সমস্যাটা অনেকদিন ধরেই। এমনকি টেস্ট ক্রিকেটে এই মুহূর্তে এটাই এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। ব্যাটিং লাইন আপের গুরুত্বপূর্ণ দুই পজিশন তিন ও চার নাম্বার ব্যাটসম্যান থেকে কোন রান আসছে। ম্যাচের শুরুতেই বাংলাদেশ ব্যাকফুটে এবং প্রায়ই ব্যাটিং কলাপ্স করছে। জটিল এই সমস্যার দ্রুত সমাধানের ইঙ্গিতও দিয়েছেন নয়া অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
গত কয়েকদিনে সংবাদ সম্মেলনে এসে সাকিব বেশ কয়েকবারই ব্যাটসম্যানদের এই পারফর্মেন্স নিয়ে কথা বলেছেন। যারা রান করতে পারবেনা তাঁদের দলে না রাখার কড়া স্টেটমেন্টও দিয়েছেন এই অধিনায়ক। ফলে সবার আগে আগুলটা উঠতে যাচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হকের দিকে।
যেকোন ব্যাটিং লাইন আপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পজিশন তিন নাম্বার। সাধারণ দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানই এই পজিশনে খেলে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশ তরুণ ক্রিকেটার নাজমুল হোসেন শান্তকে এই পজিশনের জন্য তৈরি করতে চেয়েছিল। বয়সভিত্তিক দলে সম্ভাবনার প্রদীপ জ্বালিয়ে আসা এই ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হয়েছেন একেবারেই ব্যর্থ।
তিন নাম্বারে টানা সুযোগ পেয়েও তাঁর কাছ থেকে মিলেনি রানের দেখা। এমনকি শেষ ১৬ টি টেস্ট ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে হাফ সেঞ্চুরি এসেছে মাত্র একটি। ফলে এবার খুব সম্ভবত জাতীয় দলে নিজের জায়গা হারাতে চলেছেন শান্ত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টেই তিন নাম্বারে দেখা যেতে পারে এনামুল হক বিজয়কে।
এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে রীতিমত রানের বন্যা বসিয়ে দিয়েছিলেন এনামুল হক বিজয়। এক মৌসুমেই করেছেন হাজারের বেশি রান। পুরষ্কার হিসেবে ডাক পেয়েছিলেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলে। কিন্তু মুশফিকের ছুটি নেয়া ও ইয়াসির আলি রাব্বির ইনজুরিতে টেস্ট দলেও যুক্ত হয়েছেন তিনি।
মূলত ইয়াসির রাব্বির ইনজুরির কারণেই এই সুযোগ পেতে যাচ্ছেন এনামুল হক বিজয়। শান্ত বাদ পড়লে তিন নাম্বারেই ব্যাট করতে হবে বিজয়কে। ওদিকে এই ওপেনার ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের হয়ে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন প্রায় ৮ বছর আগে। ২০১৪ সালে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেই শেষবার সাদা পোশাকের ক্রিকেটে মাঠে নেমেছিলেন।
ওদিকে চার নাম্বারে ব্যাট করা মুমিনুল হকের ফর্মও বেশ দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশকে। এমনকি সাকিব আল হাসান এই ব্যাটসম্যানের সাথে বিশ্রামের ব্যাপারে আলোচনা করবেন বলেও জানিয়েছেন। কেননা টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন মুমিনুল।
মুমিনুলকে নিয়ে যে সিদ্ধান্তই নেয়া হবে সেটা খুব ভেবে চিন্তেই নেয়া উচিৎ। প্রায় এক দশক ধরে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশকে সার্ভিস দিচ্ছেন তিনি। ফলে আলোচনাটা যেন তাঁর সাথে খোলামেলা হয়। বাদ দেয়া, না দেয়া কিংবা বিশ্রাম যাইহোক না কেন পুরো পক্রিয়াটা যেন স্বচ্ছ হয়, প্রশ্নাতীত হয়।
আর সেজন্যই বোধহয় আরো সুযোগ পেতে যাচ্ছেন মুমিনুল। তবে সাকিবের টেস্ট দলে আর খুব বেশি সুযোগ পাবেন না তিনি। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর পারফর্ম করার বিকল্প নেই। এই সুযোগও হাতছাড়া হলে হয়তো সাদা পোশাকের ক্রিকেট থেকে তিনি বাদ পড়তে যাচ্ছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে অবশ্য তাঁকে খেলানোটা অবশ্য একদিক থেকে অবধারিতই। কেননা স্কোয়াডে বাড়তি আর কোন ব্যাটসম্যানও নেই। রাব্বি থাকলে হয়তো এই সিরিজে নিশ্চিত ভাবেই খেলতেন তিনি। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ টেস্টেও মুমিনুলের উপরই ভরসা রাখতে হচ্ছে। মুমিনুল আস্থার প্রতিদান দিতে পারবেন তো নাকি টেস্ট ক্রিকেটে শেষ হতে চলেছে মুমিনুল অধ্যায়ের?