শুভ্র স্বপ্নে মেঘের ঘনঘটা

ঐতিহ্য আর অর্জনে একটা মাপকাঠি করা দরকার। যদি রিয়াল মাদ্রিদকে ফুটবলের সেই মাপকাঠি করা হয় তবে নিশ্চয়ই ভুল কিছু হবে না। ক্লাবটির ইতিহাস তো সবদিক থেকেই সমৃদ্ধ।.৯৪ খানা শিরোপা নিজেদের দখলে রেখেছে ক্লাবটি। প্রায় প্রতিটা খেলোয়াড়ের স্বপ্ন সাদা রাঙা জার্সিটা পরে একবার অন্তত একখানা শিরোপা ছুঁয়ে দেখা।

তবে সে রাজকপালটা সবার থাকে না। রাজকীয় ক্লাবের জার্সিতে সবাই নিজেকে ঠিক মেলেও ধরতে পারেন না। ইতিহাস ঘাটলে এমন অনেক উদাহরণ খুঁজে পেতেও কষ্ট হওয়ার কথা নয়। এই যে যেমন ইংলিশ ডিফেন্ডার জনাথন উডগেট। নিজের সময়ে একজন দূর্দান্ত ডিফেন্ডার বলেই বিবেচিত হতেন তিনি। তাইতো রিয়াল মাদ্রিদে ঠাঁই হয়েছিল তাঁর।

তবে রিয়ালের ইতিহাসে একজন ‘ফ্লপ সাইনিং’ হিসেবেই রয়ে যান উডগেট। আর চার-পাঁচটা ফুটবলারদের মত ছোট বেলা থেকেই ফুটবলের দিকে একটা বাড়তি ঝোক অনুভব করতেন উডগেট। খুব ছোট বেলাতেই তিনি স্থানীয় অপেশাদার ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন। তবে প্রতিভা তো আর লুকিয়ে রাখা যায় না। দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়ে সামনে আসতে যেন বাধ্য।

সেটাই হল। উডগেটের প্রতিভার ঝলক তাকে নিয়ে আসে ইংলিশ ক্লাব মিডলসবার্গে। সেখান থেকেই মূলত ইউরোপীয় ফুটবলে নিজের অস্তিত্বের জানান দিতে শুরু করেন। যুব পর্যায়ে একজন শক্তপোক্ত সেন্টার ব্যাক হিসেবে নজর কাড়েন। নব্বই দশকের প্রভাবশালী ক্লাব লিডস ইউনাইটেড নিজেদের যুব দলের ভেড়ায় তাকে। মূলত লিডস ইউনাইটেড তখন পরাশক্তি হওয়ার নেশায় মত্ত।

আর অন্যদিকে নিজের সামর্থ্যের সবটুকু নিঙড়ে দিতে ব্যস্ত উডগেট। অল্প সময়ের মধ্যেই লিডসের মূল দলে জায়গা করে নেন তিনি। ভরসার একটা স্তম্ভ বনে যেতেও কালক্ষেপণ করেননি উডগেট। একেবারে একরোখা ডিফেন্ডার। তাঁর সামনে থেকে বল নিয়ে যেন আক্রমণে ঢোকাই ছিল প্রায় অসম্ভব। লিডসে থাকতেই তিনি বিবেচিত হতে থাকেন অন্যতম সেরা ডিফেন্ডারদের একজন।

তবে লিডসের সাথে খুব বেশিদিন থাকা হল না তাঁর। ক্রমাগত পতনের ফলে ক্লাব ছাড়তে বাধ্য হন উডগেট। তাঁর নতুন ঠিকানা হয় ইংল্যান্ডেরই আরেক ক্লাব নিউক্যাসেল ইউনাইটেড। সেখানে তিনি নিজেকে পূর্ণ ফোঁটা এক ফুলে পরিণত করেন। সুবাস ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ইউরোপের ফুটবল পাড়ায়। নিউক্যাসেল থেকে তাঁর জায়গা হয় লস ব্ল্যাঙ্কোস ডেরায়।

ঠিক তখন অবধি খুব বাজে রকম ইনজুরির সম্মুখীন হতে হয়নি উডগেটকে। তবে রিয়াল মাদ্রিদের সাথে যোগসূত্রই যেন তাঁর জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। হঠাৎ করেই নিউক্যাসেলের হয়ে খেলা শেষ ম্যাচে বাজে রকম ইনজুরি আক্রান্ত হন। মাদ্রিদে তিনি পা রাখেন ইনজুরি নিয়েই। আর সেখান থেকেই শুরু। সম্ভাবনাময় এক ক্যারিয়ারে আঘাত হানে ইনজুরি। ফুটবলারদের ক্যারিয়ারের ‘ক্যান্সার’।

তবে ইনজুরি সামলানোর পাশাপাশি তাকে আরও এক চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছিল। রিয়াল মাদ্রিদের মূল একাদশে জায়গা করে নেওয়ার। পেশি ছিঁড়ে যাওয়ার মত কঠিন এক ইনজুরির কারণে তিনি পুরো একটা বছর কাটিয়ে দেন অভিষেকের আশায়। অন্যদিকে, দলে থাকা বাকি ডিফেন্ডাররা নিজের জায়গা আরও বেশি পাকাপোক্ত করেতেই যেন ব্যস্ত। এর মাঝে আবার তরুণ সার্জিও রামোসের উত্থানের শুরু।

নিজেকে আর মেলে ধরার সুযোগটাই যেন পেলেন না উডগেট। রিয়াল মাদ্রিদের বেঞ্চে বসেই কাটিয়ে দেন অধিকাংশ সময়। অথচ কথা ছিল তাঁর লস ব্ল্যাঙ্কোস ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার। শিরোপা জয়ে অবদান রাখার। তবে আক্ষেপের এক বিশাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে তিনি বাধ্য হন ক্লাব ছেড়ে যেতে। মাত্র নয় ম্যাচেই থেমে যায় তাঁর রিয়াল মাদ্রিদ ক্যারিয়ার।

এরপর তিনি ফিরে যান তাঁর শৈশবের ক্লাবে। মিডলসবার্গেও ইনজুরি এসে হানা দেয়। মাত্র ১৬ ম্যাচ খেলেন তিনি ক্লাবটির হয়ে। ক্রমশ সম্ভাবনার সব স্ফুলিঙ্গ যেন নিভে যেতে থাকে। আর এই ইংলিশ ডিফেন্ডার নিজে খুব একটা পেরে ওঠেননি ইনজুরির সাথে।

অথচ সুবিশাল নিলাম্বর সমান আশা নিয়েই তো তিনি এসেছিলেন সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। তবে সে আশার আকাশে ঘন কাল মেঘ জমা পড়েছিল। সে মেঘ ঠেলে সূর্যের আর দেখা মেলেনি সাদা আকাশে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link