কন্টক মুকুটের নয়া হকদার

নবাগত একটা দল, সেই দলের দায়িত্বে আনকোড়া একজন অধিনায়ক; যিনি নিজের ক্যারিয়ারে কখনো অধিনায়কের টুপি মাথায় তুলেননি। টুর্নামেন্টের আগে তাই আলোচনা-সমালোচনা ছিল হার্দিককে নিয়ে। অফ ফর্মে ছিলেন, চিরচেনা মারকুটে পান্ডিয়ার দেখা মিলছিল না – এর মধ্যেই আবার গুরুদায়িত্ব। প্রশ্ন উঠেছিল ফর্মহীনতা, প্রথমবার অধিনায়কত্ব, নতুন দল, ইনজুরি সমস্যা – হার্দিক কতটা সামাল দিতে পারবেন?! তবে হার্দিক সবটা সামলেছেন সমান ভাবে।

সবার প্রত্যাশা, ভাবনা-চিন্তা, সমালোচনা ছাপিয়ে প্রথম আসরেই গুজরাট টাইটান্সকে শিরোপা জেতান হার্দিক পান্ডিয়া। ব্যাট হাতেও ছিলেন দলের সেরা খেলোয়াড়। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং আর অধিনায়কত্ব – সব মিলিয়ে এবারের আসরের অন্যতম সেরা তারকা ছিলেন তিনি।

এই মেগা আসর দিয়ে অধিনায়ক হিসেবে পান্ডিয়া অধ্যায়ের নতুন শুরু। আইপিএলের পঞ্চদশ আসরের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক ছিলেন। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং ছাপিয়ে অধিনায়ক পান্ডিয়া এবার বিশেষ নজর কেড়েছেন সবার। সেই যাত্রায় এবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও অধিনায়কের দায়িত্ব পেলেন এই অলরাউন্ডার।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মত তিনি অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আইপিএলের সেই ফর্ম আর সফলতা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ধরে রাখতে চাইবেন এই তারকা অলরাউন্ডার।

টেস্ট খেলতে ইংল্যান্ড সফরে থাকায় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে রোহিত শর্মা, ঋষাভ পান্ত, শ্রেয়াস আইয়দের দেখা মিলবে না। যার কারণে অধিনায়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হতে যাচ্ছে হার্দিকের।

আইপিএলে প্রথমবারের মত অংশ নেয় গুজরাট টাইটান্স। সবার ভাবনা ছাপিয়ে অধিনায়ক হিসেবে নাম ঘোষণা হয় হার্দিকের। এরপর দেখা মিলে এক ভিন্ন হার্দিক পান্ডিয়ার। ১৪ ম্যাচে হার্দিকের অধীনে দল জয় পেয়েছে ১০ ম্যাচে। ফাইনালে হার্দিকের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে জয় পায় দল, ম্যাচ সেরাও হন তিনি।

ভারতের ভবিষ্যত অধিনায়ক হিসেবে লম্বা সময় ধরেই শোনা যাচ্ছিল উইকেটরক্ষক ব্যাটার ঋষাভ পান্তের নাম। আইপিএলেও তিনি অধিনায়কত্ব করছেন দুই মৌসুম ধরে, অভিজ্ঞতাও আছে বেশ। সেই সাথে নতুনদের মাঝে বিবেচনায় ছিলেন শ্রেয়াস আইয়ারও। তবে, আইপিএলের এবারের আসরের শেষে অধিনায়ক হিসেবে সকলের ভাবনায় জায়গা করে নিয়েছেন হার্দিকও। অধিনায়ক হিসেবে তাঁর সামর্থ্য ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। এবার পালা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অধিনায়ক পান্ডিয়াকে প্রমাণের।

নতুন এক চ্যালেঞ্জ। তবে প্রতিপক্ষ বিবেচনায় এবারের চ্যালেঞ্জটা আরেকটু সহজ বলা চলে। যদিও জাতীয় দলের মঞ্চে সফল হতে কাঠ-খড়টা একটু বেশি পোড়াতে হবে হার্দিককে। যদিও ভারতের শক্তিশালী স্কোয়াডের সামনে আয়ারল্যান্ড প্রতিরোধ গড়তে পারবে কি-না সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

আইপিএলের মেগা মঞ্চে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের পর হার্দিকের সামনে এবার জাতীয় দলে অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রমাণের পালা। এই যাত্রায় নজরকাড়া কিছু দেখাতে পারলে, ভবিষ্যত অধিনায়ক হিসেবে পান্ত, আইয়ারদের চেয়ে খানিকটা এগিয়ে যাবেন সেটা কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলা যায়।

২৬ জুন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মালাইহাডে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামবে ভারত। এরপর ২৮ জুন একই ভেন্যুতে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ খেলবে দুই দল। দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে হার্দিকের ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন পেসার ভুবনেশ্বর কুমার।

ভারতের অধিনায়কত্ব সহজ নয়। বিশেষ করে, এই দায়িত্বে জয় আসতে থাকলে কোনো সমস্যা নেই, কোনো প্রশংসার বানীও নেই। কিন্তু, একবার পরাজয় এলেই সব বেঁকে বসবে। পায়ের নিচ থেকে সরে যেতে পারে মাটি। সেজন্যই তো এই দায়িত্বটা নেওয়া মানেই কাঁটার মুকুট পরা। সেই মুকুট এখন হার্দিকের মাথায়, হোক সেটা ক’দিনের জন্যই, তারপরও চাপটা নিশ্চয়ই টের পেতে শুরু করেছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link