বানের জলে বাঁধ ভেঙে অনর্গল পানি বয়ে যাওয়ার দৃশ্য তো আমরা কম দেখিনি। আবার পদ্মার উত্তাল স্রোতে পারের পর পার নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার মত বেদনাদায়ক চিত্র আমাদের প্রতিবছরই দেখতে হয়। কোন বাঁধাই যেন নেই। কেউই যেন নেই ঠেকিয়ে রাখবে বানের জল কিংবা পদ্মার উত্তাল ঢেউ। নদীর পারের মানুষের দুর্দিনের শেষ নেই। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলেরও লজ্জার নেই কোন অন্ত।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে, ২-০ ব্যবধানে হোয়াইট ওয়াশ হতে হয়েছে বাংলার টাইগারদের। সেটাও সম্ভবত সবচেয়ে বড় বিষয় নয়। কিন্তু একটা সেশনও বাংলাদেশ জিতেছে এমন বলার সুযোগ নেই। কোন রকমে ইনিংস হারের লজ্জাটুকু এড়ানো গেছে, ব্যাস ওইটুকুই। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে আমাদের টেস্টে অর্জন ততটুকুতেই সীমাবদ্ধ। এমন বাজেভাবে হারের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল বাংলাদেশি ব্যাটারদের।
সত্যি বলতে এই সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটারদের কেউই আসলে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ তো দূরে থা্ক ,সাধারণ ব্যাটার মানের ব্যাটিং করতেও যেন হয়েছে ব্যর্থ। লোয়ার মিডল অর্ডারে নেমে একমাত্র নুরুল হাসান সোহান প্রমাণ করেছেন তিনি যোগ্য উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে খেলেছেন এই সিরিজে। বাদ বাকি আর কারই বলার মত কিছু নেই। সাকিব আল হাসানের প্রথম টেস্টের এক হাফসেঞ্চুরি ছাড়া।
এমন ব্যাটিং ধ্বসে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি সম্ভবত মুশফিকুর রহিমের অভাবটা বোধ করেছে। মুশফিকের রিভার্স সুইপ নিয়ে যত সমালোচনা হোক না কেন কিংবা তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের নিন্দা হোক না কেন, মুশফিক অন্তত টেস্ট ও ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার। এই বিষয়ে সন্দেহের কিংবা দ্বন্দের খুব বেশি অবকাশ নেই। তিনি রয়েছেন ছুটিতে। বাংলাদেশ কি তাঁর অনুপস্থিতি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে অনুভব করবে?
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা মুশফিকের নিজ থেকেই ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। সে ক্রিকেটটা তরুণদের উপর ছেড়ে দেওয়াই ভাল। বাংলাদেশ দলের বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তত মুশফিকুর রহিম টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পান না বা পাওয়া উচিৎ নয়। তাঁর বদলে সোহান হতে পারে দারুণ বিকল্প। সোহান নিজের পেশি শক্তির ব্যবহারটা দারুণ করতে পারেন। তাছাড়া সোহান তো নিজের ফেরার একটা বার্তা দিয়েই রাখলেন টেস্ট সিরিজে। তাছাড়া আফিফ হোসেন, মেহেদি হাসানরা তো থাকছেনই।
