২০ ওভারের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় কোনটি? মোটামুটি ক্রিকেট জানে, বুঝে এমন মানুষ মাত্রই বলে দিতে পারবে পাওয়ার-প্লে অথাৎ শুরুর ছয় ওভার। পাওয়ার প্লেতে ভাল একটা শুরু এনে দিতে পারলে বাকিটা সময় কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যায়।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা এই পাওয়ার প্লে-তেই। আগ্রাসী উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের অভাব প্রায় প্রতি ম্যাচেই স্পষ্ট হয়ে উঠে। ফলে কাজে লাগানো যায় না পাওয়ার প্লে এর ফিল্ড রেস্ট্রিকশনের সুবিধা। ফলে ম্যাচের শেষদিকে প্রতিপক্ষের রানরেটের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তোলা হয়ে পড়ে দু:সাধ্য।
এবার অবশ্য নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন ভয়-ডরহীন ক্রিকেটটা খেলার লাইসেন্স দিয়ে দিলেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের। বিশেষ করে তরুন মুনিম শাহরিয়ার এবং অনেকদিন পর দলে ফেরা এনামুল হককে উইকেট হারানোর চিন্তা না করে পাওয়ার প্লে-র সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে বললেন।
যদিও বাংলাদেশের শুরুটা একেবারেই মনমত হয়নি। ইনিংসের তৃতীয় বলেই আকিল হোসেইনের ফ্লাইট ডেলিভারিতে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মুনিম। এরপর হয়তো লিটনের নামার কথা ছিল, তবে তিন নম্বরে ব্যাট করতে আসেন সাকিব আল হাসান। সম্ভবত বাঁহাতি আকিলের স্পিন থেকে বাঁচতে টিম ম্যানেজম্যান্টের এমন সিদ্ধান্ত।
সাকিব আল হাসান নামার পরেই হাত খুলে খেলতে শুরু করেন, অন্য পাশে থাকা এনামুলও তখন টি-টোয়েন্টি মেজাজেই ব্যাটিং শুরু করেন। রোমারিও শেফার্ডের এক ওভারে ১২ রান দিয়ে শুরু। এরপরের ওভারে আকিল হোসাইনকে এক ছক্কা আর এক চার মেরে বাংলাদেশের উড়ন্ত সূচনা এনে দেন সাকিব।
অবশ্য ১০ বলে ১৬ রান করা এনামুল নিজের দারুণ শুরুটা কাজে লাগাতে পারেননি। ওবেড ম্যাকয়ের এর ফুলার লেংথ বলে এলবিডব্লু হয়ে ফিরে যান। শেষপর্যন্ত পাওয়ার প্লে-র নির্ধারিত পাঁচ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪৬ রানে দুই উইকেট। ইংল্যান্ডের মত মারকুটে দলের তুলনায় এই রান হয়তো বিশেষ নয়, তবে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ কিছুই।
সর্বশেষ ২০২১ বিশ্বকাপে পাওয়ারপ্লে-তে চল্লিশোর্ধ্ব রান করতে সক্ষম হয়েছিল টিম টাইগার্স। সেবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লিটন দাস এবং নাইম শেখ ওপেনিং জুটিতে করেছিলেন ৪০ রান। সেই তুলনায় এবার অবশ্য আরো ভাল ব্যাটিং করেছেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা।
বেশি নয় বরং গত এক বছর থেকে নিয়মিত বাংলাদেশ ক্রিকেট অনুসরণ করা প্রতিটি দর্শকেরই জানা আছে কেমন অস্থিতিশীল হয়ে আছে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেও সেটা স্পষ্ট। বারবার বদল এসেছে উদ্বোধনী জুটি ব্যবহার করেছে টিম বাংলাদেশ। লিটন, নাইম, সৌম্য, সাইফ, শান্ত এমনকি সাকিব নিজেও একবার ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন। সর্বশেষ ঘরোয়া ক্রিকেটে আলো ছড়ানো মুনিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ইনিংস উদ্বোধনের।
এতকিছুর পরেও অবশ্য কখনো ভাল শুরু পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। ওপেনাররা উইকেট ধরে রাখার চিন্তায় অতিরিক্ত ডট বল দিয়েছেন আবার সেই ডট বলের চাপেই ভুল শট খেলে উইকেট দিয়ে এসেছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে না পারার অন্যতম কারণ এই অহেতুক ডিফেন্সিভ এপ্রোচই। ২০২১ সালের অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকেই কখনো বিনা উইকেটে পাওয়ার-প্লে শেষ করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। রানও করতে পারেনি মানসম্পন্ন ইকোনমিতে। অধিকাংশ ম্যাচেই ছয়-এর কম ইকোনমি রেটেই পাওয়ার প্লে শেষ করতে হয়েছিল।
ওপেনারদের অতিরিক্ত ডট বল খেলা পাশাপাশি দ্রুত উইকেট দিয়ে আসার ফলে যে চাপ সৃষ্টি হয় তা মিডল অর্ডার হয়তো কাটিয়ে উঠতে পারে কিন্তু আবার ক্লিনিক্যাল ফিনিশারের অভাবে রান শেষপর্যন্ত দেখা যায় ১০০ এর আশেপাশেই থাকে।
নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন পুরোনো সমস্যার টোটকাই এবার বাতলে দিয়েছেন। পাওয়ার-প্লেতে উইকেটের চিন্তা না করে রান তোলায় মনোযোগর হতেই পরামর্শ দিয়েছিলেন সাবেক অধিনায়ক। আর তার টোটকাতে এবার ক্যারিবিয়ান দ্বীপে মোটামুটি সফল হয়েছে বাংলাদেশ সেটা বলাই যায়।
শুরুতে মুনিমের বিদায়ের পরেও এনামুল-সাকিব যেভাবে শাসন করেছেন উইন্ডিজ বোলারদের সেটা নিশ্চিতভাবেই নতুন কিছুর আশা দেখাচ্ছে বাংলাদেশের ভক্ত-সমর্থকদের। এখন থেকে এমন ভয়-ডরহীন ব্র্যান্ড ক্রিকেটটাই খেলবে বাংলাদেশ, এটাই প্রত্যাশা।