বিশ্ব ক্রিকেটের সফলতম দল অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেটটা তারা শুধু খেলেইনা, রীতিমতো তাদের ধ্যানধারণাও এই ক্রিকেটকে ঘিরে। বিশ্ব মঞ্চে ক্রিকেটাকে কিভাবে আরো বেশি আকর্ষণীয় করা যায়, কিভাবে ক্রিকেটের আবেদন পৌঁছে দেয়া যায় আরো বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে- এই নিয়েই চলে তাদের নিত্য গবেষণা।
প্রতি আসরেই অভিনব সব নিয়ম আর বিস্ময়কর সব প্রযুক্তির ব্যবহারে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিতে জুড়ি নেই অস্ট্রেলিয়ার ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগ বিগ ব্যাশের। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ক্রিকেটকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করার অংশ হিসেবেই বিগ ব্যাশের আসন্ন মৌসুমের জন্য তিনটি নতুন নিয়মের প্রবর্তন করতে যাচ্ছে আয়োজক কমিটি।
পাওয়ার সার্জ, এক্স-ফ্যাক্টর ও ব্যাশ বুস্ট- আকর্ষণীয় এসব নিয়ম টুর্নামেন্টটিকে আরো চমকপ্রদ, বর্ণিল ও উত্তেজনাপূর্ণ করে উপস্থাপন করবে বিশ্ববাসীর দরবারে। আসন্ন ডিসেম্বরে শুরু হতে যাওয়া বিগ ব্যাশের দশম আসর থেকে কার্যকর হবে এ নতুন তিনটি নিয়ম।
- পাওয়ার সার্জ
টি-টোয়েন্টি ম্যাচের স্বাভাবিক পাওয়ার প্লে থাকে ছয় ওভারের। কিন্তু নতুন এ নিয়মের আওতায় দুই ভাগ হয়ে যাবে এই পাওয়ার প্লে। অর্থাৎ পূর্বের ইনিংসের প্রথম ছয় ওভারের পাওয়ার প্লে এখন হবে ৪ ওভারের। বাকি থাকা পাওয়ার প্লে’র দুই ওভার ইনিংসের দশম ওভারের পর যেকোন সময় নিতে পারবে ব্যাটিং দল।
- এক্স-ফ্যাক্টর
ফুটবলের মতো ক্রিকেটেও অতিরিক্ত খেলোয়াড় মাঠে নামানোর সুযোগ করার পথে হাঁটছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও বিগ ব্যাশ। অতীতে ওয়ানডে ক্রিকেটে যেমন সুপার সাব ছিল, তেমনই এবার বিগ ব্যাশে আসছে এক্স-ফ্যাক্টর। তবে সম্পূর্ণ নতুন আর ভিন্ন আঙ্গিকে। প্রথম ইনিংসের দশ ওভার পর দুই দলই চাইলে তাদের দলের ১২ কিংবা ১৩ নম্বর খেলোয়াড়কে একাদশে নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে এমন একজন খেলোয়াড়কে তুলে নিতে হবে যিনি তখনও ব্যাটিং করেননি অথবা এক ওভারের বেশি বোলিং করেননি।
এই এক্স-ফ্যাক্টর নিয়মটি শুধুমাত্র প্রথম ইনিংসের ১০ ওভার পরই প্রযোজ্য হবে। যেমন কোনো বোলার বা ফিল্ডার যদি প্রথম ওভারেই ইনজুরড হন, তাহলে তাকে তখনই বদলানো যাবে না। এক্স-ফ্যাক্টর খেলোয়াড়কে নামানোর জন্য দলটিকে অপেক্ষা করতে হবে ১০ ওভার শেষ হওয়ার পর্যন্ত।
- ব্যাশ বুস্ট
পয়েন্ট বন্টনে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এক নিয়মের প্রবর্তন করতে যাচ্ছে বিগ ব্যাশ। সাধারণত বিগ ব্যাশের গ্রুপ পর্বে কোনো ম্যাচ জিতলে দেয়া হয় ৩ পয়েন্ট। তবে এবারের আসরে প্রতিটি ম্যাচের জন্য বরাদ্দ থাকবে ৪ পয়েন্ট। ম্যাচের জয়ী দল পাবে ৩ পয়েন্ট এবং অতিরিক্ত ১টি থাকবে বোনাস পয়েন্ট। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসের ১০ ওভার শেষে দুই দলের স্কোর দেখা হবে। নিজেদের ১০ ওভার ব্যাটিং শেষে এগিয়ে থাকা দলটির ঝুলিতে উঠবে অতিরিক্ত এই বোনাস পয়েন্টটি। আর দুই দলের স্কোরই যদি সমান হয়, তবে পয়েন্টটি ০.৫ পয়েন্ট করে ভাগাভাগি করে দেয়া হবে দুই দলকেই।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই বিগ ব্যাশের দশম আসর মাঠে গড়াবে আগামী ১০ ডিসেম্বর। হোবার্ট ও ক্যানবেরায় হবে শুরুর দিকের খেলাগুলো, আর পরের খেলাগুলো হবে কুইন্সল্যান্ড ও অ্যাডিলেডে। জানুয়ারির ম্যাচগুলোর ভেন্যু নির্ধারিত হয়নি এখনও।
দশম আসরে প্রবর্তন হতে যাওয়া উদ্ভাবনী এই তিন নিয়মের মূলে ভূমিকা পালন করেছেন বিগ ব্যাশের ক্রিকেট পরামর্শক ও খেলোয়াড় বাছাইকর্তা ট্রেন্ট উডহিল। তার মতে, খেলায় কোচদের ভূমিকা বৃদ্ধির পাশাপাশি ম্যাচ চলাকালে অধিনায়ক-কোচেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে এসব নিয়মে, সাথে ক্রিকেটারদের সার্বিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করে ক্রিকেটে নতুন কিছু দিক উন্মোচন করবে এইসব নিয়ম। আর এই সংযুক্তি ক্রিকেটকে আরও এগিয়ে নেবে বলেই বিশ্বাস উডহিলের।