ব্যাটি না বোলিং? গলদ কোথায়!

ভিনদেশের মাটিতে ভারতের গত তিনটি সিরিজ হাতছাড়া হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জোহানেসবার্গ ও কেপটাউন টেস্ট দিয়ে শুরু। এরপর সম্প্রতি শেষ হওয়া ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্টেও সেই একই দৃশ্য। এই তিন টেস্টে ভারতীয় বোলিং লাইন আপ সব মিলিয়ে চতুর্থ ইনিংসে উইকেট নিতে পেরেছে মোটে নয়টি।

ভিনদেশের মাটিতে ভারতের গত তিনটি সিরিজ হাতছাড়া হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জোহানেসবার্গ ও কেপটাউন টেস্ট দিয়ে শুরু। এরপর সম্প্রতি শেষ হওয়া ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্টেও সেই একই দৃশ্য। এই তিন টেস্টে ভারতীয় বোলিং লাইন আপ সব মিলিয়ে চতুর্থ ইনিংসে উইকেট নিতে পেরেছে মোটে নয়টি।

অথচ এই চতুর্থ ইনিংসে ভালো বোলিং দিয়ে প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটারের লাগাম টেনে ধরা টেস্ট জয়ের পূর্বশর্ত। আর ভারতের বর্তমান বোলিং লাইন আপকে তাঁদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা বলেই বিবেচনা করা হয়। যেখানে জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি, মোহাম্মদ সিরাজ, উমেশ যাদব ও শার্দুল ঠাকুরের মতো বাঘা বাঘা বোলাররা রয়েছেন।

কিন্তু তারপরেও কেন এই শক্তিশালী বোলাররা চতুর্থ ইনিংসে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং দুর্গ ভাঙতে ব্যর্থ হচ্ছেন? কেবল কি ব্যাটিং সহায়ক পিচ বলেই এমন ঘটছে? নাকি বোলিংয়েও ঘাটতি রয়েছে ভারতের? নইলে কেন প্রতিপক্ষ দল তিনবারই চতুর্থ ইনিংসে সাত উইকেটে জয় নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে? নাকি গলদ রয়েছে তৃতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে?

এইতো এজবাস্টনের মাঠে ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার পঞ্চম টেস্টে ইংল্যান্ড বিজয়ী হয়ে গেল। অন্তত চতুর্থ ইনিংস এর আগ অবধি মনে হচ্ছিল সবকিছু ভারতের অনুকূলে রয়েছে, কিন্তু এবার শেষ হাসিটা থাকলোনা তাঁদের।

ভারতীয় দলের প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড় স্বীকার করেছেন যে চতুর্থ ইনিংসে বোলিংয়ের ধরণ ভারতের জন্য একটা ইস্যু হয়ে দাড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আক্রমণাত্মক বোলিং ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছি। আগে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে আর এখানে ইংল্যান্ডের সাথে সুযোগ হাতছাড়া করাটা হতাশাজনক। এই দিকটি খতিয়ে দেখতে হবে এবং এটা নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ, আমরা এখানে বহু বছর ধরে শক্তিশালী ছিলাম।’

রাহুল দ্রাবিড় আরও বলেন, ‘একাগ্রতা বজায় রেখে মাঠে পারফর্ম করা এবং ফিটনেস – এই দুটি বিষয়ে আমাদের ঘাটতি রয়েছে, টেস্টে ব্যর্থতার কারণ এটাও হতে পারে।’

একাগ্রতার বিষয়ে তাঁর অনুধাবনটি ঠিক। এজবাস্টনে দেখা গেছে বুমরাহ দ্বিতীয় ইনিংসে ৩.৫৭ এবং শামি ৩.৫৪ বোলিং গড়ে বেশ আক্রমণাত্মক বোলিং করেছিল। যদিও সিরাজ সেখানে চারটি উইকেট নিলেও ৫.৭৩ ইকোনমি রেটে রান দিয়েছেন। শার্দুলের ইকোনমি রেটও ছিল ৬.৮৫। এমন বোলিং ইংল্যান্ডকে দ্রুত রান করার সুযোগ দিয়েছে। পাশাপাশি এটা নিশ্চিত করেছে যে ভারত তৃতীয় ইনিংসটি তাড়াতাড়ি শেষ করলেও ইংল্যান্ডের হাতে যেন ঘুরে দাড়ানোর জন্য যথেষ্ট সময় থাকে।

আদতেই চতুর্থ ইনিংসে দেখা গেল যে, ইংলিশ ওপেনার অ্যালেক্স লি ও জ্যাক ক্রাউলিকে ভারতের বোলার বুমরাহ ও শামি দুজনই ওভারপ্রতি চারের বেশি করে রান দিয়েছে। সিরাজ ৬.৫৩ ও শার্দুল ৫.৯০ করে ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন।

দ্রাবিড় এর মতে, ‘আমরা আরও ভালো বোলিং করতে পারতাম। এমনকি শেষ ইনিংসে আরও ভালো কৌশল নিতে পারতাম।’

কিন্তু সব দোষ বোলারদের ঘাড়ে দিয়ে ভারতের ব্যাটারদের সব দোষ অগ্রাহ্য করাটাও ঠিক হবে কি? কারণ জোহানেসবার্গে ও কেপ টাউনে তৃতীয় ইনিংসগুলোতে ভারতের সংগ্রহ ছিল মাত্র ২৬৬ ও ১৯৮ ছিল। এজবাস্টনেও তৃতীয় ইনিংসে ভারতের মাত্র ২৪৫ রানের দুর্বল ইনিংস প্রতিপক্ষকে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে সাহায্য করেছে। সেক্ষেত্রে ব্যাটাররাও এই হারের দায় এড়াতে পারবেন না।

আসন্ন টেস্ট গুলোতে ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর টোটকা জানিয়েছেন ভারতের প্রধান কোচ নিজেই। পরিবর্তনের ইঙ্গিত করে রাহুল দ্রাবিড় বলেন, ‘আমাদের খুঁজে বের করতে হবে আমরা কেন তৃতীয় ইনিংসে ভালো ব্যাটিং করতে পারছি না। পরবর্তী তিনটি টেস্ট ম্যাচ হতে যাচ্ছে উপমহাদেশে। আমরা যখন এসব জায়গায় আবার খেলতে যাব, তাদের মোকাবেলা করার পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিশ্চিত করেই যেতে হবে।’

দেখা যাক, কোচের কথায় কাজ হয় কি না!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...