সবুজ গালিচায় সবুজের ইতিহাস

ইউরোপের কোন এক দেশের হয়ে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ গোলদাতার নামটি কি জানেন? হয়ত জানেন না। তবে সেখানটায় রয়েছে দুইজন। জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ী জার্ড মুলার দখল করে রেখেছেন ৬৮ গোল করে। ঠিক সমপরিমাণ গোল করে তাঁর সাথেই অবস্থান আয়ারল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার রবি কিনের।

রবি কিন, জন্ম তাঁর আট জুলাই ১৯৮০ সালে। আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে জন্ম তাঁর। ছেলে বেলা থেকেই টুকটাক ফুটবলের সাথে সম্পৃক্ততা ছিল তাঁর। ১০ বছর বয়সে স্থানীয় স্কুলের হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন। সেখানেই নিজের ভেতর থাকা প্রতিভার জানান দিতে শুরু করেন কিন।

ক্রমশ ফুটবলের সবুজ গালিচায় পা মাড়িয়ে তিনি এগিয়ে যেতে থাকেন। তিনি যখন মোটামুটি ঠিক করে ফেলেন যে ফুটবলই হবে তাঁর ক্যারিয়ার ঠিক তখন ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল থেকেও এসেছিল প্রস্তাব। তবে তিনি বেছে নেন উলভারটন ওয়ান্ডারার্স ক্লাবকে। এর পেছনে অবশ্য নিজেকে মেলে ধরার একটা সুযোগের অপেক্ষা ছিল মূল কারণ।

লিভারপুলের মত বড় ক্লাবের মূল একাদশে নিজের জায়গা করে নিতে পারবেন কি-না তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন কিন। তবে সন্দেহ মেঘের ঘনঘটা কেটে যেতে খুব বেশি সময় লাগেনি। নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখতে শুরু করেন তিনি। অচিরেই নিজেকে আবিষ্কার করে টটেনহ্যাম হটস্পার্সে। ক্লাব ফুটবলের একটা লম্বা সময় তিনি কাটিয়েছেন স্পার্সদের জার্সি গায়ে।

তবে রবি কিন সবচেয়ে বেশি আলো ছড়িয়েছেন জাতীয় দলের হয়ে। তিনি ছিলেন আয়ারল্যান্ডের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বর্ণিলতম তারকা। গোটা আয়ারল্যান্ড দলটাকে একাই টেনে নিয়ে গেছেন বহু বছর। ইউরোপের শক্তপোক্ত ফুটবল খেলুড়ে দেশ কখনোই ছিল না আয়ারল্যান্ড। অপেক্ষাকৃত কঠিন প্রতিপক্ষদের বিপক্ষেই খেলতে হয়েছে তাঁদের ম্যাচ।

তবুও দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে একটা অদ্ভুত কাণ্ড ঘটেছে আয়াল্যান্ডের সাথে অথবা বলা যায় রবি কিনের সাথে। তিনি যখনই গোল করেছেন, সে ম্যাচ আর হারের দেখা পেতে হয়নি দলকে। এমন অদ্ভুত এক রেকর্ডের উপজীব্য একটাই, তিনি দলের ত্রাণকর্তা হয়েই হাজির হতেন দৃশ্যপটে। দলের পরাজয় এড়ানো বা জয় এনে দিতে তাঁর যেন জুড়ি মেলা ভার।

আয়ারল্যান্ডের জার্সি গায়ে তিনি ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিও, রোমারিওদের মত খেলোয়াড়দের চাইতেও অধিক গোল করেছেন তাঁর ক্যারিয়ারে। এমনকি স্পেনের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক ডেভিড ভিয়ার থেকেও আন্তর্জাতিক ফুটবলে রবি কিনের গোল সংখ্যা বেশি। ভীষণ রকম প্রতিভাবান এই ফুটবলার ক্লাব ফুটবল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ফুটবলে আক্রমণভাগে ভিন্ন সব পজিশনে খেলেছেন।

আয়ারল্যান্ডের হয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ ফুটবল টুর্নামেন্টের চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতার পজিশনটাও নিজের দখলে রেখেছেন রবি কিন। তাঁর দেওয়া গোলের সংখ্যা ২৩টি। তাঁর উপরে রয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, রবার্ট লেওয়ান্ডস্কি ও জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ। ইউরোপের অপেক্ষাকৃত দূর্বল দল নিয়ে এমন পারফরমেন্স নিশ্চয়ই বিশাল বড় অর্জন।

আবার অন্যদিকে ক্লাব ফুটবলে টটেনহাম ও লস অ্যাঞ্জেলস গালাক্সির হয়ে যথাক্রমে ৮০ ও ৮৩ বার তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন জালের ঠিকানা। তবে জাতীয় দলকে একাই বহন করে নেওয়া থামিয়ে দেননি তাঁর ক্যারিয়ারে। আয়ারল্যান্ডকে ২০০২ সালে বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়া ছাড়াও ২০১২ ইউরোতেও নিয়ে গিয়েছিলেন রবি কিন। একজন অপ্রতিরোধ্য যোদ্ধা হয়ে তিনি কাটিয়েছেন পুরোটা সময়।

বুট জোড়া একেবারে তুলে রাখার আগে তিনি খেলে গিয়েছেন এই উপমহাদেশে। ভারতের বর্তমান বেশ জনপ্রিয় ফ্রাঞ্চাইজি ফুটবল লিগ ইন্ডিয়ান সুপার লিগে খেলেছেন রবি কিন। অ্যাতলেটিকো দে কলকাতার হয়ে তিনি মাঠ মাতিয়েছেন, আটখানা গোলও করেছেন। এখন তিনি মনোযগী ফুটবল প্রশিক্ষণে। সম্প্রতি মিডলসবার্গের সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

আয়ারল্যান্ড ফুটবলের সাথে চিরকাল বর্ণিল এক ইতিহাস হয়ে রয়ে যাবেন রবি কিন। গ্রেট ব্রিটেনের আওতাধীন দেশগুলোর মধ্যে তিনি প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে পঞ্চাশ গোল করেন আন্তর্জাতিক ফুটবলে। কিন হয়ত চাইলেই খেলতে পারতেন ইংল্যান্ডের হয়ে। বরং তিনি নিজেকে সপে দিয়েছিলেন জন্মস্থানের কাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link