ওয়ানডে সাফল্যের নেপথ্যে…

চারিদিকে একটা সরব গুঞ্জন। বাংলাদেশ শিখে গেছে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলা। হ্যাঁ, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই শিখে গেছে ওয়ানডে খেলা। বাঘা বাঘা দলগুলোর সাথেও এখন বাংলাদেশ খেলতে ভয় পায় না। এই তো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদেরকে সিরিজ পরাজয়ের স্বাদ দিয়ে এলো। আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা চার ওয়ানডে সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব গড়ে ফেলে টাইগাররা।

কিন্তু বাকি দুই ফরম্যাটে বাংলাদেশের অবস্থা নাজেহাল। খাবি খাওয়া তো তাও মেনে নেওয়া যায়। বাংলাদেশের তো হয় ভরাডুবি। যেখানেই খেলা হোক না কেন, সহজেই বলে দেওয়া যায় বাংলাদেশের ফলাফল। প্রতিপক্ষ সেখানে আফগানিস্তানের মত নবাগত হলেও বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি হারবে। আবার টেস্টে জিম্বাবুয়ের সাথেও হয় কঠিন লড়াই।

একেবারে মেরুর দুই ভিন্ন প্রান্তে অবস্থান বাংলাদেশ ক্রিকেটের। এর পেছনের কারণটা অবশ্য ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টগুলো। খট করেই মাথায় নিশ্চয়ই প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে, ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো নিয়ে তো হরহামেশাই আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা না ঠিক, হচ্ছে সমালোচনা। আবার সেই ঘরোয়া ক্রিকেট কি করে বাংলাদেশের এই ওয়ানডে সাফল্যের পেছনের কারিগর হয়।

বাংলাদেশের লিস্ট এ ক্রিকেট সত্যিকার অর্থেই বেশ প্রতিযোগিতাপূর্ণ। সেই স্বাধীনতার পর থেকেই যাত্রা শুরু করে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে প্রথম পরিচিত হওয়া ঘরোয়া ক্রিকেট লিগ। সেই ১৯৭৩-৭৪ সালে শুরু হয় ওয়ানডে ফরম্যাটে ঘরোয় ক্রিকেটের যাত্রা। স্বাধীন দেশে ক্রিকেটটা ছড়িয়ে দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা।

সেই থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাদা বলের পুরাতন ফরম্যাটটা খেলা শুরু। যদিও তখন খেলাটা হত লাল বলেই। তবে ওভার সংখ্যা ছিল ষাট। বর্তমান ওডিআই ফরম্যাটের প্রবর্তন সেখান থেকেই। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০১৩ সাল নাগাদ লিস্ট এ ক্রিকেটের মর্যাদা পায় ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ। দীর্ঘ এই পথযাত্রায় বহু খেলোয়াড় তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে ডিপিএল।

তাছাড়া প্রায় ক্লাব পর্যায়ে প্রতিটা ক্লাব বেশ আড়ম্বরের সাথেই অংশ নিয়ে আসছে এই ডিপিএল। খেলোয়াড়দের মাঝেও বাড়তি এক উৎফুল্লতা কাজ করে ডিপিএলকে ঘিরে। প্রায় প্রতিটা খেলোয়াড় নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিতে মুখিয়ে থাকে। তাছাড়া একটা দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট এই ফরম্যাটটার সাথে পরিচিত। এই ফরম্যাটে খুঁটিনাটি বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটা খেলোয়াড়, কোচের তালুর মধ্যে বন্দী।

ঠিক এই কারণটায় বাংলাদেশের ক্রিকেট বর্তমান সময়ে এসে এই সাফল্যের দেখাটুকু পাচ্ছে। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেটে শুরু হয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। এর আগে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে লংঙ্গার ভার্শনে ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা নেই। ঠিক টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ এই ফরম্যাট খেলা শুরু করেছে বলেই হয়ত এখনও এই ফরম্যাটটা রপ্ত করা হয়ে ওঠেনি।

ঠিক একই রকম বার্তা দেয় বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল। বিশ্ব ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যাত্রাও খুব বেশি আগের নয়। আর বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে এক বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ছাড়া আর তেমন কোন ভাল মানের টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয় না। অন্যদিকে ডিপিএলে দেশ বিদেশের বহু ভাল মানের খেলোয়াড়দের আগমন ঘটেছে। তেমনটা বিপিএলেও ঘটে।

তবে বিপিএলে স্বদেশী খেলোয়াড়দের তুলনায় ভিনদেশী খেলোয়াড়দের প্রাধান্য বেশি থাকে। দেশি খেলোয়াড়দের নিজেদের মেলে ধরার সুযোগটা কম থাকে। সেদিক থেকে ডিপিএল বেশ এগিয়ে। এই ঘরোয়া ক্রিকেটে ওয়ানডে ফরম্যাটে এত প্রতিযোগিতাপূর্ণ এক টুর্নামেন্টের ফসলটা মিলছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। তবে তাই বলে যে অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজন নেই তা কিন্তু নয়।

যতটুকু সাফল্যের দেখা মিলছে তাঁর পেছনে মানসিক পরিপক্কতার কারণেই মিলছে। কিন্তু তাই বলে বিশ্বমানের পিচের অভাব স্পষ্ট। তাছাড়া আম্পায়ারিং বিতর্ক নিয়ে আলাপ তো হচ্ছে হর হামেশাই। এসব কিছু থেকে পরিত্রাণ মিললেই হয়ত বিশ্বকাপ জয় করাটা আরেকটু সহজ হয়ে যাবে টাইগারদের জন্য। আর বাকি দুই ফরম্যাটেও এ কথা সত্য। ঘরোয়া কাঠামো শক্তিশালী হলে বাকি দুই ফরম্যাটেও সাফল্য আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link