রোচের ‘প্রিয়’ বাংলাদেশ

প্রিয় যে কোন কিছুই তো কত আনন্দ দেয় আমাদের। এই যেমন ক্যারিবিয়ান বোলার কেমার রোচের কথাই ধরুণ। তাঁর খুব পছন্দের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। অন্তত টেস্ট ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে বিষয়টা ভীষণ রকম সত্য। তিনি নিশ্চয়ই বাংলাদেশের সাথে খেলার জন্যে মুখিয়ে থাকেন। উৎফুল্ল হয়ে দিনক্ষণ গুনেন টাইগারদের বিপক্ষে লাল বলের জাদু দেখাবেন বলে।

প্রিয় যে কোন কিছুই তো কত আনন্দ দেয় আমাদের। এই যেমন ক্যারিবিয়ান বোলার কেমার রোচের কথাই ধরুণ। তাঁর খুব পছন্দের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। অন্তত টেস্ট ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে বিষয়টা ভীষণ রকম সত্য। তিনি নিশ্চয়ই বাংলাদেশের সাথে খেলার জন্যে মুখিয়ে থাকেন। উৎফুল্ল হয়ে দিনক্ষণ গুনেন টাইগারদের বিপক্ষে লাল বলের জাদু দেখাবেন বলে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের একজন কেমার রোচ। বেশ সমৃদ্ধ এক ক্রিকেট ক্যারিয়ার বলাই যায়। ক্যারিবিয়ানদের অধিকাংশ ক্রিকেটার যেখানে ছুটে চলেছেন ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দুনিয়ায়। সেখানে এখনও লাল বলের মায়াটা ঠিক কাটিয়ে উঠতে পারেননি রোচ। তিনি এখনও নিয়ম করে সুযোগ পেলেই ছুটে চলে যান লাল বলের ক্রিকেট খেলতে।

চলমান বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ তো তাঁর খেলার কথাই ছিল না। তিনি ব্যস্ত ছিলেন ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে। সেখানেই গিয়ে চোটে পড়ে সংঙ্কায় ছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে পারা নিয়ে। তবে তিনি যেন সকল বাঁধা পেরিয়ে পুরোপুরি ফিট হয়ে গেলেন ম্যাচ শুরুর সকালের আগে। প্রিয় প্রতিপক্ষ বলে কথা। তাও আবার প্রিয় মাঠে।

এই সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়? রোচ অন্তত প্রিয় মাঠে, প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে পরিসংখ্যানটা আরেকটু বাড়িয়ে নেওয়ার লোভ সামলাতে পারলেন না। নেমেই প্রথম দিনের শুরুতেই নিয়ে নেন দুই গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। তাঁর আঘাতেই বাংলাদেশের টপ অর্ডারে প্রথম ফাটল ধরা শুরু। এরপরও তিনি আর যেন সময়ই পেলেন না উইকেট নেওয়ার। বাংলাদেশের ব্যাটাররা নিয়ম করে বাকিদের উইকেট বিলিয়ে এলেন।

তবে রোচ দমে যাওয়ার পাত্রই নন। দ্বিতীয় ইনিংসে সদর্পে প্রত্যাবর্তন। তুলে নিলেন একে একে পাঁচ খানা উইকেট। বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের চতুর্থ ও ক্যারিয়ারের দশম ‘ফাইফার’। এমনকি সাকিব আল হাসান ও নুরুল হাসান সোহানের প্রতিরোধেও ভাঙ্গন ধরান কেমার রোচ। ঠিক এমনি করেই তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা দশ টেস্টে উইকেট নিয়েছেন ৪১টি।

তাঁর ক্যারিয়ারে বোলিং গড় ২৬.৭১। সেটা বাংলাদেশের বিপক্ষে কমে গিয়ে দাঁড়ায় ১৯.৬০। আবার স্ট্রাইকরেটের হিসেবেও বাংলাদেশের বিপক্ষে রোচের পরিসংখ্যানটা দারুণ। ক্যারিয়ারের ৫২.৬ স্ট্রাইকরেটের বিপরীতে বাংলাদেশের বিপক্ষে তা ৪২। ঠিক এই পরিসংখ্যানগুলোই প্রমাণ করে বাংলাদেশ ঠিক কতটা প্রিয়।

