হঠাৎ করেই সরগরম বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গন। আমাদের একজন স্লগার লাগবে, আমাদের একজন পাওয়ার হিটার লাগবে। শুরু হয়ে গেল অনুসন্ধান। কাকে নেওয়া যায়? মাথায় এলো শামিম হোসেন পাটোয়ারির নাম। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য। ঘরোয়া লিগে ভালই তো রান করে, হিট করে খেলে। একেই নিয়ে নেওয়া যাক তবে। সামনেই তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
ব্যাস! দলে চলে এলেন শামিম। গুরুদায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হল ২০ বছর হওয়া এক কাঁধে। সে দায়িত্ব পালনের মত বলিষ্ঠ হয়েছে কি না সে কাঁধ, সে দিকে নেই কোন ভ্রুক্ষেপ। সে যাই হোক। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়েই জাতীয় দলের সাথে যাত্রা শুরু করেন শামিম। রোমাঞ্চ যেন তাঁর প্রতিটি ধমনীতে কম্পন ধরিয়ে দিয়ে যাচ্ছিলো। শিরদাঁড়াটায় অদ্ভুত এক অনুভূতি নিশ্চয়ই বয়ে গিয়েছিল শামিমের।
তরুণ খেলোয়াড়। তিনি হয়ত ভেবেছিলেন একহাত সমান বয়স পার করতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেটে। এরপর হয়ত আসবে সুযোগ জাতীয় দলে খেলার। নিজেকে একেবারে পরিণত করেই তবে জাতীয় দলে আসার পরিকল্পনা নিশ্চয়ই ছিল চাঁদপুরের ছেলেটির। তবে জীবন পরিকল্পনা মানে কই? মেঘ না চাইতেই জল হয়ে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেওয়ার সুযোগ হাজির শামিমের সামনে।
প্রথম সিরিজটাই দেশের বাইরে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। প্রথম দুই ম্যাচ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনি ব্যাট করলেন দুই’শর বেশি স্ট্রাইকরেট। বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট ভেবে নিল, সঠিক সিদ্ধান্ত। ঘরোয়া ক্রিকেটেও ঠিক এমনভাবেই ব্যাট করে থাকেন শামিম। ব্যাটে-বলে হয়ে গেল। বাংলাদেশ পেয়ে গেল একজন স্লগার। স্বস্তির এক নিঃশ্বাস। তবে স্বস্তির সেই নি:শ্বাস ক্রমশ পরিণত হয় দীর্ঘশ্বাসে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ব্যর্থ শামিম। পাঁচ ম্যাচে সর্বসাকুল্যে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ১২ রান। অথচ প্রথম দুই ম্যাচে তাঁর রান ছিল পাঁচ গুণ বেশি। তবে সে সিরিজটার সবগুলো ম্যাচ হয়েছিল ঢাকার মিরপুরে, শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। মিরপুরের পিচ নিয়ে বহু আলোচনা সমালোচনার মাঝে শামিমকে আরও সুযোগ দেওয়ার বিকল্প ছিল না।
তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে হওয়া নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে কেবল একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পান শামিম। অথচ অতলে তলিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস নিয়ে শামীম হাজির হয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মহামঞ্চে। আত্মবিশ্বাসের ছিটেফোঁটাও নেই। এমন একজন তরুণ খেলোয়াড়কে টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে সুযোগ দেয়নি বাংলাদেশ দল। শুরুর দিকে অপেক্ষাকৃত দূর্বল দলগুলোর সাথে খেলেছে বাংলাদেশ।
শামিমের সুযোগ অবশ্য এসেছিল। যখন বাংলাদেশের টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়া সুনিশ্চিত তখন। কিন্তু একজন তরুণ খেলোয়াড়ের সাথে এমন আচরণ ঠিক কি বার্তা দেয়? তুমি দলের পরিকল্পনার খুব গুরুত্বপূর্ণ কেউ নও। এই ধরণের সূক্ষ্ম বার্তা কি তরুণ খেলোয়াড়দের মানসিকতায় প্রভাব ফেলে না? অবশ্যই ফেলে। হীনম্মন্যতার জন্ম হওয়া তো অবধারিত।
এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচে সুযোগ মেলে শামিমের। তারপর তিনি যেন একেবারেই চলে যান আলো সজ্জিত মঞ্চের পর্দার পেছনে। কোথাও যেন ছিলেন না শামিম। অবহেলার শিকার হলেন তিনি। এই যে তড়িঘড়ি করে একজন তরুণ খেলোয়াড়কে জাতীয় দলের দায়িত্ব দিয়ে দেওয়ার মানেই তো তাঁর ক্যারিয়ারকে হুমকির মুখেই ফেলে দেয়া। বিপরীত একটা গল্পে, বিসিবির তত্ত্বাবধানে শামীমের পরিচর্যা করা যেত। তিনি চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। চ্যাম্পিয়ন মেন্টালিটি তাঁর রয়েছে।
একটু সঠিক পরিচর্যা আর দীক্ষা সেই সাথে অভিজ্ঞতা্র ঝুলি ভরে জাতীয় দলে শামিম এলে বরং ভালই হত। একটা লম্বা সময় ধরে তিনি সার্ভিস দিতে পারতেন। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট কর্তারা সবসময় স্বল্প মেয়াদের সমাধান খুঁজেছেন। তাঁরা কখনোই দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা করতে প্রস্তুত না। ‘ধর তক্তা মার পেরেক’ এটাই যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের মূলমন্ত্র।
তবুও এখন শামীমের ঠাঁই হয়েছে হাই পারফরমেন্স দলে। সেখানে থেকে নিজেকে একটু ঝালিয়ে, পরিণত করার সুযোগটা অন্তত পাবেন তিনি। মানসিক বিপর্যস্ত পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার একটা সুযোগ অন্তত তিনি পেলেন। এখন দেখবার পালা নিজের সামর্থ্য আবার প্রমাণ করতে পারেন কি-না শামীম হোসেন পাটোয়ারী। নিশ্চয়ই মাত্র ২১ বছর বয়সেই হাল ছেড়ে দেবেন না।