তাছাড়া মিডল অর্ডারের দায়িত্ব সামলানোর জন্যে সাকিব আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও তো থাকছেন দলের সাথে। সুতরাং টি-টোয়েন্টি দলে মুশফিকে অভাব বোধ করবার মত কোন কারণ নেই। আর অন্তত আগামী বিশ্বকাপের জন্য এখনই বাংলাদেশের একটি সেটআপে চলে যাওয়া উচিৎ। মুশফিককে বাইরে রেখেই পরিকল্পনা সাজানোটা হতে পারে বিতর্কমুক্ত এক পদক্ষেপ। তবে সত্যি বলতে ওয়ানডে ক্রিকেটে এখনও বাংলাদেশের কাছে মুশফিকুর রহিমের শূন্যস্থান পূরণের মত ব্যাটার নেই।
নিঃসন্দেহে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে মুশফিকের না থাকাটা আবারও ভোগাতে চলেছে। বাতাসের খবর বেশ প্রবল। সাকিব নাকি ছুটি চেয়েছেন। তবে এই বিষয়ে এখন অবধি কোন ধরণের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানা যায়নি কোন পক্ষ থেকেই। সাকিবের মত একজন খেলোয়াড় দলের ভারসাম্য বজায় রাখেন। ধরে নেওয়া যাক সাকিব খেলবেন না। তাহলে বাংলাদেশের ব্যাটিংটা আরও বেশি দূর্বল হয়ে পড়বে।
ইয়াসির আলী চৌধুরিও খুব সম্ভবত থাকছেন না ওয়ানডে সিরিজে। তিনি চোটের কারণে দলকে ওয়েস্ট ইন্ডিজে রেখেই চলে এসেছেন দেশে। মিডল অর্ডার তো ইতোমধ্যে বড্ড বেশি নড়বড়ে। মাঠে নামার আগেই হয়ত বাংলাদেশ দল একটা মানসিক চাপ অনুভব করবে। এই ক্ষেত্রে খুব সম্ভবত মুশফিকের জায়গায় অর্থাৎ চার নম্বরে খেলানো হতে পারে লিটন দাসকে। একাদশে সুযোগ পেতে পারেন এনামুল হক বিজয়।
তামিমের সাথে ইনিংসের শুরুটা তিনিই করবেন। আর ইয়াসির আলি রাব্বির জায়গায় সোহানকে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে দল। বাকি আর সাকিবের পরবর্তী নাজমুল হোসেন শান্ত একাদশে সুযোগ পাবেন। সাম্প্রতিক পারফরমেন্স বিচারে তাঁর পরিবর্তে মোসাদ্দেক সৈকতকে দলে নিয়ে আফিফকে তিনে খেলানোর মত একটা ‘গ্যাম্বেল’ চাইলেই করতে পারে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট।
যদি কিন্তুর অনেক হিসেব হতে পারে। হওয়াটাও স্বাভাবিক। তবে মুশফিকুর রহিমের অভাবটা আমদেরকে টেস্টের মত ভরাডুবির দিকে ঠেলে দিবে কি-না সে সন্দেহ থেকেই যায়। মুশফিকুর রহিম তো আর এমনি এমনি ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ তকমা পেয়ে জাননি। তিনি টাইগারদের বহু ম্যাচ জয়ের কাণ্ডারি। তাঁর দলে না থাকাটা আসলেই বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের শক্তিমত্তাকে খর্ব করবে?
হয়ত আবার হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়া ব্যাটিং লাইপআপকে আটকানোর কেউ থাকবেন না। একটা পাশে দাঁড়িয়ে থেকে রান তোলাটা আর হয়ে উঠবে না। হয়ত তরুণ কেউ আবার হাল ধরবেন। তবে সাম্প্রতিককালে টেস্টে বাংলাদেশের ভরাডুবি নিশ্চয়ই বাড়তি চাপে রাখবে তরুণদের। সেদিক বিবেচনায় দলে প্রয়োজন ছিল মুশফিককে। তবে যাই হোক, তাঁর অবর্তমানেও নিশ্চয়ই ওয়ানডে সুপার লিগের দ্বিতীয় পজিশনে থাকা দল বাজেভাবে হারতে চাইবে না।
মুশফিককে ছাড়াই দল ভাল করুক এমনটা প্রত্যাশা নিশ্চয়ই খোদ মুশফিকও করেন। কেননা সময় তো একদিন ফুরোবে। ব্যাট খানা তো তুলে রাখতেই হবে। কঠিন সে পরিস্থিতির জন্য দলকে প্রস্তুত তো হতে হবে। শুরুটা না হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ থেকেই হোক।