সাত সিরিজে সাত অধিনায়ক!

বিরাট কোহলি অধিনায়কত্বের দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকে যেন অধিনায়কদের মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা চলছে ভারতীয় ক্রিকেটে। গত সাতমাসে সাতজন ক্রিকেটারকে ভারত জাতীয় দলে অধিনায়কের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। বিরাট কোহলির পর তিন ফরম্যাটে দায়িত্ব নিয়েছিলেন রোহিত শর্মা।

কিন্তু বিভিন্ন কারণ মিলিয়ে লোকেশ রাহুল, ঋষাভ পান্ত, হার্দিক পান্ডিয়া, জাসপ্রিত বুমরাহকে টস করতে দেখা গিয়েছে। আবার সম্প্রতি শিখর ধাওয়ানকে ওয়ানডে সিরিজের অধিনায়ক করেই দল ঘোষণা করেছে ভারত জাতীয় দলের নির্বাচকরা। অবশ্য বাজে পারফরম্যান্স কিংবা কোন বিশেষ কোনো কারণে এমন অস্থিতিশীল অবস্থা দিয়ে যাচ্ছে না ভারত জাতীয় দল।

অনিবার্য কারন বশত বাধ্য হয়েই এমনটা করতে হচ্ছে নীতি-নির্ধারকদের। এই যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সাদা বলে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন রোহিত শর্মা কিন্তু সেসময় ইনজুরিতে পড়ায় সেই দায়িত্ব পালন করতে হয় সহ-অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে।

কিছুদিন পরে ঠিক একই কারণে খেলা থেকে বিরতি নিতে হয় লোকেশ রাহুলকেও। ফলে টি-টোয়েন্টিতে একবার রিশভ পন্ত এবং একবার হার্দিক পান্ডিয়াকে ক্যাপ্টেন করেছিল ভারত। সর্বশেষ ভারত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলেছিল জাসপ্রিত বুমরাহের নেতৃত্বে। ম্যাচের আগ মুহূর্তে রোহিত শর্মা করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় টস করতে এসেছিলেন বুমরাহ।

আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রোহিতকে বিশ্রাম দিতে তাকে স্কোয়াডে রাখা হয়নি। নতুন অধিনায়ক করা হয়েছে শিখর ধাওয়ানকে। আর তার ডেপুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে রবীন্দ্র জাদেজার নাম। এর আগে গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি দিয়ে ধাওয়ানের অধিনায়কত্বের অভিষেক হয়েছিল।

অবশ্য বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) সভাপতি ও সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির পছন্দ হচ্ছে না দলের অধিনায়কত্বের এই রোটেশন পলিসি। তার মতে, এভাবে প্রত্যেক মাসে অধিনায়ক পরিবর্তন আদর্শ নয়। সবসময়ই ধারাবাহিকতায় বিশ্বাসী গাঙ্গুলি বলছেন এমনটা দলের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠাকে বাঁধাগ্রস্ত করছে।

তবে এমন ঘটনা যে নিতান্তই দুর্ভাগ্য সেটাও মানছেন বিসিসিআই বস। আসলে এই পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ কারো হাতে নেই। ইনজুরি, করোনার পাশাপাশি টাইট শিডিউলে খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দেয়াটাও জরুরি সেটা জানেন তিনি।

আবার আন্তর্জাতিক ম্যাচসংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে কি না এমন কথার প্রসঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছেন প্রিন্স অব ক্যালকাটা। নিজেদের ক্যারিয়ারের সময়ের সাথে বর্তমানের তুলনা দেখিয়ে তিনি বলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্যাচের সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন আসেনি।

যদিও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের কারনে খেলোয়াড়দের বাড়তি খেলতে হচ্ছে সেটাও স্বীকার করছেন তিনি। এছাড়া খেলোয়াড়রা বেশি ম্যাচ খেললে আরো বেশি দক্ষ এবং ফিট হয়ে উঠে বলেই বিশ্বাস করেন সৌরভ।

খেলোয়াড়দের পাশাপাশি ভারতীয় ক্রিকেটে নিজের দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। ২০১৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে নিজের কাজ বেশ উপভোগ করছেন তিনি। ভারতের ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করতে পারার সুযোগ পাওয়াটা নিজের কাছে বড় ব্যাপার বলে ভাবেন গাঙ্গুলি।

শুরুর দিকে করোনার কারনে ঠিকমতো কাজ করতে না পারলেও পরবর্তীতে বেশ ভালোভাবেই ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলো পরিচালনা করছে সৌরভের নেতৃত্বাধীন বোর্ড। আইপিএলে দল সংখ্যা বাড়ানো, ম্যাচসংখ্যা বাড়ানো এবং আয়ের অংকে ব্যাপক বৃদ্ধিসহ বেশ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা।

বর্তমান ভারতের ক্রিকেট দল এবং নিজের দায়িত্ব ছাড়াও নিজের ক্যারিয়ার, অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা নিয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। মজার ব্যাপার, পঞ্চাশতম জন্মদিন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তার কোন বিশেষ অনুভূতি নেই বলেই মন্তব্য করেছেন ভারতের অন্যতম সেরা অধিনায়ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link