ্ট। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বিষয়টা কাগজেই থেকে যাচ্ছে।

আইসিসির এমন খামখেয়ালীপনা থেকে বেড়িয়ে আসাটা ক্রিকেটে ও বিশেষ করে বাংলাদেশের মত দলগুলোর জন্য জরুরী। ক্রিকেটটা হোক সবার জন্যই। বড় দল ছোট দলের মধ্যে ভেদাভেদটা একটু কমে আসা দরকার। ম্যাচ হোক সমান সমান। শেখা হোক, এগিয়ে যাওয়া হোক। সবার প্রত্যাশা তো সেটুকুই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link