একটা সময় আন্তর্জাতিকভাবে ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতো। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টি নামের এই আসরে দেখা যেতো দুইটি ভিন্ন দেশের ভিন্ন দুইটি ক্লাবের ম্যাচ। দর্শকরা উপভোগ করতো ভারতের মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স বনাম পাকিস্তানের লাহোর কালান্দার্সের বিপক্ষে।
কিন্তু সময়ের আবর্তনে ঘরোয়া টুর্নামেন্টের দৌরাত্ম বেড়েছে, বন্ধ হয়ে গিয়েছে একাধিক দেশের ক্লাব নিয়ে আয়োজিত টুর্নামেন্ট। তবে এবার ভক্ত-সমর্থকদের জন্য খুশির সংবাদ নিয়ে এসেছে নামিবিয়া ক্রিকেট বোর্ড।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সহযোগী সদস্য হয়েও নামিবিয়া নিয়েছে ভিন্নধর্মী এক উদ্যোগ। নিজের দেশের জাতীয় দলের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া দল নিয়ে তারা আয়োজন করতে যাচ্ছে চার দলীয় গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি সিরিজ। সিরিজটি অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সেপ্টেম্বরে – প্রায় আসন্ন এশিয়া কাপের সময়েই যা খুব সম্ভবত সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজিত হবে।
ভারত থেকে ইতোমধ্যে বাংলা ক্রিকেট দল এই নামিবিয়া সিরিজে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। এছাড়া ভারতীয়দের প্রতিনিধিত্ব করা দলটি এই উপলক্ষে গত ২২ জুলাই, মানে শুক্রবার ১৬ সদস্যের একটি স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। অভিমন্যু ইশ্বরন আছেন এই স্কোয়াডের অধিনায়কত্বের দায়িত্বে। এছাড়া নিয়মিত ক্রিকেটারদের মধ্যে রয়েছেন শাহবাজ আহমেদ, ইশান পোরেল, মুকেশ কুমার, আকাশ দীপ, ঋত্বিক চ্যাটার্জি। আর অন্যদের মধ্যে বেশ কিছু নতুন মুখ রয়েছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের লাহোর কালান্দার্স নামিবিয়া ক্রিকেট বোর্ডের আমন্ত্রণে মৌখিক স্বীকৃতি জানিয়েছে। খুব বড় কোন ঘটনা না ঘটলে পাকিস্তানের দলটির অংশগ্রহণ প্রায় নিশ্চিত। তবে আফ্রিকান প্রতিনিধিদের নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি। যদিও ধারনা করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই তাদের নাম জানা যাবে।
সহযোগী সদস্যগুলোর মাঝে সাম্প্রতিক ফর্মের বিবেচনায় নামিবিয়া বেশ শক্তিশালী। গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। এছাড়া ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বেও জায়গা করে নিয়েছে তারা। সুপার টুয়েলভে জায়গা করে দলটি লড়াইয়ে নামবে শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে।
অর্থাৎ ভারত, পাকিস্থানের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা তরুণেরা বিশ্বকাপ খেলা খেলোয়াড়দের সাথে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। আগামী তারকাদের জন্য নিঃসন্দেহে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আর ঠিক এখানটায় জোর দিয়েছেন ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সেক্রেটারি দেবব্রত দাস।
তাঁর মতে, ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া একটি দলের বিপক্ষে খেলতে পারাটা বাংলার তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য অমূল্য হবে।
এছাড়া দেবব্রত দাস বলেন, ‘নামিবিয়ার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি সিরিজের সম্প্রচারকারীরা আমাদের সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া এর সঙ্গে দেখ করেছে এবং আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আর তাই তাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আমরা সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি এর আগে কয়েকটি ম্যাচ খেলার সুযোগ নিয়েছি। তাছাড়া আমরা একটি বিশ্বকাপ খেলুড়ে দলের বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছি।’
এই সংগঠক আরো বলেন, ‘বাংলা ক্রিকেট দলে বেশ কিছু তরুণ খেলোয়াড় আছে যারা স্থানীয় ক্রিকেটে খেলছে এবং টি-টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত পারফর্ম করছে। তাই বেশিরভাগ তরুণদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যাতে নির্বাচকরা সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফির জন্য সঠিকভাবে দল তৈরি করতে পারে।’
মূলত বাংলা তাদের নতুন একটি দলকে এই সফরে পাঠাচ্ছে। পাইপলাইনে থাকা তরুণদের সক্ষমতা যাচাই এটির মূল উদ্দেশ্য। অন্যদিকে স্বাগতিক নামিবিয়ার জন্য অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য একটি প্রস্তুতির সুযোগ এই গ্লোবাল সিরিজটি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, নামিবিয়া প্রাথমিক রাউন্ড থেকে সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নিয়েছিলো। পরবর্তীতে গ্রুপ বি-তে তারা পঞ্চম স্থান দখল করেছিল। এই টুর্নামেন্ট ছাড়াও নামিবিয়া অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার আগে পাপুয়া নিউ গিনিতে একটি ওয়ানডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত ও পাকিস্তানের ঘরোয়া দলগুলোর মধ্যে প্রতিনিধিত্বমূলক ক্রিকেট ম্যাচ হয়নি বললেই চলে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে লাহোর লায়ন্স কলকাতা নাইট রাইডার্সের মুখোমুখি হয়েছিল। সেই ম্যাচে মোহাম্মদ রিজওয়ান, ওয়াহাব রিয়াজ, রবিন উথাপ্পাদের মত ক্রিকেটারদের দেখা গিয়েছিল।
ভারত আর পাকিস্তানের যেকোনো লড়াই আলোচনার খোরাক জোগায়। হোক না ঘরোয়া দল, তারপরও আসন্ন এই গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি নি:সন্দেহে উত্তেজনা ছড়াবে ভারতীয় উপমহাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে।