গ্যাল্টিয়ারের প্যারিসে স্বাগতম!

ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেই গত মৌসুমে বেশ বড় ব্যবধানেই লিগ ওয়ানের শিরোপা জিতেছিল। পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থাকা মার্শেইয়ের সঙ্গে পার্থক্য ছিল ১৫ পয়েন্টের৷ এছাড়া গোল পার্থক্য কিংবা খেলার মাঠে আধিপত্য সবকিছু বিবেচনায় প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবগুলোর তুলনায় অনেকটা পথ এগিয়ে ছিল ফরাসি চ্যাম্পিনয়রা৷

কিন্তু এমন পারফরম্যান্সকে কি আসলেই পিএসজির জন্য সফলতা বলা যায়। সাধারণ কোন মানুষ যাই বলুক, ইউরোপীয় ফুটবলের খোঁজ খবর রাখা সবাই জানে প্রতি মৌসুমেই পিএসজির এমন পারফরম্যান্স নিয়মিত দেখা যায়। গত দশ মৌসুমে আটবার ঘরোয়া লিগ জিতে ফ্রান্সে সেরা হওয়া দলটির জন্য সাধারণ কিছুই। বরং পিএসজির মূল লক্ষ্য ইউরোপীয় আসরে ভাল কিছু করা, রূপালি ট্রফিটা জেতা। কিন্তু গত আসরে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে অবিশ্বাস্য পরাজয়ে আসর থেকে বাদ পড়তে হয়েছিল তাদের।

এর পাশাপাশি ট্রফি দ্য চ্যাম্পিয়ন, কোপা ডি ফ্রান্স এর মত ফরাসি টুর্নামেন্টেও কাঙ্ক্ষিত সফলতা পায়নি পিএসজি। আর তাই পরবর্তী মৌসুমে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে শুরুতেই পুরোনো কোচ মরিসিও পচেত্তিনোকে সরিয়ে দায়িত্বে আনা হয়েছে ক্রিস্টোফ গ্যাল্টিয়ারকে। পিএসজির সাথে দুই বছরের চুক্তি করার আগে গ্যাল্টিয়ার ছিলেন লিগ ওয়ানের ক্লাব নিসে-তে।

লিগ জেতাকে ছেলের হাতের মোয়া বানিয়ে ফেলা পিএসজি ক্রিস্টোফ গ্যাল্টিয়ারের কাছে আরো একটি লিগ শিরোপা চাইবে না। বরং ক্লাবটির মূল লক্ষ্য থাকবে এই ফরাসি ট্যাকটিশিয়ানের হাত ধরে ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করা। অবশ্য এর আগে পিএসজির কোচ হিসেবে জিনেদিন জিদানের ব্যাপারে গুঞ্জন উঠেছিল তবে ক্লাব এবং জিদান দুইজনই সেটির সত্যতা অস্বীকার করেছেন।

কোচিং ক্যারিয়ারে পিএসজি হবে ক্রিস্টোফার গ্যাল্টিয়ারের চতুর্থ দল। সাবেক এই ডিফেন্ডার ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সেন্ট-এতিঁয়েনকে কোচিং করিয়েছিলেন। তার কোচিংয়েই দলটি ইউরোপীয় টুর্নামেন্টে ফিরে এসেছিল। এছাড়া ২০১২/১৩ মৌসুমে কোপা দে লা লিগ জিতিয়ে ক্লাবের ৩২ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়েছিলেন।

সেন্ট আঁতিয়েন থেকে বিদায় নেয়ার পর গ্যাল্টিয়ার লিঁলেতে যোগ দেন। এখানেও তিনি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটান। ইউরোপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেন এবং একটি শিরোপা জিতেছিলেন। সেন্ট এতিঁয়েন হয়ে জেতা ট্রফির চেয়ে এবারের পুরস্কারটি অনেক বড় ছিল, কারণ তিনি ২০২১ সালে শক্তিশালী পিএসজির আধিপত্য ভেঙ্গে লিগ ওয়ান জিতেছিলেন। সেখান থেকে নিসে ক্লাবে এসেছিলেন গ্যাল্টিয়ার, এরপর এবার তাকে দেখা যাবে পিএসজির ডাগ আউটে।

যাহোক, পিএসজিতে গ্যাল্টিয়ার শিষ্য হিসেবে পাচ্ছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি, বর্তমান সময়ের সেরা উদীয়মান তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে, ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন নেইমার জুনিয়র, সার্জিও রামোস, মারকুইনহোস, মার্কো ভেরাত্তিদের মত বড় নামের খেলোয়াড়দের।

এছাড়া স্কোয়াড শক্তিশালী করার জন্য পর্তুগালের নুনো মেন্ডেস, ভিতিনহাকে দলে ভিড়িয়েছে নাসের আল খেলাইফির ক্লাব। ইন্টার মিলানের ডিফেন্ডার মিলান স্ক্রিনিয়ারকে কিনতেও আগ্রহী দলটি। অন্যদিকে অবশ্য অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, জাভি সিমন্স ইতোমধ্যে ক্লাব ছেড়েছেন। নেইমারের ভবিষ্যতও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।

একজন কোচ হিসেবে ক্রিস্টোফার গ্যাল্টিয়ার অন্যান্য ম্যানেজারদের তুলনায় কিছুটা আলাদা। লিগ ওয়ানের ক্লাবগুলো সাধারনত ৪-৩-৩, ৪-২-৩-১ ছকে খেলে থাকে কিন্তু গ্যাল্টিয়ার তার দলকে সাজান ৪-৪-২ ফরমেশনে। এই ফরমেশনে খেলার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এতে খেলোয়াড়রা সুসংগঠিত ভাবে প্রেস করতে পারেন। বল নিয়ে প্রতিপক্ষের দৌড়ের গতি থামিয়ে দেয়াটাও অপেক্ষাকৃত সহজ।

বোঝাই যাচ্ছে দ্রুতগতির কাউন্টার অ্যাটাক, গতিময় ফুটবলের চেয়ে মাঠে ইন্টেন্সিটি, প্রেসিং বেশি দেখতে চান ফরাসি জায়ান্টদের নতুন কোচ। আর তাই অন্যান্য সময়ের তুলনায় মাঠে পিএসজি খেলোয়াড়দের আরো বেশি সক্রিয় থাকতে হবে মাঠের খেলায়।

প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে অবশ্য কোচরা নিরাপদ নন। ২০১১ সাল থেকে ক্লাবটিতে ক্রিস্টোফার গ্যাল্টায়ার সহ সাতজন কোচ হিসেবে এসেছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন কার্লো আনচেলত্তি, উনাই এমেরি, টমাস টুখেলের মত ইউরোপসেরা কোচরা।

পিএসজি ড্রেসিং রুম তারকা-সজ্জিত, জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির মত উত্তপ্ত এই লকার রুমকে নেতৃত্ব দিতে তাই ঝামেলাই পোহাতে হয় কোচদের। সেই কাজটা কেমন ভাবে করবেন গ্যাল্টিয়ার, তিনি কি পারবেন বহুল আকাঙ্খিত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ পার্ক দ্য প্রিন্সেসে আনতে? উত্তর পেতে কিছুটা অপেক্ষা করতে হচ্ছে আপাতত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link