টি-টোয়েন্টি বিপ্লবের কাণ্ডারি সোহান!

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের রীতিমত জয়জয়কার। ওয়ানডে সুপার লিগে টাইগারদের অবস্থান দ্বিতীয় স্থানে। তবে টি-টোয়েন্টি এই মহারণের যুগে বাংলাদেশ যেন বড্ড বেশি ফিঁকে। টি-টোয়েন্টির প্রথম বিশ্ব আসর থেকে আজ প্রায় পনেরো বছর হতে চলল। এখনও টাইগাররা ধুকছে ক্রিকেটের এই ক্ষুদ্র সংস্করণে। তবে টাইগার ক্রিকেট পাড়ায় জোর গুঞ্জন ছিল, আসতে চলেছে পরিবর্তন। হবে এবার বিপ্লব।

বিপ্লবটা ওই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে ঘিরেই। এই ফরম্যাটে বরাবরই তারুণ্যের জয়গান হয়েছেন। ব্যর্থতার একটা লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট তারুণ্যের উপর ভরসা করতে চলেছে। খুব বেশিদিন সময় নেই হাতে। বছরের শেষভাগে হবে আরও একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এর আগেই বাংলাদেশ দলে এলো সবচেয়ে বড় রদবদল। জিম্বাবুয়ে সিরিজে টাইগারদের টি-টোয়েন্টি দলকে নেতৃত্ব দেবেন তরুণ উইকেটরক্ষক ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান।

এ সুর তো বিপ্লবের বটেই। তবে বিসিবির অপারেসন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস এখনই এটাকে বিপ্লব কিংবা স্থায়ী সমাধান মেনে নিতে নারাজ। আবার এটাকে স্রেফ একটা পরীক্ষা বলতেও নারাজ। তবে এটা মেনে নেওয়াই যায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টি দলটা একটুখানি খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করছে। অধিনায়কত্বে পরিবর্তন আসবে সে গুঞ্জন বেশ তীব্রই ছিল।

আজ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাথে দল সংশ্লিষ্ট কর্তাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন খোদ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও। বেশ লম্বা সময় ধরে বৈঠক চলে। এরপর গণমাধ্যমের সামনে খোলাসা হয় নতুন দিনের আলোক রশ্মি। রিয়াদকে হটিয়ে অধিনায়কের ব্যাটনটা তুলে দেওয়া হল সোহানের হাতে। এই পরিবর্তনটা যেন বড্ড বেশি প্রয়োজন ছিল।

কেননা শেষ ১০ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ২২ রানের ইনিংস। এছাড়া এই ফরম্যাটে তাঁর ব্যাটিং অ্যাপ্রোচও ভীষণ প্রশ্নবিদ্ধ। বয়সে ভারে নিজের সোনালী অতীত যেন পেছনে ফেলেই এসেছেন মাহমুদউল্লাহ। হাজার প্রচেষ্টায় ২০১৬-১৭ সালের দিকের মাহমুদউল্লাহকে খুঁজে পাওয়াও যাচ্ছিল না। তাই তাঁর পরিবর্তন যেন ছিল রীতিমত অবধারিত। এই ফরম্যাটে খুব সম্ভবত বিদায় ঘন্টা বেজেই গেল বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের।

কারণ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দলেও থাকছেন না মাহমুদউল্লাহ। দলের তরুণ সদস্যরা যদি জ্বলে ওঠেন তবে তাঁর আবার দলে ফেরার রাস্তাটা বড্ড সরুই হয়ে যাবে। অন্যদিকে একটা প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে সাকিবের হাতে টি-টোয়েন্টির দায়িত্ব তুলে দেবার, লাল বলের ক্রিকেটের মতই। তবে জিম্বাবুয়ে সিরিজে তিনি থাকছেন বিশ্রামে। তাই খুব সম্ভবত সোহানের উপর পড়ল দায়িত্ব।

ঘরোয়া ক্রিকেটের সোহানের বেশ একটা নামডাক থাকলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিনি বড় আনাড়ী। এখানে খেলার সুযোগটা মিলেছে কম। বাংলাদেশ জাতীয় দলে মুশফিকুর রহিম ছিলেন উইকেটের পেছনের একজন অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে সময়ের পরিক্রমায় মুশফিকের দায়িত্ব কমে দলে অল্প স্বল্প সুযোগ মিলেছে সোহানের। তাতেই অধিনায়কের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে তুলে দেওয়াটা খানিকটা প্রশ্নবিদ্ধ।

তবে নির্বাচকসহ বাকি কর্তাদের ভিন্ন মত। টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের ভাষ্যমতে মাঠে সোহানের সরব উপস্থিতিই তাকে অধিনায়ক হিসেবে বিচার করার অন্যতম কারণ। সোহান মাঠের সর্বদা থাকেন চনমনে। তিনি প্রায় প্রতিটা মুহূর্ত দলের বাকি খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করতেই ব্যস্ত। সে ফাঁকে ব্যাট ও দস্তানা হাতে নিজের কাজটা করেন যান নিভৃতে। তাইতো তরুণ বলিষ্ঠ এক কাঁধই খুঁজে নিয়েছে বিসিবি।

এখান থেকেই হয়ত বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দিন বদলাতে শুরু করবে। কেননা জিম্বাবুয়ে সিরিজের টি-টোয়েন্টি দলে থাকছেন না মুশফিকুর রহিমও। সিরিনিয়রদের ছাড়া পূর্ণাঙ্গ তারুণ্যে ঠাসা একটা দল যাবে জিম্বাবুয়ে সফরে। প্রত্যাশার পারদটা আকাশচুম্বী থাকলেও, বিসিবি কর্তাদের কাছ থেকে দেওয়া হয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা। এমনটাই জানিয়েছেন খালেদ মাহমুদ সুজন।

তবে কি টি-টোয়েন্টিতে টাইগারদের বিপ্লবের শুরু ধরে নেওয়া যাবে এমন আমুল পরিবর্তনকে? নিশ্চ্যয়ই যায়। নতুন দিনের আলো হয়ত আসবে। ঘন কালো মেঘ ছেয়ে থাকা আকাশ নিশ্চয়ই এখন অঝোড়ে ঝড়াবে বারি। তাতে কেটে যাবে টাইগারদের টি-টোয়েন্টি খরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link