ওয়ানডে ফরম্যাটে আজই অভিষেক হলো নাসুম আহমেদের। তবুও তামিম ইকবাল ভরসা রাখলেন। ঠিকই উইকেটের সহায়তাকে কাজে লাগিয়ে দারুণ একটা শুরু এনে দিলেন নাসুম। শামার ব্রুকসের বিতর্কিত সেই রিভিউটা না হলে হয়তো ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম উইকেটটাও পেয়ে যেতেন নিজের দ্বিতীয় ওভারেই। উইকেট না পেলেও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে ক্যারবীয় ব্যাটারদের চেপে ধরেছিলেন নাসুম। ফলে অন্য বোলারদের জন্য কাজটা সহজ হয়েছে। ফলে প্রথমের বলটা নাসুমের হাতে তুলে দেয়ায় তামিমের প্রশংসা করতে হয়।
তামিম ইকবাল আবার মানেননি টি-টোয়ন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অলিখিত থিওরিও। ক্রিজে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান থাকলে কোন ভাবেই বাঁহাতি বোলারকে বোলিংয়ে আনেননা রিয়াদ। সেই তত্বকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন তামিম। তিনি নিজের বোলারদের উপর আস্থা রেখেছেন, নিজের বোলারদের নিয়ে দ্বিধা করেননি। কাইল মায়ার্স ক্রিজে থাকা সত্বেও নাসুম, মুস্তাফিজকে দিয়ে বোলিং করিয়েছেন। বোলাররাও অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন।
এছাড়া বোলিং পরিবর্তন ও ফিল্ড সেটআপ দুটোতেই বেশ আক্রমণাত্মক ছিলেন তামিম ইকবাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের সহজে রান করতে দেননি। আক্রমনাত্মক ফিল্ড সেটআপকে ব্যবহার করে বোলাররা ডট বল আদায় করে নিয়েছে। ফলে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা ইনিংসের শুরু থেকেই চাপে ছিলেন। এরপর শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজকেও দারুণ ভাবে ব্যবহার করেছেন তামিম। সেজন্যই পুরো বোলিং আক্রমণ একসাথে জ্বলে উঠতে পেরেছে। শরিফুল চার উইকেট পেলেও এর পিছনে বাকি বোলারদের এবং তামিমের অবদানও কম ছিল না। সবমিলিয়ে বোলিংটাও যে পুরো একটা দল মিলে করা যায় সেটাই দেখিয়ে দিলেন তামিম।
অথচ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে বাংলাদেশ দলের অবস্থা খুব একটা সুখকর ছিল না। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ক্রিকেটারদের শরীরি ভাষাই যেন ছিল কেমন দুর্বল। অথচ আজ ম্যাচের শুরু থেকে আগ্রাসী মনোভাব পুরো দলের মধ্যে। শরিফুল, তাসকিনরাও চোখে চোখ রেখে বোলিং করেছেন। তাঁদের পুরো সহায়তা দিয়েছে ফিল্ডাররাও।
ওদিকে একাদশ নির্বাচনেও কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে তামিম ইকবালকে। কেননা দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান খেলছেন না এই সিরিজে। ওদিকে মিডল অর্ডারে সম্ভাবনাময় ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলি রাব্বিও ছিটকে গিয়েছেন ইনজুরির কারণে। ফলে ব্যাটিং লাইন আপ সাজানোটা বেশ কঠিন ছিল তামিমের জন্য। আবার সাকিব না থাকা একজন বাড়তি স্পিনারও খেলাতে হতো তাঁকে।
তবে এখানেও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তামিম ইকবাল। কেননা সহজ সমাধান ছিল ডিপিএলে দারুণ ফর্মে থাকা এনামুল হক বিজয়কে খেলানো। তবে তিনি তাঁর ওপেনিং পার্টনার লিটনের জায়গায় হাত দিতে চাননি। কেননা তিনি জানেন এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে লিটন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আবার ওপেনার হিসেবে রান করা বিজয়কেও তিনি মিডল অর্ডারে নামিয়ে দেননি। ফলে বিজয়ের জায়গা হয়নি সেরা একাদশে।
আবার বাড়তি স্পিনিং অপশন রাখার জন্য মোসাদ্দেককে খেলানোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। তবে তামিম তাঁর মূল বোলারদের উপরই ভরসা রেখেছেন। তাসকিন, শরিফুল, মুস্তাফিজ, মিরাজদের সাথে তাঁর দলে জায়গা হয়েছে পুরোদস্তুর স্পিনার নাসুম আহমেদের। আর মাঠেও এই পাঁচজনকেই দারুণ ভাবে ব্যবহার করেছেন তামিম। আর মূল বোলাররাই তাঁর হয়ে কাজটা করে দিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আটকানো গেছে মাত্র ১৪৯ রানেই।
ওয়ানডে ক্রিকেট অবশ্যই বাংলাদেশের পছন্দের ফরম্যাট। স্বাভাবিকভাবেই এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের পারফর্মেন্সও ভালো হয়। তবুও অধিনায়ক তামিম ইকবাল নিজের অধিনায়কত্বের ছাপ রাখছেন। নিজের ক্রিকেটারদের উপর ভরসা রাখছেন। মাঠে আগ্রাসী, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছেন। দল নিয়ে তাঁর পরিকল্পনাটা খুব পরিষ্কার। খুব বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষাও তিনি করতে চাননা। যার ফলও বাংলাদেশ পাচ্ছে মাঠের ক্রিকেটে।