সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘পোস্টার বয়’। আলোচনায়-সমালোচনায় সব সময় তিনি থাকছেন, তাঁকে রাখা হচ্ছে। এক বিন্দু ফুরসত নেই। পারফরম করে হোক কিংবা মাঠের বাইরের নানান কাণ্ডে। এইতো সেদিন সাকিব বনে গেলেন বাংলাদেশের টেস্ট দলের অধিনায়ক। এখন তো তাঁকে ঘিরেই গল্প হবে বহুরকম।
গল্পের শুরু অবশ্য হয়েই গেছে। তাঁর অধিনায়কত্বের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবর্তনের চর্চা হচ্ছে বেশ। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর খুব একটা সুখকর পরিস্থিতিতে নেই সাকিব আল হাসান। ‘হোয়াইট ওয়াশ’ হয়েছে তাঁর দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এরপরই তিনি বললেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটের একটা সংস্কৃতি গড়ে তোলা এখন আমাদের দায়িত্ব’।
বেশ, বাহবার একটা সুবাতাস বয়ে গেল। পরক্ষণে ঘন কাল মেঘে ঢেকে গেল গোটা ক্রিকেট পাড়া। ঝড় হওয়ার আগে গুমোট এক পরিস্থিতি। আবারও মুখোমুখি সাকিব ও বিসিবি। একটা কথা গোটা দেশ হয়ত জেনে গেছে। টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর সাকিব ছুটি চেয়েছেন। মৌখিক ছুটি, এমনটাই জানিয়েছিলেন জালাল ইউনুস। তবে অদ্ভুতরকমভাবে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন অকপটে স্বীকার করলেন তিনি কিছু জানেন না।
বিসিবির বোর্ড মিটিং শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পাপন বলেন, ‘এখনো সাকিব আনুষ্ঠানিক ভাবে বোর্ডকে কিছু বলেনি।’ এর অর্থ দাঁড়ায় সাকিবের ছুটির বিষয়ে বোর্ড নিশ্চিত নয় যে সাকিব ওয়ানডে সিরিজ খেলবে কি না। কিন্তু অপরদিকে ওয়ানডে দলে তাইজুল ইসলামকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমন ধোয়াশার অর্থ কি দাঁড়ায়?
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের আগে এমনই এক ধোয়াশার সৃষ্টি হয়েছিল। সেটাও সেই সাকিবকে ঘিরেই। তিনি টেস্ট খেলতে চাইছিলেন না। কিন্তু বোর্ড সভাপতির সাথে বৈঠকের পর সাকিব টেস্ট খেলতে রাজি হলেন এবং তাঁকে অধিনায়কের দায়িত্বও দেওয়া হল। বেশ ভাল বিষয়। সাকিবের মত অভিজ্ঞ আর বুদ্ধিমান একজনকেই তো দরকার।
কিন্তু এই যে একটা পূর্ণাঙ্গ সিরিজের মাঝপথে সাকিবের এমন হুটাহাট সিদ্ধান্তগুলো আসলে কোন সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে তার উত্তর হয়ত কারও জানা নেই। আচ্ছা, সাকিব বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার। তিনি দলের জন্যে গুরুদায়িত্ব পালন করেন সে কথা ঠিক। তাঁকে ভীষণ চাপ সামলেন বাইশ গজে পারফরম করতে হয়। মানসিক অবসাদ এসে যাওয়াটাও তো স্বাভাবিক।
কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে, ছুটি চাওয়ার ধরণ নিয়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কোন ব্যক্তি পরিচালিত প্রতিষ্ঠান নয়। এখানে নিশ্চয়ই কিছু নিয়ম রয়েছে। নিয়ম মেনেই নিশ্চয়ই ছুটি-ছাটার কার্য সম্পাদন হয়। কিন্তু সাকিব কি এসব নিয়ে খুব একটা চিন্তা করেন? তিনি হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন, বোর্ড তা জানতেও পারে না। আবার বোর্ড তাঁকে ছুটি না দিয়েও পারে না।
যত যাই হোক তিনি তো বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘পোস্টার বয়’, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তাঁর মনের বিরুদ্ধে তো আর তাঁকে খেলানো যায় না। তবে এমন সংস্কৃতিও তো কোন ভাল বার্তা দেয় না। আপনি একজন ভাল খেলোয়াড় এবং বহু বছর ধরে খেলছেন বলেই যে আপনি যখন ইচ্ছে হবে খেলবেন যখন ইচ্ছে হবে খেলবেন না তা কিন্তু হতে পারে না। তাছাড়া এমন এক ধুম্রজাল তৈরি করে ছুটিতে যাওয়াটাও তো বেশ দৃষ্টিকটু।
টেস্ট ক্রিকেটের সংস্কৃতি গড়তে চাওয়া সাকিব আল হাসান এ কেমন এক সংস্কৃতির মধ্যে ঠেলে দিয়ে যাচ্ছেন গোটা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। তিনি তো রোল মডেল, অনেকের আদর্শ। তারাও বা কি শিখছে? ভাল কিছু করতে পারলেই নিয়মের তোয়াক্কা করার প্রয়োজন নেই। এভাবে একটা সংগঠন, একটা প্রতিষ্ঠান কিংবা একটা দেশের ক্রিকেট চলতে পারে না। এই নিয়ম চলতে থাকলে আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেট বহুদূর এগোতেও পারবে না।
আর সাকিবের এই ছুটিতে যাওয়া নিয়ে তো কম জল ঘোলা হয়নি। প্রায় প্রতিটা সিরিজের আগেই টিম ম্যানেজমেন্টকে অপেক্ষা করতে হয় সাকিবের সিদ্ধান্তের উপর। যার ফলে দলের কম্বিনিশনের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। দল দোলাচলের মাঝে থাকে। সাকিব ঠিক এমন সংস্কৃতি চর্চা থেকে বেড়িয়ে আসবেন কবে?