২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচটায় ফিরে যাওয়া যাক। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই ম্যাচের শুরুতেই লুঙ্গি এনগিদিকে টানা দুটি পুল করে বল সীমানা ছাড়া করেছিল বাংলাদেশের একজন ওপেনার। কমেন্ট্রিবক্স থেকে ভেসে আসছিল একটা সুর, ‘টপ শট’।
ম্যাচের শুরুতেই বাংলাদেশের একটা ছেলের এমন শট, এমন আত্মবিশ্বাস দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের মনোবলে আঘাত হেনেছিল। যেখান থেকে পরে আর প্রোটিয়ারা ফিরে আসরে পারেননি। আর বাংলাদেশের সেই ছেলেটার নাম ছিল সৌম্য সরকার।
সৌম্য সেদিন খুব বেশি বড় ইনিংস খেলেননি। মোট ৩০ বল খেলে ৪২ রানের একটা ইনিংস। কিন্তু ছোট্ট ওই ইনিংসটির গভীরতা ছিল অনেক। বিশেষ করে ওই দুইটা পুল শট, তাও বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে। স্বাভাবিক ভাবেই সৌম্যর সেই আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে গিয়েছিল পুরো ড্রেসিং রুমেই। একটা উড়ন্ত জয় দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল বাংলাদেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকা সেই ম্যাচে মূলত বাংলাদেশকে আটকাতে চেয়েছিল বাউন্সার দিয়ে। এনগিদি ও রাবাদা ম্যাচের শুরু থেকেই একেরপর এক বাউন্সার দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু টানা ওই দুইটা পুলের পর প্রোটিয়া পেস আক্রমণ তাঁদের পরিকল্পনা থেকেই সরে আসতে বাধ্য হয়। ফলে পরবর্তী ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায়।
সৌম্য সরকার অবশ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটে আলো ছড়িয়ে এসেছিলেন ২০১৫ সালে। সৌম্য নিজেও হয়তো ওই সময়টা মিস করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেই এমন সব ইনিংস খেলেছিলেন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা ছিল অবিশ্বাস্য। সৌম্য বাংলাদেশের হয়ে ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপও খেলেছিলেন। কিন্তু বিধ্বংসী সৌম্যকে চেনা যায় আরো কিছুদিন পর।
আসলে ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ওই সময়টা তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যই এক সোনালি সময়। পরপর তিনটি সিরিজ জয়। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে। আর পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ থেকেই শুরু হয় সৌম্য যুগের।
পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে ১১০ বলে করেছিলেন ১২৭ রান। ওয়ানডে ক্রিকেটে সেটাই ছিল সৌম্য সরকারের প্রথম সেঞ্চুরি। খুব সম্ভবত ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসও সেটিই। কিন্তু এরপরেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৮ ও ৯০ রানের পরপর দুটি চোখ জুড়ানো ইনিংস খেলেছিলেন।
সেই ইনিংসগুলো শুধু রানের বিচারে মাপলেই হবেনা। অনেকগুলো পাওয়াও ছিল সেই ইনিংসগুলো থেকে। অবশেষে তামিম ইকবালের একজন সঙ্গী পাওয়া গেল বলে ভাবা হচ্ছিল। এছাড়া ম্যাচের শুরুতেই দারুণ শুরু পাচ্ছিল বাংলাদেশ। তামিম একটু ধীরে খেললেও স্কোরবোর্ডে খুব বেশি প্রভাব পড়ছিল না। এছাড়া সেই সময় তাঁর পেরিস্কোপ শট নিয়েও আলোচনার শেষ ছিল না।
তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেটা সৌম্যর একটা ঝলক হয়েই রয়ে গেল। এরপরও ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন। কিন্তু সেই পুরনো সৌম্য সরকারকে আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যায়নি। সৌম্যের সেই স্টাইল, সেই বিধ্বংসী রূপ আর কখনোই দেখা যায়নি।
এই মুহূর্তে সৌম্য সরকার বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্রেফ একজন আক্ষেপ। জাতীয় দলে এখন আর ডাক পড়েনা। আসলে বলা ভালো, জাতীয় দলের ভাবনাতেও আর এখন থাকেননা তিনি। যদিও এখন বাংলা টাইগার্সের ক্যাম্পে নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু লিটন দাস, মুনিম শাহরিয়ার, মাহমুদুল হাসান জয়দের এই সময়ে এসে সৌম্যর জাতীয় দলে ফেরাটা সত্যিই কঠিন। খুব অবিশ্বাস্য কিছু করে না দেখাতে পারলে হয়তো সৌম্য সরকার সেই একটা ঝলক হয়েই থেকে যাবেন।
ক্রিকেট খুব বেশি অনুসরণ না করা একজন হয়তো এখন ঠিক করে সৌম্যকে চিনবেনও না। বাংলাদেশের ক্রিকেটও না একদিন বলে বসে, ‘হু ইজ সৌম্য?’