তবে রোচের বাংলাদেশের বিপক্ষে এমন বিধ্বংসী হওয়ার পেছনে টাইগার ব্যাটারদের দোষ রয়েছে বলে মনে করেন সাবেক বাংলাদেশী পেসার তারেক আজিজ। তিনি দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, ‘আমি মনে করি সে (রোচ) বাংলাদেশের ব্যাটারদের দূর্বলতা ভাল বুঝতে পারেন। সে একটা লম্বা সময় ধরে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলছে এবং সে জানে বাংলাদেশী ব্যাটারদের কিভাবে বিপদে ফেলতে হয়। বাংলাদেশের ব্যাটাররাও অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে তাঁর বিপক্ষে খেলার সময়।’

তবে তারেক রোচের বোলিংয়ের বৈচিত্র‍্য নিয়ে প্রশংসা করে বলেছেন, ‘রোচের বোলিং অ্যাকশনের কারণে তাঁকে বুঝতে পারা একটু কঠিন। সে পিচ থেকে অতিরিক্ত বাউন্স আদায় করতে পারে, আবার হুটহাট বলকে বাউন্স করাতে পারেন। তাছাড়া ব্যাটাররাও দ্বিধায় পড়ে যান তাঁর গতি নিয়ে।’

পিচের থেকে বাউন্স আদায় করা ছাড়াও নিজের লাইল-লেন্থ বজায় রেখে গতির তারতম্য করতে পারেন রোচ। ঠিক এ কারণেই তাঁকে খেলা বেশ কঠিন বলেই অভিমত তারেক আজিজের। অন্যদিকে বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মতে বাংলাদেশের ব্যাটারদের অতিরিক্ত সতর্কতাই তাঁদের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা।

তিনি বলেন, ‘রোচ ঠিক আগের মত নেই এখন। কিন্তু বাংলাদেশি ব্যাটাররা অধিকাংশ সময়ই তাঁর বিপক্ষে খেলার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে, একটা বাড়তি ভয় কাজ করে তাঁদের মাথায় রোচের বিপক্ষে। তবে সে (রোচ) এমন বেশ কিছু উইকেট পেয়েছে যার কারণ ব্যাটারদের বাজে শট নির্বাচন। তাঁর সাফল্যের কৃতীত্ব তিনি প্রাপ্য, সেই সাথে বাংলাদেশি ব্যাটারদের রোচ ভীতি তাঁদের দূর্বলতা।’

রোচের সাথে ঠিক মসিষ্কের লড়াইয়ে হেরে যায় ব্যাটাররা। অভিজ্ঞ ক্রিকেট বিশারদদের এমনটাই মত। যদিও রোচ সবচেয়ে বেশি টেস্ট উইকেট নিয়েছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তবে তিনি ১৬ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৬১ উইকেট। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ ম্যাচে নিয়েছেন ৪১ খানা উইকেট। বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের পরিসংখ্যান সমৃদ্ধ করার পাশপাশি আরেকদিকে এগিয়ে গেছেন রোচ।

অ্যান্টিগায় স্যার ভিভিয়ান রিচার্ড স্টেডিয়ামে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার এখন কেমার রোচ। তিনি ঐতিহাসিক সে স্টেডিয়ামে নিয়েছেন গুণে গুণে পঞ্চাশ খানা উইকেট। উইকেটের অর্ধশতক পূর্ণ করে তিনি অপেক্ষায় রয়েছেন অধরা এক রেকর্ড রেখে যেতে।

তবে এসব কিছুর মাঝে প্রশ্ন একটাই বারবার মাথায় আসে বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের। এই যে বিভিন্ন খেলোয়াড়ের বিপক্ষে ভীতি ঠিক কবে কাটিয়ে উঠতে পারবে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা? কবে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নির্ভয়ে খেলতে শিখবে? কবে মানসিকতার উন্নতি হবে? প্রশ্নগুলোর উত্তর কালের অতলে নিশ্চয়ই রয়েছে। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে সে মাহেন্দ্রক্ষণের।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...