বিশ্বক্রিকেট হঠাৎ থমকে গিয়েছিল। সেই থমকে যাওয়া পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ মিলেছে। আর নতুন করে উজ্জীবিত হতে শুরু করেছে। পরিবর্তন আসছে। পরিবর্তনের হাওয়ার সাথে নতুন করে সফলতার দেখাও পাচ্ছেন নতুন অধিনায়কেরা। এই যে যেমন ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস কিংবা অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স।
বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ইমরান ছিলেন ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অধিনায়কদের একজন। তিনি একবার বলেছিলেন ভাল অধিনায়ক হতে হলে বোলিং বোঝা জরুরি। সে কাজটাই যেন হচ্ছে এখন। প্যাট কামিন্স তিনি নিজেই একজন তুখোড় বোলার। তিনি বোঝেন পিচের পরিস্থিতি। তিনি বুঝেন বোলারদের সক্ষমতা। সেটা বুঝেই তিনি বোলারদের সঠিক ব্যবহারটা করতে পারেন।
আর অন্যদিকে পরিস্থিতি বোঝাটাও একটা বড় গুণ। গদবাধা নিয়মে বোলারদের ব্যবহার করায় কখনোই সফলতা আশা করা যায় না। আশা করাটা বরং বোকামি। একই বিষয় ঘটছে বেন স্টোকসের আমলে। জো রুট নিজের অধিনায়কত্বের সময়কালে ছিলেন দূর্দান্ত ফর্মে। পঞ্জিকা বর্ষে সর্বাধিক রান করেছিলেন রুট। তবে তাঁর আমলে ইংল্যান্ড সবচেয়ে বাজে সময় পার করে।
এক মৌসুমে মোট নয় খানা টেস্ট হারের লজ্জায় পড়তে হয় ইংল্যান্ডকে। এর মূল কারণ তিনি হয়ত পরিস্থিতি বুঝে বোলারদের ব্যবহার করতে পারতেন না। সেখান থেকে একটা পরিবর্তন এসেছে। বেন স্টোকস একজন অলরাউন্ডার। তিনি ম্যাচের দুই রকম পরিস্থিতিই বুঝেন। তাছাড়া তিনি নিজের দলের বোলারদের শক্তিমত্তার সঠিক জ্ঞানটুকুও রাখেন। সেটাই ইংল্যান্ডে সাফল্যের মূল কারণগুলোর একটি।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের মাঝে একটা আক্রমণাত্মক ভাবের বিস্তার হয়েছে। সেটার বিস্তার অবশ্য ঘটেছে খোদ অধিনায়কের কাছ থেকেই। স্টোকস বরাবরই ভীষণ আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়। তিনি নিজের ক্যারিয়ার থেকে আক্রমণকেই পুঁজি করেছেন। এখন তো রীতিমত অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন।
তাছাড়া এই স্টোকস আর কামিন্সের সফলতার পেছনে আরেকটা কারণ রয়েছে। তাঁরা দুইজনই মোটামুটি প্রতিপক্ষের আক্রমণে খুব একটা ঘাবড়ে যান না। বরং তাঁরা নতুন করে পরিকল্পনা সাজান। দ্রুতই নিজের পরিকল্পনা থেকে সরে যান না। প্রতিপক্ষের আক্রমণের ভয়ে নিজের আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং পরিবর্তন করে ফেলেন না খুব দ্রুতই।
এই জায়গাটায় নিউজিল্যান্ডে বিপক্ষে সিরিজে এগিয়ে ছিল স্টোকস, কেন উইলিয়ামসন থেকে। উইলিয়ানমসনের প্রধান অস্ত্র ছিল ট্রেন্ট বোল্ট। ইংল্যান্ডের ব্যাটারদের আক্রমণে অবিচল থাকতে পারেনি। আর ইংলিশ আক্রমণের সামনে অনভিজ্ঞ মাইকেল ব্রেসওয়েল খুব একটা কার্য্যকর হননি। উইলিয়ামসন ঠিক এই জায়গায় পরিকল্পনায় ভুল করেছিলেন।
তাছাড়া ইংল্যান্ডের সাফল্যের পেছনে আরও বড় এক কারণ রয়েছে। ইংল্যান্ড নিজেদের সেরা খেলোয়াড় বাছাই করছে বা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। উইকেটরক্ষক থেকে শুরু করে প্রতিটি ফিল্ডিং পজিশনের জন্যে নির্দিষ্ট খেলোয়াড় বাছাই করছে দলটি। যেমন স্লিপ পজিশনে অন্যতম সেরা ফিল্ডার বেন স্টোকস এখন নিয়ম মেনেই থাকছেন স্লিপ পজিশনে।
এমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়গুলো ইংল্যান্ডের ক্রিকেটকে আবারও সাফল্য ধারায় ফেরাচ্ছে। তাছাড়া স্টোকসের ইতিবাচক নেতৃত্বও ইংল্যান্ডকে দারুণভাবে ঘুরে দাড়াতে সহয়তা করছে। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সাফল্য দেখে ভারতও একজন বোলারের হাতে তুলে দিয়েছেন অধিনায়কের দায়িত্ব। তবে স্বল্প মেয়াদের হলেও বিষয়টা ইতিবাচক।