উমরানের অপেক্ষা বাড়ার নেপথ্যে

পাকিস্তানের স্পিড স্টার শোয়েব আখতারের রেকর্ড গড়া বলটার কথা মনে আছে?

সেই ২০০৩ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ। সে ম্যাচের চতুর্থ ওভারে শোয়েব আখতারের হাতে বল। পুরো ওভারটা জুড়েই তিনি যেন তাঁর গতিতে অতিষ্ঠ করে রেখেছিলেন ইংল্যান্ডের ওপেনার নিক নাইটকে। ওভার শেষের বলটাই তিনি করলেন ১৬১.৩ কিলো/ঘন্টা গতিতে। কোনো রকমে ব্যাট ছুইয়ে বিপদ মুক্ত হয়েছিলেন নাইট।

আর সেদিনের পর আজ প্রায় দুই দশক হতে চলেছে। তবুও শোয়েব আখতারের সে রেকর্ড ভাঙতে পারেনি কেউ। ডেল স্টেইন, ব্রেট লি-দের মত বোলাররাও সে রেকর্ডটায় ভাগ বসাতে পারেননি।

কিন্তু, হঠাৎ করেই সে রেকর্ড ভাঙার দৃশ্যপটে হাজির তরুণ এক ভারতীয় ক্রিকেটার। নাম তাঁর উমরান মালিক। ভারতের জম্মু-কাশ্মির অঞ্চল থেকে উঠে আসা এই পেসার গতির তাণ্ডব করছেন বাইশ গজে।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মধ্য দিয়েই মূলত তিনি এসেছিলেন আলোচনায়। ক্রিকেট বিশারদদের মত ছিল ভারতের জন্যে বিশাল বড় এক অস্ত্রে পরিণত হতে পারেন উমরান। কেননা এত গতি উৎপাদন করাটা চাট্টিখানি কথা নয়।

শোয়েব আখতার ট্রাক টেনে তবে শক্তি আর সামর্থ্য অর্জন করেছিলেন। সে যাই হোক। শুধুমাত্র গতি দিয়ে তো আর পরাস্ত করা যায় না বিশ্বের নামীদামী সব ব্যাটারদের।

গতির সাথে বাকি দিকগুলোও রপ্ত করে ফেলেছেন উমরান মালিক। অভাবটা শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতার। সেটাও হয়ে যেতে যেন সময় নিল না। ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্কের সিরিজে ডাক পেয়ে যান উমরান মালিক।

নিশ্চয়ই প্রথম জাতীয় দলের ডাক পাওয়ার দিন উমরানের থেকে উচ্ছাস কার মধ্যে ছিল না। তবে এই উচ্ছাস, উদ্দীপনা ব্যাঘাত ঘটায় নিজের সামর্থ্য প্রমাণে।

তবুও তিনি হয়ত আশায় বুক বেঁধেছিলেন ঘরের মাঠেই নিশ্চয়ই অভিষেকটা হয়ে যাবে তাঁর। তবে তেমনটা আর হয়নি। ঋষাভ পান্তের নেতৃত্বাধীন দল পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের সবক’টি ম্যাচেই ছিল অপরিবর্তীত। তাই ভারতের রঙিন জার্সিটি পড়ে বাইশ গজে গতির ঝড় তোলা হয়ে ওঠেনি উমরানের।

তবে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ কাইফের মতে দ্রুতই অভিষেক না হয়ে যাওয়াটা বেশ ভালই হয়েছে উমরানের জন্যে।

ভারতীয় এক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাইফ বলেন, ‘আমি উমরান মালিককে একদিন ভারতের হয়ে খেলতে দেখতে চাই। কিন্তু আমি চাই না সে তাড়াহুড়া করুক। রাহুল দ্রাবিড় সেটাই নিশ্চিত করছেন যেন সে ডাগআউটে বসে ম্যাচ দেখতে পারে। তাঁর গতি আছে, সে বেশ সামর্থ্যবান এবং এই মুহূর্তে সে ফর্মেও রয়েছে। শুধুমাত্র আমি নই পুরো ভারত তাঁকে একদিন দেশের হয়ে খেলতে দেখার জন্যে মুখিয়ে রয়েছে। তাঁর সময়ও আসবে।’

তাছাড়া কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের দৃঢ়তা আর দুরদর্শিতার প্রশংসা করে কাইফ বলেন, ‘রাহুল দ্রাবিড় বেশ দুর্দান্ত এক কাজ করছে তাঁর(উমরান) স্নায়ুচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যখন উমরান সুযোগ পাবে সে ভারতের হয়ে দূর্দান্ত পারফরম করবে। পেস বোলারদের মেজাজ থাকার পাশাপাশি উমরানের দক্ষতা ও গতিও রয়েছে।’

মোহাম্মদ কাইফ চাইছেন মানসিক দৃঢ়তা নিয়েই উমরানের সুযোগ হোক ভারতের একাদশে। বিন্দুমাত্র তাড়াহুড়োয় এমন প্রতিভাবান একজন খেলোয়াড়কে হারিয়ে যেতে দিতে নারাজ। তবে হয়ত পরবর্তী সিরিজেই অভিষেক হয়ে যেতে পারে উমরানের। আয়ারল্যান্ডে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে ভারত। হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন সে একাদশে হয়ত সুযোগ পেতে পারনে উমরান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link